রয়্যাল বেঙ্গল শিকার করেও খাওয়া হল না গ্রামবাসীদের

তাঁরা অনেক আগে মানুষ মারতেন। সে সব খুলি বীরত্বের সঙ্গে ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হত। এখন তাঁরা বাঁদর মারেন নিয়ম করে। মেরে থাকেন শুয়োর, ভালুক, পাখি, বনবিড়াল, হরিণ। কিন্তু, রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম বার বনের রাজা থুড়ি রানিকে হত্যা করে বীরত্বের উচ্ছাস যেন বাঁধ মানছিল না! এমন সময় বেরসিক বনরক্ষীর দল রয়্যাল বেঙ্গলের সেই দেহ নিয়ে যেতে হাজির!

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ১১:২৯
Share:

এই সেই রয়্যালবেঙ্গল।—নিজস্ব চিত্র।

তাঁরা অনেক আগে মানুষ মারতেন। সে সব খুলি বীরত্বের সঙ্গে ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হত। এখন তাঁরা বাঁদর মারেন নিয়ম করে। মেরে থাকেন শুয়োর, ভালুক, পাখি, বনবিড়াল, হরিণ। কিন্তু, রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম বার বনের রাজা থুড়ি রানিকে হত্যা করে বীরত্বের উচ্ছাস যেন বাঁধ মানছিল না! এমন সময় বেরসিক বনরক্ষীর দল রয়্যাল বেঙ্গলের সেই দেহ নিয়ে যেতে হাজির!

Advertisement

বললেই হল! ঐতিহাসিক ঘটনা বলে কথা। মাথাটি সাজাতে হবে গ্রামের প্রবেশ পথে, চামড়া ছাড়িয়ে ঝোলানো হবে গাঁওবুড়োর ঘরে, দাঁত আর নখের লকেট গলায় পরবেন বাঘ-মারা বীরের দল। বাঘের মাংসে ভোজ বসবে গ্রামে। সেটাই তো দস্তুর! শেষ পর্যন্ত অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গত কাল রাতে ডিমাপুরের মেদঝিফেমা গ্রাম থেকে বাঘিনীর দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ ও বন বিভাগ। নাগাল্যান্ডে এর আগে কখনও রয়্যাল বেঙ্গলের দেখা মেলেনি। তাই এমন ঘটনায় অবাক বন দফতর ও এনটিসিএ। আজ গুয়াহাটি থেকে এনটিসিএর দল ডিমাপুর যাচ্ছে।

উত্তর-পূর্বে অসম ও অরুণাচলে রয়্যাল বেঙ্গল পাওয়া যায়। আগে মিজোরামের ডাম্পাতে আগে বাঘ ছিল। এই প্রথম নাগাল্যান্ডে রয়্যাল বেঙ্গল মেলায় নড়েচড়ে বসেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাকে বাঁচাতে না পেরে সরকারি রিপোর্টে ঘটনাটি চাপা দিতে ব্যস্ত পুলিশ ও বনদফতর।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত হপ্তাখানেক আগে। ডিমাপুরের অদূরে মেদজিফেমা এলাকায় গ্রামবাসীদের গবাদি পশু খেয়ে যাচ্ছিল বাঘ সদৃশ প্রাণী। রাজ্যে বাঘ না থাকায় গ্রামবাসীরা ডোরাকাটা বাঘের কথা বললেও পাত্তা দেয়নি বনবিভাগ বা আসাম রাইফেলস।

আরও খবর
দেখে বলুন তো ‘আসল’ জন আসলে কোনটি?

বন দফতর পদক্ষেপ না করায় গত কাল সকালে গ্রামসভার তরফে ৭০ জন যুবককে বাঘ তাড়ানোর ভার দেওয়া হয়। নাগা গ্রামে সব বাড়িতেই দেশি বন্দুক থাকে। তা নিয়ে যুবকরা আশপাশের পাহাড়-জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়েন। জঙ্গলে ঢুকে বাঘিনীর সামনে পড়েন এক যুবক। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। থাবায় তাঁর মাথা, বুক, পিঠ জখম করে বাঘিনী পালাবার চেষ্টা করে। অন্যরা বাঘিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। বেশ কিছু ক্ষণ লড়াই চালিয়ে ঢলে পড়ে বাঘিনী।

বাঘিনীর দেহ নিয়ে যুবকরা গ্রামে ফিরতেই উৎসব শুরু হয়ে যায়। শিকার নাগাদের ঐতিহ্য। কিন্তু, পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন ধরনের প্রাণী মারলেও বাঘ মারার কৃতিত্ব তাঁদের কপালে জোটেনি। গ্রাম সভা সিদ্ধান্ত নেয় এমন বীরত্বকে স্বীকৃতি দিতে বাঘের মাথা, চামড়া সব সংরক্ষণ করা হবে। বাঘের মাংস ভাগ করে খাবে সব পরিবার।

খবর পেয়ে পুলিশ ও বনকর্মীরা বাঘিনীর দেহ নিতে আসেন। কিন্তু, গ্রামবাসীরা তাঁদের গর্বের সম্পদ দিতে চাননি। শেষপর্যন্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক ঘটনাস্থলে আসেন। আসে আধা সেনাও। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় রাতে দেহটি উদ্ধার করে বনবিভাগ।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল সত্যপ্রকাশ ত্রিপাঠী জানান, এ দিন বাঘটির ময়নাতদন্ত হয়েছে। ১২ বোরের বন্দুকের একাধিক গুলিতে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু এমন ভাবে প্রকাশ্যে বাঘ মারার পরেও কেন গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? অতি কষ্টে বাঘিনীর দেহ উদ্ধারের পরে কোনও বিতর্কের ঝুঁকি নিচ্ছে না বনবিভাগ। ত্রিপাঠী জানান, গ্রামবাসীরা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছেন। বাঘের দেহ নিতে বাধা দেওয়া উল্লেখও সরকারি রিপোর্টে থাকছে না।

কিন্তু কী ভাবে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে বাঘ এল?

সেই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াচ্ছে এনটিসিএ। এনটিসিএর উত্তর-পূর্বের সদস্য কমল আজাদ বলেন, ‘‘নাগাল্যান্ডে বাঘ থাকার কোনও অতীত তথ্য নেই। সম্ভবত কাজিরাঙা থেকে বেরিয়ে কার্বি আংলং বা নামবরের দিক থেকে ডিমাপুরে ঢোকে বাঘটি। সেখান থেকে গিয়েছিল মেদজিফেমায়। আমরা আগামীকাল ঘটনাস্থল ঘুরে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে দিল্লিতে বিশদে সব জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন