Jammu & Kashmir

আত্মীয়কে ফোন বা রেশন নিয়ে ক্ষোভ, এই দুই মহিলার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে উপত্যকা

উপত্যকার ছবিটা কবে বদলাবে কেউ জানে না। তবে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রশাসন হোক বা সাধারণ মানুষ, সমাধানের প্রশ্নে সকলেই চেয়ে রয়েছেন তাঁদের দিকেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ১৩:২৪
Share:

এই দুই নারীর কাঁধেই গুরুদায়িত্ব উপত্যকায়। ছবি: টুইটার

একদিকে হাজার হাজার সেনাকর্মী। অন্য দিকে দিনবদলের জন্য অপেক্ষমান কয়েক লক্ষ মানুষ। অশান্ত কাশ্মীরে এই দুই দলের মুখেই দু’টি নাম ঘুরছে, সৈয়দ সেহরিস আসগর ও পি কে নিত্য। থমথমে উপত্যকায় নিযুক্ত মহিলা আইপিএস ও আইএএস অফিসার বলতে এই দুইজনই।

Advertisement

২০১৩ ব্যাচের আইএএস অফিসার ড: সৈয়দ সেহরিস আসগর। হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে উপত্যকার মানুষের কথা বলানো বা অসুস্থ রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের যোগাযোগ করানো, সবেতেই মানুষ এখন খুঁজছে তাঁকে। উপত্যকায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের সরকারি সিদ্ধান্ত সামনে আসার মাত্র চার দিন আগে জম্মু কাশ্মীরে তথ্য অধিকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। স্বপ্নেও ভাবেননি এই কাজে বহাল করা হবে তাঁকে।


আরও পড়ুন: বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ থামাতে খরচ হয়নি একটিও বুলেট, ইদের কাশ্মীরে স্বস্তিতে সরকার
আরও পড়ুন: রামদা নিয়ে ঘরের ভিতর চোর, রুখে দাঁড়াল বৃদ্ধ দম্পতি, ভাইরাল ভিডিয়ো

Advertisement

আইপিএস পিকে নিত্যের দায়িত্বও কিছু কম নয়। আপাতত তিনি কর্তব্যরত রামমুনশি বাগ এবং হরভন দাগচি গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায়। সূত্রের খবর, এই এলাকার মধ্যেই বন্দি করে রাখা রয়েছে উপত্যকার প্রায় ৪০০ নেতাকে। ২০১৬ ব্যাচের এই আইপিএস-এর কাঁধেই দায়িত্ব এই অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার।

আসগর নিজে একজন ডাক্তারও। রোগী দেখতে দেখতেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেন। সাফল্য তাঁর পিছু নেয় অল্প কয়েক দিনেই। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসক হিসেবে উপত্যকার মানুষকে পরিষেবা দিয়েছি বহুদিন। কিন্তু এখন লড়াই অন্য। একই সঙ্গে ইস্পাতকঠিন মন ধরে রাখা আবার সাধারণ মানুষকে ভরসা জোগানো মুখের কথা নয়।’’

আসগরের স্বামী পুলওয়ামর মতো স্পর্শকাতর জায়গায় প্রশাসনিক পদে বহাল রয়েছেন। কঠিন সময়ে সাহস জোগান একে অন্যেকে। ‘‘আমরা মেয়েরা যদি সমাজটাকে বদলে দিতে পারি, তার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই’’, বলছেন আসগর।

ছত্তীসগড়ের মেয়ে ২৮ বছরের তরুণী নিত্যর যাত্রাটাও গল্পের মতো। ছিলেন সিমেন্ট কোম্পানির ম্যানেজার। মন বদলে ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে পৌঁছে যান সরাসরি প্রশাসনিক পদে। যে সে পদ নয়, নিত্য বলছেন, ‘‘আমি দুর্গ অঞ্চলের মেয়ে, কখনও এমন পরিস্থিতি দেখিনি বেড়ে ওঠার সময়ে। সাধারণ মানুষ হোক বা ভিভিআইপি, প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় আপাতত সকলের নিরাপত্তার দায় আমার। চ্যালেঞ্জটা নিতে ভালও লাগছে।’’ নিজের মাতৃভাষা তেলুগু ছাড়াও গড়গড়িয়ে হিন্দি, কাশ্মীরি বলতে পারেন তিনি। সাধারণ মানুষের রেশন থেকে স্কুলের বাচ্চাদের অভিভাবকদের বিক্ষোভ, সবই সামলাচ্ছেন ঠাণ্ডা মাথায়।

সোমবার ইদ কতটা শান্তিতে কাটবে শ্রীনগরে সেই নিয়ে উদ্বেগ ছিল নানা মহলে। প্রশাসনের তরফে দিনের শেষে জানানো হয়, শান্তিতে ইদ পালিত হয়েছে। যদিও সংবাদসংস্থা সূত্রে জানানো হয়, পুরনো শহরের কয়েক জায়গায় নমাজের পরে ছোটখাটো বিক্ষোভ, সড়কে মোতায়েন আধাসেনাদের নিশানা করে পাথর ছোড়া হয়েছে। তবে বহু মানুষকে হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা আত্মীয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া অথবা বড় ঝামেলা আটকাতে চূড়ান্ত তৎপরতা, সারাদিন ‘অ্যাকশানে’ ছিলেন এই দুই অফিসার।

উপত্যকার ছবিটা কবে বদলাবে কেউ জানে না। তবে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রশাসন হোক বা সাধারণ মানুষ, সমাধানের প্রশ্নে সকলেই চেয়ে রয়েছেন ওঁদের দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন