বিশ্বযুদ্ধে হত সেনাদের খোঁজে অরুণাচলে মার্কিন অভিযান

ছ’বছর পর ফের অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়-জঙ্গলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ হওয়া বিমানগুলির খোঁজে অভিযান শুরু হতে চলেছে। আমেরিকার ‘মিসিং ইন অ্যাকশন সার্ভিসমেন’ বা এমআইএএস ভারত ও চিনের মধ্যবর্তী রহস্যজনক ‘হাম্প’-এ নিখোঁজ বৈমানিকদের দেহাবশেষের সন্ধানে তল্লাশি চালানোর অনুমতি পেতে গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির কাছে দরবার করছিল।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৮:২৪
Share:

উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি এলাকা। ফাইল-চিত্র।

ছ’বছর পর ফের অরুণাচল প্রদেশের পাহাড়-জঙ্গলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ হওয়া বিমানগুলির খোঁজে অভিযান শুরু হতে চলেছে। আমেরিকার ‘মিসিং ইন অ্যাকশন সার্ভিসমেন’ বা এমআইএএস ভারত ও চিনের মধ্যবর্তী রহস্যজনক ‘হাম্প’-এ নিখোঁজ বৈমানিকদের দেহাবশেষের সন্ধানে তল্লাশি চালানোর অনুমতি পেতে গত কয়েক বছর ধরে দিল্লির কাছে দরবার করছিল। অবশেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ‘সবুজ সংকেত’ মিলেছে। অভিযানকারীদের প্রথম দলটি রবিবার অরুণাচলে পৌঁছেছে।

Advertisement

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর কাছে ত্রাসের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘দ্য হাম্প’। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত জাপানি সেনাবাহিনী বর্মার রাস্তা আটকে দেওয়ায় চিনে যাওয়ার জন্য পূর্ব হিমালয়ের দুর্গম পাহাড় ডিঙিয়ে বিমান চালানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। অসমের গরম আবহাওয়া থেকে ওড়া ভারী বিমানগুলি অরুণাচলে ঢুকেই ঘন কুয়াশার মধ্যে পড়ত। সামনে থাকা পাহাড়ের দেওয়ালের পাশ কাটাতে না পেরে বহু বিমানই সেই কুঁজে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ত। ৪ ঘণ্টার পথ পার হতে ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়তে হত বিমানগুলিকে। চিনের কুনমিং থেকে ডিব্রুগড়ের চাবুয়া পর্যন্ত আকাশপথের রাস্তাটিতে একের পর এক যুদ্ধবিমান নিখোঁজ হয়ে যায়। কিছু বিমানের ধ্বংসাবশেষ মিললেও বাকি বিমান ও বিমানে থাকা চালক-সৈনিকদের সন্ধান এখনও মেলেনি। এদের মধ্যে অধিকাংশই মার্কিন সেনা। তাই মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরই তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু করে।

২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে অরুণাচলের পাহাড়-জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে এমন বেশ কয়েকটি বিমানের ভগ্নাবশেষ মেলে। নর্থ ক্যারোলিনার আইবিএমে কর্মরত গ্যারি জায়েটজ-এর জ্যাঠা, মার্কিন বিমান বাহিনীর ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট আরউইন জায়েটজ এমনই একটি নিখোঁজ বিমান ‘হট অ্যাজ হেল’-এর চালক ছিলেন। বিমানটি ১৯৪৪ সালের ২৫ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়। ২০০৬ সালে আমেরিকার ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ দলের অনুসন্ধানকারী ক্লেটন কুলেস বিমানটির সন্ধান পান। তাঁকে সাহায্য করেন স্থানীয় অভিযানকারী ওকেন টায়েং। গ্যারি ২০০৮ সালে আপার সিয়াং জেলার জঙ্গলে এসে জ্যাঠার দেহাবশেষ উদ্ধার করেন। মৃত্যুর ছয় দশক পরে তাঁর সত্কার করা হয়।

Advertisement

১৯৪৬ সালের ১৭ মে নিখোঁজ হওয়া সি-৪৭বি বিমানটিরও সন্ধান পান কুলেস। কিন্তু তারপর থেকে লাল ফিতের ফাঁস ও বিভিন্ন কূটনৈতিক কারণে সন্ধান-অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। এমআইএএস-এর হিসেবে অরুণাচলের পাহাড়ে এখনও অন্তত ৪০০ বিমান চালক ও সেনাকর্মীর দেহ পড়ে রয়েছে। কুলেসের মতে, তিনি তিন বছরের অভিযানে মোট ২৬টি বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখেছেন। তার মধ্যে ৪টি বিমান সম্পর্কে কোনও তথ্য মেলেনি। বাকি ২২টি বিমানে থাকা ১৯৩ জনের দেহাবশেষ জঙ্গলে মিলতে পারে বলে তাঁর বিশ্বাস।

ভারত ও আমেরিকা সরকার অভিযান-সম্পর্কিত চুক্তি করার পরে যে তদন্তকারী দল অরুণাচলে পৌঁছয়, তাঁদের সঙ্গে আধুনিক সরঞ্জাম-সহ অভিযাত্রী ও বৈজ্ঞানিকরা আছেন। স্থানীয় গাইডদের নিয়ে আপাতত তাঁরা বিভিন্ন জেলার পাহাড়ে ছড়িয়ে থাকা বিমানের ধ্বংসাবশেষের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করবেন। তারপর শুরু হবে পাহাড়-জঙ্গলে লাগাতার অভিযান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন