আপত্তিতে কান নয়, টাকা অ্যাকাউন্টেই

পশ্চিমবঙ্গ একা নয়। সঙ্গী বিহার ও উত্তরপ্রদেশ। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অনুদান বণ্টনের অধিকার হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিহার ও উত্তরপ্রদেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

পশ্চিমবঙ্গ একা নয়। সঙ্গী বিহার ও উত্তরপ্রদেশ।

Advertisement

১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অনুদান বণ্টনের অধিকার হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিহার ও উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু রাজ্যগুলির আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আজ ফের একবার জানিয়ে দেওয়া হল, নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই যাবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কেন্দ্রের যুক্তি, রান্নার গ্যাস, রেশনের টাকা, বৃত্তির অনুদান-সব মিলিয়ে ১৭টি মন্ত্রকের মোট ৭৮টি প্রকল্পের টাকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রে তার অন্যথা হওয়ার প্রশ্ন নেই। কেন্দ্রের দাবি, গোটা ব্যবস্থাটির মধ্যে স্বচ্ছতা আনতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে প্রকল্পের টাকা নিয়ে নয়ছয়, চুরি বন্ধ হয়। স্বজনপোষণ আটকানো যায়। কেন্দ্রের প্রশ্ন, আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়ানো নিয়ে রাজ্যগুলির আপত্তি থাকার কথা নয়। বরং তাদের উচিত কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে চুরি রোখা।

আশির দশকে রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয় অর্থের অপচয় রুখতে ‘পিএম টু ডিএম’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। সে সময়ে ওই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকার। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বিরোধী নেত্রী। তিনি কংগ্রেস সরকারের সেই সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল নবান্নে একটি বৈঠকে মমতা জানিয়ে দেন, শ্রমিকদের সরাসরি টাকা পাঠানো আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত। তাই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত মানবে না। সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে কেন্দ্রকে চিঠি দেবে রাজ্য। বিরোধীরা অবশ্য একে মুখ্যমন্ত্রীর স্ববিরোধিতা হিসেবেই দেখছেন।

Advertisement

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দাবি, প্রায় সবক’টি রাজ্য থেকেই অনুদানের টাকা নিয়ে নয়ছয়ের একাধিক অভিযোগ মন্ত্রকের কাছে জমা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা ১০০ দিনের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজ করলেও বিরোধী সমর্থকদের টাকা পঞ্চায়েত স্তরে আটকে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ভূয়ো শ্রমিকের উপস্থিতি দেখিয়ে টাকা লুঠের ঘটনারও বহু অভিযোগ মন্ত্রকের কাছে রয়েছে।

এই ধরনের জালিয়াতি ও আর্থিক কারচুপি রুখতেই সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ইউপিএ আমলেই। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরে সেই কাজে গতি পায়। মন্ত্রকের দাবি, গোটা দেশে প্রায় ১১ কোটির মতো শ্রমিক রয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। কমেছে আর্থিক কারচুপি। সাশ্রয় হচ্ছে কোষাগারের।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বা বিহারের মতো রাজ্যগুলির পাল্টা যুক্তি হল, রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা না থাকায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না শ্রমিকেরা। ফলে কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই তাঁদের টাকা আগের মতোই রাজ্যের হাত দিয়ে পাঠানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন