পেটের নয়, কোলের ছেলে বড় করতে হলফনামা ওঁদের

সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে জর্জরিত বড়োভূমিতে বাচ্চা বদলের এই ঘটনা এক অনন্য মানবিক সম্প্রীতির ছবি তুলে ধরেছে।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩২
Share:

প্রতীকী ছবি।

অপত্য স্নেহের কাছে আগেই ম্লান হয়ে গিয়েছিল রক্তের সম্পর্ক। শুধু জন্ম দিয়েছেন বলেই সন্তানদের শিকড় থেকে উপড়ে আনতে নারাজ দুই মা। তবু আইন-আদালতের সমস্যা! সেই আইনের চাপেই দরং মুখ্য জেলা দায়রা বিচারকের আদালতে সালেমা পরভিন কোল থেকে জুনেইবকে নামিয়ে শেফালি বড়োর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। শেফালিদেবী নিজের কোল থেকে রাকেশকে তুলে দিলেন সালেমার হাতে। কিন্তু ছটফটিয়ে কেঁদে উঠল দু’টি শিশুই। কিছুতেই অন্য কোলে ‘মায়ের ওম’ খুঁজে পায়নি দু’বছর সাত মাস বয়সের এই দু’টি বাচ্চা। দুই মায়ের চোখই জলে ভাসছে তখন। ব্যাপার দেখে আইনজীবীরা জানালেন, দরকার নেই বাচ্চা বদলের। বিচারকও রায় দিলেন, বজায় থাকুক বর্তমান বন্ধন। সাবালক হলে ওরা নিজেরাই নিজেদের পরিবার বেছে নেবে।

Advertisement

সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে জর্জরিত বড়োভূমিতে বাচ্চা বদলের এই ঘটনা এক অনন্য মানবিক সম্প্রীতির ছবি তুলে ধরেছে। ২০১৫ সালের ১১ মার্চ দরং জেলার শ্যামপুর-বদলিচরের শিক্ষক সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী সালেমা ও মেনাপাড়া-বেজরপাড়ার বাসিন্দা, দিনমজুর অনিল বড়োর স্ত্রী শেফালিদেবীকে একই সঙ্গে প্রসূতিকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সপ্তাহ পরে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যে যাঁর বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু বাচ্চা একটু বড় হতেই তার চেহারায় বড়ো আদল দেখে সন্দেহ হয় সাহাবুদ্দিনের। অনিলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিজের খরচে হায়দরাবাদ থেকে শিশুদু’টির ডিএনএ পরীক্ষা করান তিনি। সম্প্রতি সেই পরীক্ষার ফল এলে প্রসূতিকক্ষে বাচ্চা বদলের ঘটনা প্রমাণিত হয়। সাহাবুদ্দিন আদালতে মামলা করেন। তদন্তে নামে পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত ঘোষণা করেন জেলাশাসক অশোক বর্মনও। ইতিমধ্যেই সেদিন ডিউটিতে থাকা দুই নার্সকে বদলি করা হয়েছে।

কিন্তু দুই মা কোলের শিশুদের ছাড়তে নারাজ ছিলেন। এ দিকে মামলা আদালতে গড়ানোয় জেলাশাসক জানান আদালতের রায় মানতে হবে। গত কাল চূড়ান্ত শুনানির সময় দুই মায়ের কোল থেকে বাচ্চাদের ‘প্রকৃত মা’-এর কোলে তুলে দেওয়ার শেষ চেষ্টা হয়। কিন্তু বাচ্চারা পরিত্রাহি কান্না জোড়ে। দুই মা কাতর প্রার্থনায় জানান, পেটের ছেলে নয়, কোলের ছেলেকেই সঙ্গে রাখতে চান তাঁরা। সেই মতো আদালতে হলফনামা দেয় দুই পরিবার। আদালত রায় দিয়েছে, আইনত শিশুর অধিকার চাইলে দুই পরিবার সিভিল আদালতে নতুন মামলা করতে পারে। না হলে বর্তমান ব্যবস্থাই বহাল থাকবে। দুই পরিবার সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখবে। বাচ্চারা সাবালক হওয়ার পরে জন্মদাত্রীর কাছে বা স্বধর্মের পরিবারে ফেরত যেতে চাইলে যেতে পারবে।

Advertisement

পরে সাহাবুদ্দিন জানান, অনিল বড়োর আর্থিক অবস্থা খারাপ। সে কারণেই দু’টি শিশুরই লেখাপড়ার দায়ভার নেবেন তিনি। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন অনিলবাবুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন