Uttar Pradesh

যোগী-রাজ্যে ধর্মবিদ্বেষী শিক্ষিকার নির্দেশে মার সহপাঠীকে

বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলের ওই ভিডিয়ো ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের প্রশ্ন, এত ঘৃণার চাষ কেন?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৪১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

চেয়ার-টেবিলের বালাই নেই। ক্লাসের মেঝেয় বসে জনা কয়েক খুদে। শিক্ষিকার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরই এক জন। ক্যামেরার সামনেই একটি খুদেকে ডেকে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বালককে মারার নির্দেশ দিলেন শিক্ষিকা! হাসিমুখে সহপাঠীর গালে একটি চড় মারল খুদে। তবে তাতে মন ভরল না, তাই আরও দুই বালককে ডেকে শিশুটিকে মারার নিদান দিলেন শিক্ষিকা! পাশাপাশি আগের বালকটিকে মৃদু বকুনি দিলেন, ‘‘আরে! জোরে মারো না!’’ মেঝেয় বসে থাকা তার সহপাঠীদের অনেকেরই মুখে হাসির সামনে সহপাঠীদের মারে ততক্ষণে প্রায় কেঁদে ফেলেছে আট বছরের শিশুটি!

Advertisement

অপরাধ? শিশুটি সংখ্যালঘু। ক্যামেরার সামনেই শিক্ষিকা সগর্বে তা জানিয়েও দিলেন। ভিডিয়োয় ওই শিক্ষিকাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যত সংখ্যালঘু বাচ্চা আছে, তাদের সবাইকে আমি... ।’’ শুক্রবার রাতের দিকে এক্স-হ্যান্ডলে ছড়িয়ে পড়া এমনই একটি ভিডিয়ো ঘিরে উত্তাল হল টুইটার। কবেকার ঘটনা, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। স্থানীয় সাংবাদিকেরা এবং নেটিজেনদের একাংশের দাবি, উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের খুববাপুরের একটি বাড়ি থেকে চালানো হয় স্কুলটি। নাম নেহা পাবলিক স্কুল। ক্যামেরায় যাকে দেখা গিয়েছে, সেই ‘শিক্ষিকা’র নাম, তৃপ্তা ত্যাগী। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল হয় নেটদুনিয়া।

বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলের ওই ভিডিয়ো ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের প্রশ্ন, এত ঘৃণার চাষ কেন? রাহুল লেখেন, ‘‘ছোট শিশুদের মনে ঘৃণার বিষ ঢোকানো, স্কুলের মতো পবিত্র জায়গাকে ঘৃণার বাজারে পরিণত করা, এক শিক্ষক দেশের জন্য এর চেয়ে খারাপ কিছু করতে পারেন না। এটা বিজেপির ছড়িয়ে দেওয়া সেই কেরোসিন, যা দেশের প্রতিটি কোণায় আগুন জ্বালাচ্ছে।’’ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী লেখেন, ‘‘আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য কী রকম ক্লাসঘর, কী রকম সমাজ দিতে চাই?’’ সিপিএম তাদের এক্স-হ্যান্ডলে লিখেছে, ‘‘এই কি সবকা সাথ, সবকা বিকাশ? উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রদায়িক অরাজকতার উদাহরণ এ’টি। আমাদের শিশুদের মনে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া এই ঘৃণার রাজনীতি লজ্জার।’’

Advertisement

কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘ওই খুদের গালে প্রতিটি চড়, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধানের গালে একটি থাপ্পড়!’’

ভিডিয়োটি ঘিরে নেটদুনিয়া উত্তাল হওয়ার পরেই টুইটার থেকে তা সরানোর জন্য সরকারের একটি অংশ সক্রিয় হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাতের দিকে ভিডিয়োর কথা স্বীকার করে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষা দফতরের কর্তা শুভম শুক্ল জানিয়েছেন, ওখানে দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, চাপের মুখে রাতের দিকে ওই শিক্ষিকা তৃপ্তা ত্যাগী ক্ষমা চেয়েছেন। পুলিশের একটি সূত্রের বক্তব্য, নির্যাতিত বালকটির পরিবার অভিযোগ জানাতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কেন জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন বা মুজফ্ফরনগর পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা নেয়নি, সে প্রশ্নও উঠেছে।

আট বছরের খুদের বাবা ইরশাদ এক জন ছোট চাষি। রাতের দিকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ছেলেকে ওই স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশে জানাননি কেন? বাবার জবাব, ‘‘বিচার পাব, সে আশা করি না। তা ছাড়া এটা নিয়ে ধর্মে ধর্মে গোলমাল বাধা ছাড়া কিছুই তো হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন