সংসদের বাদল অধিবেশনের ঠিক আগেই ব্যপম-কাণ্ডে নয়া মোড়। ফের বিপাকে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বার নাম জড়াল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের। বিজেপির দুই নেতা প্রভাত ঝা, অনিল দাভে-সহ আরএসএসের সুরেশ সোনির নামেও উঠল অভিযোগ।
সম্প্রতি ২০১৩ সালে আয়কর দফতরের দেওয়া একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। যা থেকে জানা গিয়েছে, ব্যপম-কাণ্ডের ‘কিংপিন’ খনি মাফিয়া সুধীর শর্মার বাড়িতে ২০১১ সালে হানা দিয়েছিলেন আয়কর কর্তারা। সে সময় তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্ক থেকে যে তথ্য মিলেছিল, তাতে স্পষ্ট বিজেপির অনেক নেতাকেই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। ধর্মেন্দ্র প্রধানের বিমানের টিকিট কেটে দিয়েছিলেন সুধীর। বিজেপি ও আরএসএসের কিছু নেতাও নিয়মিত সুবিধা নিয়েছেন তাঁর থেকে। আশ্চর্যজনক ভাবে এত দিন রাজ্য পুলিশ এই সব তথ্য সামনে আসতে দেয়নি। ব্যপম মামলা সিবিআইয়ের হাতে আসতেই প্রকাশ্যে এসেছে রিপোর্টটি। এই অবস্থায় অবিলম্বে ধর্মেন্দ্র প্রধান ও শিবরাজ সিংহ চৌহানের পদত্যাগ দাবি করেছে কংগ্রেস। জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘ক্ষমতায় থাকলে কিছুতেই স্বচ্ছ তদন্ত হবে না।’’
ধর্মেন্দ্র প্রধান যদিও তড়িঘড়ি সাফাই দিয়েছেন, তাঁর টিকিট কেটে দিয়েছিল দলই। সুধীর শর্মার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। তবে এ কথাও জানা গিয়েছে, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন কেন্দ্রের মন্ত্রী ছিলেন না ধর্মেন্দ্র। কোনও মন্তব্য করতে চাননি অনিল দাভে, সুরেশ সোনি।
এমনিতেই রাজ্যপালকে সরানো নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। আজই আবার সিবিআই তিনটি মামলা দায়ের করেছে। নম্রতা দামোর-সহ পাঁচটি সন্দেহজনক মৃত্যুর নথিও চাওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের থেকে। চাপের মুখে থাকা মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ ফের ছুটে এসেছেন দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে আজ কথাও বলেছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব ভালই বুঝতে পারছেন, সংসদের অধিবেশনের ঠিক আগে এই নতুন অভিযোগ করে আসলে সরকারকেই নতুন করে বিপাকে ফেলতে চাইছে বিরোধীরা। কারণ, উত্তরোত্তর যে ভাবে ব্যপম-কাণ্ডের জট পাকছে, তাতে সংসদে হট্টগোল থামানো কঠিন হয়ে পড়বে। আটকে যাবে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি।
এ অবস্থায় ব্যপম-কাণ্ড নিয়ে সংসদে দলের কৌশল কী হবে, তা নিয়ে গত কাল রাতেই প্রধানমন্ত্রী দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে ডেকে ছিলেন। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও দলের সভাপতি অমিত শাহ উপস্থিত ছিলেন। মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল রামনরেশ যাদবের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর সরকার কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, গত কালের বৈঠকে রাজ্যপালকে এখনই না সরানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন রাজনাথ সিংহ। অরুণ জেটলিরা অবশ্য রাজ্যপালের অপসারণের পক্ষে। কিন্তু রাজনাথ মনে করেন, একবার রাজ্যপালকে সরিয়ে দেওয়া হলে, সরাসরি আক্রমণের নিশানায় চলে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। রাজ্যপাল মুখ খুললেও দলের বিপদ বাড়তে পারে। এই অবস্থায় রাজ্যপালকে বোঝানো হচ্ছে, যাতে তিনি নিজেই স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান।
আবার সরকারের আর এক সূত্রের মতে, সিবিআই তদন্ত শুরু করলে রাজ্যপালের পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। অতীতে সে নজির রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, গোয়ার রাজ্যপাল বি ভি ওয়াংচু-র বিরুদ্ধে যখন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল সিবিআই, পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল তাঁদের। ফলে রাজ্যপালের বিদায় এক রকম নিশ্চিত। এখন কোন সময়ে কী ভাবে তা করা হবে, সেই সিদ্ধান্তটাই নেবেন প্রধানমন্ত্রী।