সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। ফাইল চিত্র।
এক দিকে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের কলেজিয়াম। বিপরীতে গোটা দেশের আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন। এবং অনেক বর্তমান ও প্রাক্তন বিচারপতি। দুই বিচারপতির পদোন্নতি ঘিরে এমনই বেনজির এক ছবি তৈরি হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগে বিচারপতি গগৈ গত বছর কার্যত বিদ্রোহ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অন্য তিন প্রবীণ বিচারপতিদের সঙ্গে। কোন মামলা কোন বিচারপতির এজলাসে যাবে, তা নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে। দাবি করেছিলেন, প্রধান বিচারপতি ‘মাস্টার অব রোস্টার’ হতে পারেন না। এখন প্রশান্ত ভূষণের মতো প্রবীন আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি কি কলেজিয়ামের ‘মাস্টার’ হয়ে উঠেছেন! পছন্দ মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, আর কলেজিয়ামের বাকি বিচারপতিরা তাতে সম্মতি জোগাচ্ছেন!
এমন প্রশ্ন উঠেছে, অনেক বিচারপতির সিনিয়রিটি উপেক্ষা করে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ও কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দিনেশ মাহেশ্বরীকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করায়। গোটা দেশে ‘সিনিয়রিটি’-র তালিকায় বিচারপতি খন্না রয়েছেন ৩৩ নম্বরে। এই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি গগৈ এবং কলেজিয়ামকে পাঠানো নোটে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কৌশল কউল হাইকোর্টের দু’জন প্রধান বিচারপতির নাম করেই লিখেছেন, এঁদের সিনিয়রিটি উপেক্ষা করা হলে ভুল বার্তা যাবে। ওই দু’জন হলেন রাজস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ ও দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মেনন। এমন পদোন্নতিতে চিন্তিত প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার খেদ, ২০১৮-র ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি যে বেনজির সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন, দেখা যাচ্ছে তার উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। অথচ বর্তমান প্রধান বিচারপতি গগৈও ছিলেন ওই প্রতিবাদীদের দলে। প্রাক্তন বিচার লোঢার কথায়, ‘‘সামগ্রিক পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে বিষয়টি (বিচারপতি খন্নার পদোন্নতি) প্রত্যাহার করে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করাই ভাল।’’ তবে সেটা হয়ে উঠবে কি না তা নিয়ে নিজেই সন্দিহান প্রাক্তন বিচারপতি লোঢা।
বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মান্নান কুমার মিশ্র দীর্ঘ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘অনেক প্রবীণ বিচারপতিকে এ ভাবে দাবিয়ে দেওয়াটা বরদাস্ত করা যায় না। তা ছাড়া, রাজস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নন্দরাজোগ ও দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মেননের পদোন্নতির সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল আগে। খেয়ালখুশি মতো এবং যুক্তিহীন ভাবে তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।