‘জোর করে অনুষ্ঠানে যাওয়ার লোক আমি নই। কোনও দিনই সে ভাবে কোথাও যাব না।’’ লন্ডনে এক বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের জেরে রবিবার টুইটারে এই মন্তব্য করেছেন বিজয় মাল্য। এ দিনই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার নভতেজ সারনা কোনও অন্যায় করেননি। কারণ, মাল্য যে আসবেন তা সারনার জানা ছিল না। ‘ঘোষিত অপরাধী’ মাল্যের প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত এখনও ব্রিটেনকে কোনও অনুরোধ করেনি বলেও জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী।
আর্থিক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত মাল্যকে ইতিমধ্যেই ‘ঘোষিত অপরাধী’ তকমা দিয়েছে ভারতীয় আদালত। ব্রিটেনে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সেই মাল্যর সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার নভতেজ সারনার উপস্থিতির ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পরেই শুরু হয় বিতর্ক। ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে হাইকমিশনের জড়িত থাকার কথা প্রচারিত হওয়ায় মুখ খুলতে বাধ্য হয় বিদেশ মন্ত্রক। তারা জানায়, মাল্য হাইকমিশনের অতিথি ছিলেন না। বইটির লেখক সুহেল শেঠ যদি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন তবে তা হাইকমিশনার সারনার জানার কথা নয়। মাল্যকে দেখেই সারনা অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যান।
আজ আবার এ নিয়ে মুখ খুলে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছেন মাল্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজের বন্ধুর (লেখক সুহেল শেঠ) জন্যই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। মেয়ের সঙ্গে বসে চুপচাপ আলোচনা শুনছিলাম। অথচ এ নিয়ে জল্পনা হচ্ছে।’’ সংশ্লিষ্ট শিবিরের মতে, মাল্য বোঝাতে চাইছেন তাঁকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এর পরে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের সুরেই তিনি জানিয়েছেন, বই প্রকাশের অনুষ্ঠানের দু’টি অংশ ছিল। প্রথমটি বই প্রকাশ ও আলোচনা। তার আয়োজক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয়টি হাইকমিশনের ভোজ। হাইকমিশন মাল্যকে আমন্ত্রণ করেনি। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আজ বিদেশ মন্ত্রককে জানিয়েছে, তাদের আমন্ত্রিত অতিথির তালিকায় মাল্য ছিলেন না। তবে ৪০০ জন বসতে পারেন এমন একটি হলে বই প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়েছে। গ্রীষ্মকালে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা ছুটিতে চলে যান। তাই হল ভরাতে সকলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যে কেউই আসতে পারেন। সুহেল শেঠও টুইটারে জানিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে যে কোনও ব্যক্তির আসার অধিকার ছিল।
সুষমার কথায়, ‘‘লেখক যদি কাউকে আমন্ত্রণ জানান, তা হাইকমিশনারের জানার কথা নয়। ফলে সারনার কিছু করার নেই। অযথা এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।’’ সুষমা জানিয়েছেন, মাল্যের প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত এখনও ব্রিটেনকে অনুরোধ করেনি। কারণ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যে প্রত্যর্পণের অনুরোধ বিদেশ মন্ত্রকে পাঠিয়েছিল তাতে কিছু রদবদল প্রয়োজন। ইডি এখনও নয়া অনুরোধ পাঠায়নি। ফলে লন্ডনকেও কিছু জানানো সম্ভব হয়নি।
আজ টুইটারে সংবাদমাধ্যমকে ফের একহাত নিয়েছেন মাল্য। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই, চার্জশিটও দাখিল করা হয়নি। কোনও বিচার ছাড়াই অভিযুক্তের তকমা দেওয়া হয়েছে। আইনের পথে হাঁটার সুযোগ পাইনি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’