স্বচ্ছ ভারতের সমালোচনায় রাষ্ট্রপুঞ্জের দূত

ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের কাজ কেমন চলছে, তা দেখতে এ দেশে এসেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত লিও হেলার। বস্তুত, মোদী সরকারই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু ভারত সফর শেষে মোদী সরকারের এই অভিযান নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন হেলার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

নরেন্দ্র মোদীর গর্বের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এ বড় খুঁত ধরল রাষ্ট্রপুঞ্জ।

Advertisement

ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের কাজ কেমন চলছে, তা দেখতে এ দেশে এসেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত লিও হেলার। বস্তুত, মোদী সরকারই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু ভারত সফর শেষে মোদী সরকারের এই অভিযান নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন হেলার। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বিশেষ দূতের যুক্তি, মোদী সরকার শৌচালয় তৈরি করছে ঠিকই। কিন্তু শৌচালয় ও পানীয় জলের সুবিধা আসলে মানবাধিকারের অঙ্গ। সুস্বাস্থ্যের জন্য একই সঙ্গে দু’টিই দরকার। সেই দিকটি দেখা হচ্ছে না।

মোদী সরকার বারেবারে জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য ২০১৯-এর ২ অক্টোবরের মধ্যে দেশে খোলা জায়গায় শৌচ পুরোপুরি বন্ধ করা। গত তিন বছরে সেই লক্ষ্যে প্রায় ৫.৩ কোটি শৌচালয় তৈরি হয়েছে। হেলারের যুক্তি, ‘‘শুধু শৌচালয় তৈরি করলেই খোলা জায়গায় মলত্যাগ বন্ধ হবে না। মানুষের আচরণ পাল্টানোর পদ্ধতিও নিতে হবে। অনেক গ্রামকেই নির্মল গ্রাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামের প্রবীণরা আগের মতোই মাঠে যাচ্ছেন। কম খরচে তৈরি হওয়া শৌচাগার যাতে ব্যবহার হয়, তার জন্য যথেষ্ট জল সরবরাহ ব্যবস্থাও করতে হবে।’’ সেই সঙ্গেই পানীয় জলের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘শৌচালয় তৈরি করতে গিয়ে পানীয় জলের জোগান থেকে নজর সরে গেলে চলবে না।’’

Advertisement

স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সরকারি অনুদানে তৈরি শৌচালয়গুলির ক্ষেত্রে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে আগেও নানা কথা হয়েছে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনেই গোটা বিষয়টির সঙ্গে মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত বলে হেলারের যুক্তি। তাঁর ব্যাখ্যা, শৌচাগার তৈরি হলে সেগুলির মলমূত্র যাঁরা পরিষ্কার করেন, তাঁদের কাজ বাড়বে। সম্প্রতি বহু মানুষ এই কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। নিচু জাতির মানুষই এই পেশায় যুক্ত। ফলে তাঁদের প্রতি বৈষম্য আরও বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গেই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের লক্ষ্য পূরণের জন্য মোদী সরকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কড়া নিন্দা করেছেন হেলার। উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, বাড়িতে শৌচালয় না থাকলে রেশন কার্ড বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হচ্ছে। গাঁধীজির চশমাকে ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর প্রতীক বা লোগো হিসেবে বেছেছেন মোদী। হেলারের কটাক্ষ, ‘‘সব জায়গাতেই গিয়ে গাঁধীজির চশমা দেখেছি। এ বার সময় এসেছে, চশমার কাঁচ বদলে মানবাধিকারের কাঁচ লাগানো হোক।’’

স্বাভাবিক ভাবেই হেলারের মন্তব্যে তেলেবেগুনে জ্বলেছে মোদী সরকার। সরকারের তরফে বিবৃতি জারি করে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূতের রিপোর্টকে ‘অসংলগ্ন’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, ওই রিপোর্টে অজস্র ত্রুটি রয়েছে। রিপোর্ট পক্ষপাতদুষ্ট। সব কিছুকেই এক রকম ভাবে দেখেছেন তিনি। বিশেষ করে গাঁধীজির চশমা নিয়ে মন্তব্যে আগুনে ঘি পড়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘হেলার জাতির জনকের প্রতি যে অবজ্ঞা দেখিয়েছেন, সরকার তার নিন্দা করছে।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তাদের পাল্টা যুক্তি, হেলার নিকাশি ও পানীয় জলের অধিকারের বিশেষজ্ঞ। দু’সপ্তাহের জন্য দিল্লি এসে কেন্দ্র, রাজ্য ও নাগরিক সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই, লখনউ ও ইম্ফলে গিয়েছিলেন তিনি। কলকাতায় হেলার গিয়েছিলেন ট্যাংরা এবং ধাপা এলাকায়। নিজের রিপোর্টে হেলার লিখেছেন, ‘কলকাতায় কিছু ব্যবসায়ী রাস্তার কল থেকে নিখরচায় জল ভরে গাড়িতে করে বস্তিতে নিয়ে গিয়ে ২০ লিটার ২০ টাকা দরে বিক্রি করে!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন