Uttarakhand

সুড়ঙ্গে উদ্ধারে গতি

প্রশাসনের তরফে নিখোঁজের সংশোধিত যে তালিকা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২, কিন্তু কারও নাম ঠিকানা দেওয়া যায়নি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:০৮
Share:

এই টানেলেই চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই

রবিবার সকালে নন্দাদেবী হিমবাহের একাংশ ভেঙে হড়পা বান নেমে আসার পরে কেটে গিয়েছে একটা দিন। প্রশাসনের তরফে নিখোঁজের সংশোধিত যে তালিকা প্রকাশ পেয়েছে, তাতে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২, কিন্তু কারও নাম ঠিকানা দেওয়া যায়নি। গঢ়বালের সঙ্গে সঙ্গে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারেও। কারণ চামোলী জেলার তপোবনে ঋষিগঙ্গার বুকে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া এনটিপিসি-র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কর্মরত যে প্রায় দেড়শো কর্মী বানে ভেসে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জনা ৫০ এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলা থেকে। স্থানীয় বাসিন্দা ১০-১১ জন। বাকিরা বিহারের নানা জায়গার। ১১ জনের দেহ এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে।

Advertisement

এনটিপিসি-র স্থানীয় অফিসারেরা বলছেন, ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজে লাগা এই শ্রমিকদের ‘নাম-পতা’ থাকত সুপারভাইজ়ারদের কাছে। শ্রমিকদের সঙ্গে সেই সুপারভাইজ়ারদেরও রেয়াত করেনি উন্মাদ জলরাশি। তাই নিখোঁজদের নাম-ঠিকানা তো দূরের কথা, কত জন কোন রাজ্য থেকে এসেছিলেন— সেই তথ্যও ঠিকঠাক জোগাড় করে উঠতে পারছে না উত্তরাখণ্ড প্রশাসন।

ঋষিগঙ্গার ক্ষীণ স্রোতকে পাকে পাকে ঘুরিয়ে খরবেগ করে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি বেশ বড়সড় সুড়ঙ্গ নির্মাণ করছিল এনটিপিসি। একমুখী বিশাল সেই সুড়ঙ্গের দু’টি শাখার একটিতে ৩৪ জন ও অন্যটিতে ৫ জন ঢুকে কাজ করার সময়ে রবিবার সকালে আছড়ে পড়ে হিমবাহ ভাঙা জলোচ্ছ্বাস। টন টন কাদামাটিতে বন্ধ হয়ে যায় সুড়ঙ্গের মুখ। রবিবার সন্ধ্যায় পাশের একটি ছোট সুড়ঙ্গ থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করার পরে বড় সুড়ঙ্গটিতে উদ্ধার কাজ শুরু করে আইটিবিপি ও রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা দল। রাতে যোগ দেয় এনডিআরএফ-ও। সারা রাত কাজ করে বিশাল সুড়ঙ্গ মুখের মাত্র ১০০ মিটার কাদামাটি সরানো যায়। এর মধ্যে ঠিক কোন জায়গাটিতে শ্রমিকেরা আটকে রয়েছেন, তাঁরা এক সঙ্গে রয়েছেন না আলাদা আলাদা— কিছুই বুঝতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা। সকালে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে আরও সাজসরঞ্জাম এনে, নদীর বুকে আর্থমুভার নামিয়ে কাদা সরানোয় গতি আনা হয়। কিন্তু আইটিবিপি-র মুখপাত্র বিবেকুকমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, “শ্রমিকদের সাড়াশব্দ এখনও পাওয়া যায়নি, তবে তাঁদের সকলকে জীবিত উদ্ধার করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।” এনডিআরএফ-এর প্রধান এস এন প্রধান টুইটে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে তাঁর বাহিনী উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। জোশীমঠের হেলিপ্যাডে আরও জওয়ান এবং আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধারকারী দলের নেতারা সুড়ঙ্গটির মানচিত্র খতিয়ে দেখছেন, এমন একটি ছবিও টুইটে পোস্ট করা হয়েছে।

Advertisement

উদ্ধার হওয়া মাত্র যাতে শ্রমিকদের চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে, সে জন্য সুড়ঙ্গের মুখে যেমন বড় আলো ও অক্সিজেন প্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তৈরি রাখা হয়েছে সেনাদের একটি মেডিক্যাল টিমকে। তিনটি কপ্টারও জোশীমঠে রাখা হয়েছে, যাতে শ্রমিকদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে আশা হারাচ্ছেন স্থানীয় মানুষেরা। তপোবনে ধৌলিগঙ্গা ও ঋষিগঙ্গার সঙ্গমে এনটিপিসি-র এই বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ‘সম্পূর্ণ মুছে গিয়েছে’ বলে জানিয়েছেন বিমানবাহিনীর জওয়ানেরা। খুব নিচু দিয়ে হেলিকপ্টার উড়িয়ে তাঁরা যা দেখেছেন, এবং যে ছবি তুলেছেন, তাতে ধ্বংসের এই ছবি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। জলের তোড়ে ধ্বংস হয়েছে ৫টি সড়ক-সেতু, যা প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এলাকায় রসদ সরবরাহের জন্য সেনাদের পরামর্শ নিচ্ছে উত্তরাখণ্ড সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন