সুবনসিরি প্রকল্প নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রী ভি কে সিংহ

উত্তর-পূর্ব উন্নয়নের স্বাধীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার উত্তর-পূর্ব সফরে এসেই ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ। অসমে আসার আগে এখানকার সব থেকে বিতর্কিত সমস্যা নিয়ে পর্যাপ্ত ‘হোমওয়াকর্’ না করায় বৃহৎ নদীবাঁধ বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিলেন তিনি। দিনের শেষে অবশ্য গুয়াহাটির বিজেপি সদর দফতরে গিয়ে নিজের বক্তব্য গিলতে বাধ্য হন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৪ ০২:৩২
Share:

কামাখ্যা মন্দিরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিংহ। ছবি: উজ্জ্বল দেব

উত্তর-পূর্ব উন্নয়নের স্বাধীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার উত্তর-পূর্ব সফরে এসেই ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ। অসমে আসার আগে এখানকার সব থেকে বিতর্কিত সমস্যা নিয়ে পর্যাপ্ত ‘হোমওয়াকর্’ না করায় বৃহৎ নদীবাঁধ বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিলেন তিনি। দিনের শেষে অবশ্য গুয়াহাটির বিজেপি সদর দফতরে গিয়ে নিজের বক্তব্য গিলতে বাধ্য হন তিনি।

Advertisement

এনএইচপিসির ২০০০ মেগাওয়াটের প্রস্তাবিত ক্ষমতার এই প্রকল্পটি ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে আন্দোলনের জেরে থমকে রয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি বাঁধের নির্মাণ ও নকশার বিপক্ষে কিছু মতামত দেওয়ায় বাঁধ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের হাত শক্ত হয়। ইতিমধ্যে বাঁধের প্রস্তাবিত উচ্চতা ২৫৭ মিটার থেকে কমিয়ে ১১৬ মিটার করার সিদ্ধান্ত হলেও অসমের অর্ধশতাধিক সংগঠনের মিলিত মঞ্চ বাঁধ গড়তে দিতে রাজি নয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্বও বৃহৎ বাঁধের কুফল নিয়ে সরব ছিলেন। তাঁরা প্রস্তাবিত এই বাঁধকে ‘ওয়াটার বম্ব’ আখ্যা দেন। দলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ নিজে গেরুকামুখে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। অসম প্রদেশ বিজেপি সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়াল এখন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। তিনি ও বাকি বিজেপি সাংসদরা বড় বাঁধের বিপক্ষেই মত দিয়েছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গয়াল নামনি সুবনসিরির কাজ দ্রুত শেষ হবে বলে ঘোষণা করেও পরে রাজ্যের সাংসদদের চাপে মত পাল্টে বলেন, সব পক্ষের মতামত নিয়ে ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কিন্তু অসম সফলে আসা উত্তর-পূর্ব উন্নয়নমন্ত্রী বাঁধ সে সবের ধার ধারেননি। সাংবাদিক সম্মেলন তিনি বলেন, “নানা উস্কানি, প্ররোচনা ও এক শ্রেণীর মানুষের স্বার্থসিদ্ধির মাসুল দিতেই সুবনসিরি বাঁধের কাজ থমকে রয়েছে। আমি সব জানি। এই বাঁধ নিয়ে কোনও ভয় নেই। বরং বাঁধ শেষ হলে তা থেকে অসমের মানুষ বিনামূল্যে যে বিদ্যুৎ পাবেন তা দিয়ে রাজ্যের ঘাটতি মিটবে।” কিন্তু তাঁর দলই যে নির্বাচনে বৃহৎ নদী বাঁধের বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছিল? ভিকে বলেন, “দলের কী মত আমি জানি না। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি। সংবাদমাধ্যমের উচিত সত্যিটা তুলে ধরা।” বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট? ক্ষুব্ধ মন্ত্রীর জবাব, “আমি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট পড়িনি। মন্ত্রক ও বাঁধ নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বাঁধ গড়লে সমস্যা হবে না।” কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী নিজে যেখানে পিছিয়ে এসেছেন সেখানে উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বাঁধ গড়ার কথা বলছেন কেন? সিংহের উত্তর, “বিদ্যুৎ মন্ত্রী সুবনসিরি নয়, অরুণাচলের বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলেছিলেন।” যদিও গয়াল নির্দিষ্টভাবে সুবনসিরির কথাই বলেছিলেন।

Advertisement

বৃহৎ নদীবাঁধের কুফল ও তাঁর সঙ্গে দলের মতপার্থক্য নিয়ে প্রাক্তন সেনাপ্রধান সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নে জেরবার ভি কে সিংহ বলেন, “জোর করে আমার ও দলের মধ্যে মতানৈক্য প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে। আমি জানি কারা বাঁধের বিপক্ষে আন্দোলনে মদত দিচ্ছে।” এর পিছনে বাইরের মদতও থাকতে পারে বলে সেনাপ্রধান জানান। তাঁর বক্তব্য, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলবেন না।”

পরে অবশ্য দলের প্রদেশ কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতাদের চাপে তিনি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যান।

তিনি বলেন, “অসমবাসী যা চাইবেন তাই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন