নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করার ক্ষেত্রে শিল্প ও শিক্ষা ক্ষেত্রে দু’ধাপ এগোল বিজেপি-অগপ-বিপিএফ জোট সরকার। শিল্প বিকাশে চালু করা হল অনলাইন ‘এক জানালা নীতি’ (সিঙ্গল উইনডো পলিসি)। নেওয়া হল জমি ব্যাঙ্ক ও স্পেশ্যাল ইকনমিক জোন (এসইজেড) গড়ার সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কলেজে প্রবেশিকা ফি তুলে দেওয়া হচ্ছে।
আজ দিসপুর সচিবালয়ে পর পর সাংবাদিক সম্মেলন করেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি এবং অর্থ তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। চন্দ্রমোহন জানান, রাজ্যে ২৪ লক্ষ বেকারকে চাকরি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল বিজেপির ভিশন ডকুমেন্টে। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারি চাকরির ভরসায় থাকলে সর্বাধিক ১৫ হাজারের চাকরি সম্ভব। তাই বাড়াতে হবে শিল্পের সম্ভাবনা। রাজ্যে শিল্পদ্যোগ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার ‘সিঙ্গল উইনডো’ নীতি নিচ্ছে। আর শিল্প দফতরে গিয়ে লাইন দেওয়া বা দালালদের চক্করে পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ পুরো বিষয়টিই এবার থেকে অনলাইনে পরিচালিত হবে।
শিল্প-বাণিজ্য সুগম করতেই বিধানসভায় পাশ করা হয়েছে ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেস বিল-২০১৬’। কারও কোনও শিল্প গড়া বা ব্যবসার প্রস্তাব থাকলে ওয়েবসাইটে লগ ইন করে একটি ফর্ম ফিল আপ করেই আবেদন জানাতে পারবেন। যে সব নথি প্রয়োজন তা আপলোড করা যাবে অনলাইনেই। প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ফি বা অন্যান্য টাকাও অনলাইনেই দেওয়া যাবে। ফলে পুরো প্রক্রিয়া হবে স্বচ্ছ ও দ্রুততর।
মন্ত্রী আরও জানান, বিভিন্ন শিল্প, বিশেষ করে স্থানীয় ভাবে তৈরি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য গড়া হবে এসইজেড। চট করে শিল্পের জন্য জমি দেওয়া রাজ্যের পক্ষে সমস্যার। তাই এখন থেকেই জমি ব্যাঙ্ক গড়ে তুলবে রাজ্য। গ্যাস ক্র্যাকার প্রকল্পকে কেন্দ্র করে তিনসুকিয়ায় কাঁচামাল তৈরি ও অনুসারি শিল্পের ১০০টি কেন্দ্র গড়ে তুলতে উদ্যোগী হবে রাজ্য। কৃষিজ দ্রব্য সঞ্চয়ের জন্য গুয়াহাটি, শিলচর ও যোরহাটে আধুনিক গুদামঘর ও হিমঘর গড়বে রাজ্য সরকার। কৃষি উদ্যোগে উৎসাহ দিতে সব জেলায় উদ্যোগ পথ-প্রদর্শন কেন্দ্র গড়া হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ দিতেও বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেবে সরকার। পরিবহণ দফতরেরও ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী পাটোয়ারি জানান, আগামী তিন দিনের মধ্যে বাণিজ্যিক বাহনের জন্য নতুন লাইলেন্স দেওয়া শুরু হবে।
এ দিকে, হিমন্তবিশ্ব শর্মা এ দিন ঘোষণা করেন, যে সব ছাত্রছাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় এক লক্ষ টাকার কম তাদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে কলেজে প্রবেশিকা ফি ও টিউশন ফি দিতে হবে না। তিনি জানান, বিপিএল কার্ড থাকা পরিবারের অভিভাবকরা বিপিএল কার্ড দেখালেই ফি মকুব করা হবে। অন্যথায় চাকরি ক্ষেত্রের বেতন স্লিপ দেখাতে হবে। কিছুই না থাকলে আবেদন করতে হবে কলেজের গভর্নিং বডির কাছে।
মন্ত্রীর হিসেব, রাজ্যের ৩১০টি সরকারি কলেজে এই নিয়ম কার্যকর হলে ৫০-৬০ হাজার ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে। বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে না। অবশ্য হিমন্তর আশা, বেতন দিতে না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা সরকারি কলেজেই আসবে। তাই বেসরকারি কলেজও বেতন কমাতে বাধ্য হবে। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে কলেজগুলির যে ক্ষতি হবে তা পূরণ করে দেওয়া হবে। যার ফলে বছরে সরকারের ৭০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। রাজ্যের উপরে ১০ হাজার কোটি টাকার বোঝা রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন হিমন্ত। এ দিন তিনি জানান, ‘‘আগামী তিন বছর কেন্দ্রের কাছ থেকে সাহায্য নেবে রাজ্য। তার মধ্যেই রাজ্যকে স্বনির্ভর করে তোলার চেষ্টা হবে।’’
পাশাপাশি, রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশ করা শ্বেতপত্র জমা দেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর হাতেও তা তুলে দেন তিনি। সেখানেও ১০ হাজার কোটির বোঝার কথা রয়েছে।
সোনোয়াল প্রধানমন্ত্রীকে জানান, রাজ্য নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধির উপরে জোর দিচ্ছে। তার জন্য শিল্পনীতি, আইন, তথ্য-প্রযুক্তি, প্রশাসন—সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তবে এই পরিবর্তনের সময়ে আপাতত পাঁচ বছর কেন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন হবে। বকেয়া মেটানোর জন্য, সড়ক ও জলপথ পরিবহণ, তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গড়ার জন্য কেন্দ্রের সাহায্য প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, রাজ্যে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা দরকার। মুখ্যমন্ত্রী তেলের রাজস্ব বাবদ রাজ্যের বকেয়া ১০ হাজার কোটি টাকা মেটানোর জন্যও কেন্দ্রকে চাপ দেন। বন্যা মোকাবিলায় জলসম্পদ মন্ত্রকের মঞ্জুর করা ১২২৬ কোটি টাকা সর্বানন্দ দ্রুত রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানান। চতুর্দশ পরিকল্পনা কমিশন রাজ্যকে কম টাকা দিয়েছে বলে উল্লেখ করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি শুরু করার জন্য কেন্দ্রের কাছে ৫০০০ কোটি টাকার এককালীন সাহায্য চান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পরে লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ও উপ-রাষ্ট্রপতি মহম্মদ হামিদ আনসারির সঙ্গেও দেখা করেন।