অমিতাভ ঠাকুর
গতকাল ছিল ‘রিটার্ন গিফট’। আজ এল সাসপেনশন। মুলায়ম সিংহের সঙ্গে পাঞ্জা কষতে নামা আইপিএস অমিতাভ ঠাকুরকে সাসপেন্ড করল অখিলেশ যাদব সরকার। গোটা বিষয়টির সিবিআই তদন্ত চেয়ে আজ দিল্লিতে দরবার করেছেন অমিতাভ। কিন্তু প্রকাশ্যে ওই আমলার পাশে না দাঁড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে মুলায়মকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশের খনিমন্ত্রী গায়ত্রী প্রসাদ প্রজাপতির বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন আইপিএস অফিসার অমিতাভ ঠাকুরের স্ত্রী নূতন। অমিতাভ একটি টেলি-কথনের ক্লিপ ফাঁস করে অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন মুলায়ম। সমাজবাদী পার্টির প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেন তিনি। তার পরেই অমিতাভের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণের মামলায় এফআইআর হয়। ওই আইপিএসের অভিযোগ, মুলায়ম তাঁকে ‘রিটার্ন গিফট’ দিচ্ছেন। আজ রাতে অখিলেশ যাদব সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই আইপিএস অফিসার একতরফা ভাবে শৃঙ্খলা না মেনে কাজকর্ম করছেন। সরকার-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন। এমনকী হাইকোর্টের নির্দেশও মানছেন না। তাই তাঁকে সাসপেন্ড করা হল।
অবস্থা বুঝে গত কয়েক দিন নীরবতার পর বিষয়টি নিয়ে আজ মুখ খোলেন মুলায়মের ছেলে ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। সরাসরি মুলায়মের ফোনের কথা কবুল করেই ঘটনাটি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেন। অখিলেশ বলেন, ‘‘নেতাজি তো আমাদেরও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। যদি ফোন করে তিনি এই অফিসারকে পরামর্শই দেন, তাতে ক্ষতি কী? আপনাদেরও ওই অফিসার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া উচিত।’’ তখনই সমাজবাদী পার্টির তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, এই অফিসার তাঁর ‘সার্ভিস রুলের’ বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করছেন। যে ভাবে মুলায়মের ফোনে কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে, তাও বেআইনি। অখিলেশ সরকার যে অমিতাভের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে তা আঁচ করেছিল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সাহায্য চেয়েছেন অমিতাভ। মুলায়মের ফোন-হুমকি ও নিজের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা, সব কিছু নিয়েই সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন তিনি। আজ সেই দাবি নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আসেন তিনি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি। মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অনন্ত কুমার সিংহের সঙ্গে দেখা করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর আশঙ্কা, পরিবারের উপরে হামলা হতে পারে। অমিতাভ বলেন, ‘‘মুলায়ম সিংহ হুমকি দিয়ে বলেছেন, ফল ভুগতে হবে। আমার এবং আমার স্ত্রীর উপর হামলা হতে পারে। তাই নিরাপত্তা চেয়েছি।’’
বিষয়টিকে যে বিজেপি মুলায়মের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চায় দলীয় সূত্রে গত কালই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। সংসদের অধিবেশনের আগে এ ভাবে মুলায়মকে চাপ দিয়ে তাঁর দলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে আগ্রহী তারা। কিন্তু সেই সঙ্গে সতর্কও থাকতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। এক সময়ে হরিয়ানায় সনিয়া গাঁধীর জামাই রবার্ট বঢরার জমি দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়া আইএএস অশোক খেমকাকে দিল্লিতে আনার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিজেপি নেতারা বুঝতে পারেন, এই ধরনের অফিসারেরা যে কোনও দলের বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন। তাই হরিয়ানায় বিজেপি সরকার আসার পর খেমকাকে বদলি করা হয়। এখন অমিতাভ ঠাকুরের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে বিজেপি। তাঁকে কতটা সমর্থন করা উচিত তা নিয়ে সংশয়ে আছে দল।
আপাতত এই অফিসারকে প্রকাশ্যে সমর্থনের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বিজেপি এর রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই অমিত শাহ আজ চার সদস্যের একটি টিম উত্তরপ্রদেশে পাঠালেন। অমিতাভ ঠাকুরের ঘটনার আগে উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ এক সাংবাদিককে পুড়িয়ে মারে বলে অভিযোগ। অমিত শাহের কথায়, ‘‘উত্তরপ্রদেশে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার তো হচ্ছিলই। এখন পুলিশ অফিসার ও সাংবাদিকদের উপরেও নির্যাতন হচ্ছে।’’