সেই ফেসবুক পোস্ট।
গুয়াহাটিতে ১৫ মে রাতে ঠিক কী হতে চলেছে, তার বার্তা ছিল ফেসবুকেই। এমনই মনে করছে পুলিশ।
গুয়াহাটিতে জু রোডের বিস্ফোরণে জড়িত অভিযোগে গত কাল ধৃত আলফা সদস্য জাহ্নবী শইকিয়া ও আলোচনাপন্থী আলফা নেতা প্রাণময় রাজগুরুকে আজ ১০ দিনের জন্য পুলিশের জিম্মায় পাঠাল আদালত। পুলিশের দাবি, এরা গুয়াহাটিতে আলফার স্লিপার সেল হিসেবে কাজ করছিল। পুলিশ প্রাণময়ের সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে সন্দেহ করছে, ছবি ও পোস্টের মাধ্যমে আলফার অন্য সদস্য ও স্লিপার সেলগুলির কাছেও বিস্ফোরণের পরিকল্পনা জানানো হচ্ছিল। বিশেষ করে গত ৬ মে প্রাণময় ফেসবুকে পেকে ফেটে যাওয়া একটি করলার ছবি পোস্ট করে। পুলিশের সন্দেহ, এটি আসলে গ্রেনেড বিস্ফোরণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার প্রতীক। বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বোমা বিশেষজ্ঞ প্রাক্তন আলফা জঙ্গি অমৃততবল্লভ গোস্বামীকে পুলিশ আজ গোলাঘাটের লাখিবাড়ি থেকে আটক করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নগাঁওয়েও এক জনকে ধরা হয়েছে।
পাঞ্জাবাড়ি নামঘর পথে প্রাণময়-জাহ্নবীদের ভাড়া নেওয়া ঘর থেকে গত কাল পিস্তল, গুলি, আইইডি তৈরির সামগ্রী, প্রচুর বিস্ফোরক ও আলফার লেটারহেড উদ্ধার হয়েছে। জাহ্নবী প্রাণময়কে দাদা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। প্রাণময়ও নিজের স্ত্রীকে জানিয়েছিল, জাহ্নবী তার বোন। ভাড়াবাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে থাকা মালেকা বেগম জানান, তিনি ঘরে অস্ত্র দেখে জাহ্নবীকে প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু জবাব এড়িয়ে যায় সে। ওই ঘরে বিস্ফোরণের আগে চার দিন ধরে এক যুবকও থাকছিল। পুলিশের সন্দেহ গ্রেনেডটি সে-ই ছুড়েছে।
পুলিশ জানাচ্ছে, ১৫ মে রাতে বিস্ফোরণের সময় জাহ্নবী ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল। তার কাছে থাকা প্রাণময়ের মোবাইল থেকে আলফা স্বাধীনের নেতাকে বিস্ফোরণ ‘সফল’ হওয়ার খবর দেয় জাহ্নবী। তার বাবা শিবসাগরের চিকিৎসক। তার ভাই এবং স্বামীও চিকিৎসক। জাহ্নবী এক সময় টিভিতে অভিনয় করত। গানও গাইত। তাঁর স্বামীর বক্তব্য, গত ১১ বছর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। আইন মেনে শাস্তি পাওয়া উচিত জাহ্নবীর। তিনি আরও জানান, অতীতে পরিচারিকাকে মারধর করার সময়ে তিনি জাহ্নবীকে বাধা দিয়েছিলেন। তখনই হাতে থাকা গাড়ির চাবিতে লেগে জাহ্নবীর নাক কেটে যায়। তার ভিত্তিতে গার্হস্থ্য হিংসার মামলা করে সে। তার জেরে জেল খাটতে হয় স্বামীকে।
প্রাণময় আজ আদালতের বাইরে দাবি করে, “দেশ ও জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম অব্যহত থাকবে। আমি সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত কিন্তু বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত নই।” যদিও বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের নেতা প্রাণময়ের নাম জড়ানোয় তড়িঘড়ি তার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছে আলোচনাপন্থী আলফা। তাদের নেতা অনুপ চেতিয়া জানায়, প্রাণময় মোটেই আলফা নেতা নন, জাহ্নবীও আলফা সদস্য নয়। প্রাণময় আলোচনাপন্থী নেতা মৃণাল হাজরিকার সহায়ক হিসেবে কাজ করত। জাহ্নবীর ঘরে আলফার লেটারহেড মেলা প্রসঙ্গে চেতিয়ার কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে আত্মসমর্পণ করা সদস্যদের জন্য লেটারহেডে কয়েকটি চিঠি তৈরি করা হয়েছিল। তেমনই কয়েকটি হয়তো জাহ্নবীদের হাতে পড়েছিল।’’