আডবাণীদের বিদায় নিশ্চিত করলেন মোদীরা

চার দশক ধরে দলের কাছে ‘ত্রিমূর্তি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ওঁরা। এ বারে আক্ষরিক অর্থেই ওঁদের বনবাসে পাঠিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। ওঁরা মানে, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলী মনোহর জোশী। আরএসএসের পরামর্শে বিজেপির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংসদীয় বোর্ড থেকে এই তিন নেতাকে বাদ দিলেন মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

চার দশক ধরে দলের কাছে ‘ত্রিমূর্তি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ওঁরা। এ বারে আক্ষরিক অর্থেই ওঁদের বনবাসে পাঠিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। ওঁরা মানে, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলী মনোহর জোশী।

Advertisement

আরএসএসের পরামর্শে বিজেপির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংসদীয় বোর্ড থেকে এই তিন নেতাকে বাদ দিলেন মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপিতে মোদী-যুগ শুরুর পর অটল-আডবাণী যুগ শেষের যে শুরু হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তে তা সম্পূর্ণ হল।

এই তিন নেতার মধ্যে বাজপেয়ী প্রায় এক দশক ধরেই অসুস্থ। ফলে দলের নানা কমিটিতে তাঁকে রাখা হলেও তা ছিল নিয়মরক্ষার। কিন্তু আডবাণী-জোশীদের বাদ দেওয়ার পিছনে অন্য অঙ্ক দেখছেন অনেকে। তা হল, এই দুই নেতাই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আগাগোড়া বিরোধী ছিলেন। যদিও এঁদের বিদায়কে প্রকাশ্যে সম্মানজনক করে তুলে ধরতে ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’ গঠন করা হয়েছে। যেখানে বাদ পড়া এই তিন নেতা তো রয়েইছেন। তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে রয়েছেন স্বয়ং মোদী ও রাজনাথ সিংহ। এই সূত্র ধরেই বিজেপির মুখপাত্ররা আজ দাবি করেন, সংসদীয় বোর্ড দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি হবে আর মার্গদর্শন মণ্ডল ভূমিকা নেবে পথপ্রদর্শকের। কিন্তু ঘরোয়া স্তরে নেতারাই বলছেন, “পথপ্রদর্শক কমিটির বৈঠকই যদি না হয়, তা হলে এই প্রবীণরা পথ দেখাবেন কী করে?”

Advertisement

দলের জন্মলগ্ন থেকে বাজপেয়ী বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের সদস্য। অসুস্থ হলেও নিতিন গডকড়ী, রাজনাথ সিংহের আমলে দল তাঁকে সরানোর সাহস পায়নি। দলে মোদী-জমানা শুরুর কিছু আগে থেকেই সঙ্ঘ নেতৃত্ব আডবাণী-জোশীর মতো নেতাদের শুধু অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে বলেছিলেন। এমনকী তাঁদের লোকসভা ভোটে না লড়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এই দুই নেতা তখন অনড় ছিলেন। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আডবাণী, জোশীকে কোনও পদই দেননি। আডবাণী স্পিকার হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

এই প্রবীণদের বাদ দেওয়ার আগে সঙ্ঘ ও দলের মধ্যে আশঙ্কা ছিল, বিষয়টি নিয়ে হইচই হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। তবে নতুন তালিকায় স্পষ্ট, আডবাণীকে বাদ দেওয়া গেলেও তাঁর অনুগামীদের ছেঁটে ফেলা যায়নি। প্রথমে ঠিক ছিল, একদা আডবাণী-সুষমা ঘনিষ্ঠ অনন্ত কুমারকে সংসদীয় বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হবে। কিন্তু অনন্ত কুমার বা থাওরচন্দ্র গহলৌতের মতো আডবাণী-ঘনিষ্ঠরা তো রইলেনই। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, সংসদীয় বোর্ডে এলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। মোদীকে যখন ভোটের আগেই সংসদীয় বোর্ডে আনা হয়, তখন থেকেই আডবাণী-সুষমা স্বরাজদের মতো মোদী-বিরোধীরা শিবরাজকেও সেখানে সদস্য করানোর জন্য সরব হন। সুষমাদের বক্তব্য ছিল, নবীন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার যুক্তি দেখিয়েই যদি আডবাণীদের সরাতে হয়, তা হলে শিবরাজদের টানতে হবে। সেই যুক্তি মানতে বাধ্য হন অমিত শাহ। বিজেপি নেতারা বলছেন, মোদী-যুগ শুরু হলেও দলের অন্দরে চোরাস্রোত কিন্তু স্পষ্ট।

যার সুযোগ নিতে ছাড়ছে না কংগ্রেস। দলের নেতা রশিদ অলভি বলেন, “আডবাণী, জোশীদের বৃদ্ধাবাসে পাঠানো হল। তাঁরা এখন মার্গদর্শক মণ্ডলে নয়, মূক দর্শক মণ্ডলের সদস্য হলেন! তাঁদের কোনও ভূমিকা থাকবে না!” গডকড়ী কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদের জন্য লালকৃষ্ণ আডবাণী যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু আডবাণী-ঘনিষ্ঠ শিবিরের মতে, এখনও পর্যন্ত মোদীর যা মতিগতি, তাতে তিন বছর পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তা বলা মুশকিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন