coronavirus

২৫০ টাকার বেশি করা যাবে না টিকার দাম

পশ্চিমবঙ্গ-সহ আট রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আজ একটি আলাদা বৈঠক করেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

অবশেষে ধোঁয়াশা কাটিয়ে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি দেশের কোন কোন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করোনা প্রতিষেধক পাওয়া যাবে তার বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করল কেন্দ্র। তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি হাসপাতাল মাত্র পাঁচটি! ফলে ভোটের বঙ্গে প্রতিষেধক দেওয়ার পুরো চাপটাই সরকারি হাসপাতালগুলির উপরে এসে পড়বে। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যাটা বাড়াতে রাজ্যকেই তৎপর হতে বলেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল প্রতি ডোজ় প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা নিতে পারবে। এর মধ্যে সার্ভিস চার্জ ১০০ টাকা ও প্রতিষেধক বাবদ ১৫০ টাকা।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ-সহ আট রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আজ একটি আলাদা বৈঠক করেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। সূত্রের মতে, বৈঠকে ভোটমুখী রাজ্যের ভোটকর্মীদের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করার সঙ্গেই যে জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে দ্রুত টিকাকরণ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

মাঝে কেবল রবিবার। তার পরেই সোমবার থেকে দেশের ২৭ কোটি জনতার টিকাকরণ অভিযান শুরু হতে চলেছে। এই ২৭ কোটির মধ্যে রয়েছেন দু’ধরনের ব্যক্তি। এক, যাঁরা ষাটোর্ধ্ব। দুই, যাঁদের বয়স ৪৫-৫৯ বছরের মধ্যে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট ২০টি ক্রনিক রোগ বা সমস্যার শিকার।

Advertisement

প্রতিষেধকের দাম কত হবে, কোন বেসরকারি হাসপাতালে তা পাওয়া যাবে, কী ভাবে নাম নথিভুক্ত করতে হবে— এ সব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে এত দিন পাওয়া যায়নি। আজ সব রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে টিকাকরণ অভিযানের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই রাজ্যগুলির কাছ থেকে বেসরকারি হাসপাতালের চূড়ান্ত তালিকা পাওয়া যায়। তার পরেই কোন রাজ্যের কোন বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো যাবে, সেই তালিকা প্রকাশ করে কেন্দ্র। উত্তরপ্রদেশে ১৫৪৫টি বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষেধক মিলবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের মাত্র পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। সূত্রের মতে, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে যাতে আরও বেশি সংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল টিকাকরণে এগিয়ে আসে তার জন্য রাজ্য প্রশাসনকে তদ্বির করার উপরে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। তবে বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া প্রতিটি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে যাতে টিকাকরণ কেন্দ্র খোলা হয় তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে।

স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা প্রতিষেধক পাচ্ছেন বিনামূল্যে। ২৭ কোটি জনতার মধ্যে যাঁরা সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক নেবেন, তাদেরও অর্থ খরচ করতে হবে না। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিষেধক নিতে হবে বলে আগেই জানিয়েছিল কেন্দ্র। এই সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে ব্যবসা ফেঁদে না-বসতে পারে, তার জন্য একটি ডোজ় করোনা প্রতিষেধকের সর্বোচ্চ দাম ২৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র।

প্রশ্ন ছিল ২৭ কোটি মানুষ প্রতিষেধক নিতে নাম নথিভুক্ত করবেন কী ভাবে। তারও তিনটি উপায় আজ ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এক, কো-উইন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। যদিও আজ ও আগামিকাল ওই অ্যাপের আধুনিকীকরণের কাজ চালু থাকায় আপাতত তাতে নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্রের মতে আগামিকাল সন্ধের পর বা সোমবার সকাল থেকে ওই আ্যাপের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। এই অ্যাপের সঙ্গে জিপিএস সংযু্ক্তিকরণ থাকায় বাড়ির কাছের টিকা কেন্দ্রে নাম লেখাতে পারবেন উপভোক্তারা।

দুই, কোনও টিকা কেন্দ্রে গিয়ে সরাসরি বয়সের প্রমাণপত্র দেখিয়ে নাম লেখানো যাবে। বয়স ষাটের বেশি হলে এমনিতেই প্রতিষেধক পাবেন। বয়স ৪৫ থেকে ৫৯-এর মধ্যে হলে এবং ২০টি শারীরিক সমস্যা বা রোগ থাকলে দেখাতে হবে চিকিৎসকের শংসাপত্র। তালিকায় রয়েছে দশ বছরের বেশি ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ও লিভারের ক্রনিক সমস্যা, লিউকেমিয়া, এইচআইভি, সিক্‌ল সেল, হার্টের নানা সমস্যা ইত্যাদি।

তিন, কোনও একটি এলাকায় দলবদ্ধ ভাবে উপভোক্তাদের প্রতিষেধক দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনকে। ক্যাবিনেট সচিব আজ যে আটটি রাজ্যের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন তাতে পশ্চিমবঙ্গ থাকলেও, মূলত মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটক, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও গুজরাতের মতো ছ’টি রাজ্যের পরিস্থিতি কেন্দ্রকে উদ্বেগে রেখেছে। মহারাষ্ট্রে আজও ৮৩৩৩ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। কেরলে ৩৬৭১ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্র জানাচ্ছে, আজ প্রতিটি রাজ্যের সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যেখানে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সেখানে কেমন সংখ্যায় পরীক্ষা হচ্ছে তার তুল্যমূল্য আলোচনা হয়। বৈঠকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে করোনা পরীক্ষা বাড়ানো, ভোটকর্মীদের প্রতিষেধক নেওয়া নিশ্চিত করা ও সংক্রমণ বেশি— এমন সব জেলায় দ্রুত টিকাকরণ অভিযান শুরু করার উপরে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। সংক্রমণের ‘ক্লাস্টার’ পাওয়া গেলে সেই এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করে নজরদারি বাড়াতে হবে। কোথাও করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন পাওয়া যাচ্ছে কি না, সে দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন