রাজ্যের আমলারা কি পিছিয়ে পড়ছেন?

দিল্লিতে বাংলা ধূলিস্যাৎ হওয়ার এ এক মর্মান্তিক কাহিনি। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের আমলারা অন্য রাজ্যের তুলনায় কতটা পিছিয়ে রয়েছে, সম্প্রতি তা সামনে চলে এল। সচিব পর্যায়ে এমনকী অতিরিক্ত সচিব পর্যায়েও কার্যত পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের অনুপস্থিতি বুঝিয়ে দিল বাংলা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ১৫:১২
Share:

দিল্লিতে বাংলা ধূলিস্যাৎ হওয়ার এ এক মর্মান্তিক কাহিনি।

Advertisement

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের আমলারা অন্য রাজ্যের তুলনায় কতটা পিছিয়ে রয়েছে, সম্প্রতি তা সামনে চলে এল। সচিব পর্যায়ে এমনকী অতিরিক্ত সচিব পর্যায়েও কার্যত পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের অনুপস্থিতি বুঝিয়ে দিল বাংলা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

সচিব পর্যায়ে যে এমপ্যানেলমেন্ট হয়েছে তাতে সাধারণত ৫ জন অফিসারের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের ৩ জন অফিসারের নাম ছিল তাতে। ত্রিলোচন সিংহ, হেম পান্ডে ও রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সঞ্জয় মিত্রের স্ত্রী কিছুদিন আগে পোস্ট এবং টেলিগ্রাফ বিভাগের ক্যাডার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ও আর্থিক উপদেষ্টা করা হয়েছে। সঞ্জয় মিত্র কেন হলেন না, আমলাতন্ত্রে তা নিয়ে জোর জল্পনা-কল্পনা চলছে। কিন্তু এরইমধ্যে যে হেম পান্ডে পরিবেশ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন, তিনি এ বারে সচিব হবেন।

Advertisement

ত্রিলোচন সিংহেরও সচিব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলেন না। যার ফলে দিল্লিতে এখন টিমটিম করে জ্বলছে বাংলার উপস্থিতি। নন্দিতা চ্যাটার্জি আবাসন ও শহর দারিদ্র্য দূরীকরণ দফতরের সচিব ও অনাবাসী ভারতীয় মন্ত্রকের সচিব অনিল কুমার অগ্রবাল ছাড়া আর কোনও উপস্থিতি নেই। আয়ুষ মন্ত্রকের সচিব নীলাঞ্জন স্যান্যাল বাঙালি। কিন্তু তিনি ওড়িশা ক্যাডারের। ফলে ক’দিন আগেও জহর সরকার, বিজয় চট্টোপাধ্যায়, সুনীল মিত্রদের মতো বাঙালিদের যে যুগ ছিল দিল্লিতে, এখন কার্যত আর সেটি রইল না।

শুধু সচিব নয়, অতিরিক্ত সচিব পর্যায়েও এখন তেমন কেউ নেই। ১৯৮৫ সালের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের পি আর বাভিসকর দিল্লিতে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে থেকে এখন কলকাতায় সচিব হয়ে গিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সঞ্জীব চোপড়া, সুমন্ত চৌধুরীর মতো অতিরিক্ত সচিবরা কেন সচিব হলেন না? সঞ্জীব চোপড়া এখন কৃষি মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব, তিনি পারদর্শী বলে পরিচিত। উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের পর তাঁকে সেখানে বিনিয়োগ টানার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বাঙালিরা দিল্লিতে গুরুত্ব পাচ্ছেন না?

আইএএস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বাঙালিরা গড়পরতায় কাজের গুণগত মান ও এক্সপোজারে পিছিয়ে রয়েছেন। এটি যে শুধু মমতা জমানায় হচ্ছে, তা নয়। বাম আমলেও একই বিষয় দেখা গিয়েছে। অন্য ক্যাডারের বাঙালিরা কিন্তু অনেক বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। গুজরাতের শিল্প সচিবও বাঙালি হয়েছেন। ইউপিএসসিতে যখন সুবীর দত্ত চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন বাঙালিদের এমপ্যানেল করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব ক’জন হবেন, তার একটি সীমারেখা থাকে। সেটি পূর্ণ হয়ে গেলেই তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওই নামের মধ্যেই যথেষ্ট লবি হয়। তাহলে লবিতে কি পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে গেল?

আমলা সূত্রের মতে, অনেক সময় মূল্যায়ণেও পিছিয়ে যান বাঙালিরা। প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর খুলবেকে নিয়ে গিয়েছেন নিজের দফতরে। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি যখন প্রথম প্রতিমন্ত্রী হন, জহর সরকার দিল্লিতে চলে আসেন। দিল্লিতে যেমন তিনি কাজ করেছেন, তেমনই কলকাতাতেও করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রকে কাজ করে তিনি প্রসার ভারতীতে এসেছেন। ঠোঁটকাটা আমলা বলে পরিচিত হয়েও তাঁর যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অনেক আমলা দিল্লিতে আসতেই চান না। আবার অনেকে বলছেন, শুধু প্রধানমন্ত্রী সচিবলায়ে কাজ করলেই হয় না। আমলাদের বসেরা যদি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন, সেটিও সবসময় কাজে লাগে না। বরং সেটি নেতিবাচক হিসেবেও অনেক সময় দেখা হয়। আবার সরকারে কোনও দুর্নীতি হলে আমলাদের উপরেও তার ছায়া পড়ে।

ফলে এক সময় নেহরুর আমলে সুকুমার সেনকে নির্বাচন কমিশনে এনে এবং বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে অশোক সেনকে জনগণনা দফতরের কর্তা করে দিল্লিতে এনে যে ভাবে বাঙালি আমলাদের গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছিল, প্রশ্ন উঠেছে, সেই মেধা এখন কোথায় গেল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন