কাফিল খান। —ফাইল চিত্র।
গোরক্ষপুরের বিআরডি হাসপাতালের চিকিত্সক কাফিল খানকে শনিবার গ্রেফতার করল উত্তরপ্রদেশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। ওই হাসপাতালে গত এক মাসে শতাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় দেশজু়ড়ে তোলপাড় চলছিল। জনমত অন্য কথা বললেও, প্রশাসনের তরফে সেই ঘটনায় কাফিল খানের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে প্রথম থেকেই। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে এসটিএফ সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: বহু শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েও ‘নায়ক’ কাফিল সাসপেন্ড!
কাফিল খান বিআরডি মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের নোডাল অফিসার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, নিজের ক্লিনিক চালানোর জন্য বিআরডি হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচার করতেন। এই অভিযোগ ওঠার পরই কাফিল খানকে হাসপাতালের সমস্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আরও অভিযোগ ওঠে, হাসপাতালেরই প্রাক্তন অধ্যক্ষ রাজীব মিশ্র ও তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা শুক্লর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচারের ব্যবসা ফেঁদেছিলেন কাফিল।
প্রশাসন এই অভিযোগ করলেও জনমত প্রথম থেকেই ছিল কাফিলের দিকে। রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে অনেকে দাবি করেন, অক্সিজেনের অভাবে মরতে বসা শিশুদের বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন কাফিল। এক মৃত শিশুকে কোলে নিয়ে তাঁর কান্নার ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে বেআইনি অক্সিজেন চক্র ভাঙতে খুব শীঘ্রই তিনি মুখ খুলবেন বলে জানান ওই চিকিত্সক। দিন কয়েক আগে সামনে আসে তাঁর একটি ফেসবুক ভিডিও। সেখানে শিশুমৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। এর পরেই আজকের এই গ্রেফতারি।
আরও পড়ুন: তিনটি নয়, ২৫০ সিলিন্ডার এনেছিলাম স্যর: কাফিল খানের ভিডিও ভাইরাল
আরও পড়ুন: মুখ খুললেই বিপদ! সিঁটিয়ে ‘নায়ক’ কাফিল
বিআরডি হাসপাতালে একের পর এক শিশুমৃত্যু গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। উঠে আসে হাসাপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাবের মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য। যে কারণেই এতগুলো শিশুর মৃত্যু হয়। প্রথম দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। হাসপাতালেরই এক সূত্র থেকে স্বীকার করা হয়, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকার কথা। ওই সূত্রটি আরও জানায়, যে সংস্থা অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করত তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বকেয়া টাকা না মেটালে আর সিলিন্ডার দেবে না। তবে এই তথ্যের পাল্টা দাবি করে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল হাসপাতালের কাছে নির্ধারিত সময়েই টাকা পৌঁছে গিয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই টাকা সময় মতো ওই সংস্থাকে দেননি। এই ভাবে দোষারোপ পাল্টা দোষারোপের পালা চলতে থাকে। ঘটনাটি নিয়ে যোগী সরকারের উপর চাপ বাড়তে থাকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ছুটে যান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে রি নাড্ডা। বার দু’য়েক হাসপাতালে যান খোদ মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যোগী সে দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে বা যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না। তদন্তে নেমে কাফিল খানের বিষয়টি উঠে আসে।