বুলন্দশহরে নিছক দুর্ঘটনা: আদিত্যনাথ

একই দিনে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বললেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে গণপ্রহারে মৃত্যুর কোনও ঘটনা ঘটেনি। বুলন্দশহরে যা হয়েছে তা দুর্ঘটনা।’’ 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৯
Share:

যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।

এত দিন অভিযোগের তিরটা ছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দিকে। বুলন্দশহরে পুলিশ খুনের ঘটনায় আজ প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এল এক সেনা জওয়ানের নাম। একই দিনে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বললেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে গণপ্রহারে মৃত্যুর কোনও ঘটনা ঘটেনি। বুলন্দশহরে যা হয়েছে তা দুর্ঘটনা।’’

Advertisement

দুর্ঘটনাই যদি হয়, সে ক্ষেত্রে জিতেন্দ্র মালিক ওরফে জিতু ফৌজিকে ধরতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দু’টি দল কেন কাশ্মীরে পৌঁছে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বুলন্দশহরে গত সোমবারের তাণ্ডবের এফআইআরে ১১ নম্বরে রয়েছে জিতুর নাম। বুলন্দশহরের মহাভ গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরে মোতায়েন এই জওয়ানই সে দিন ইনস্পেক্টর সুবোধকুমার সিংহকে গুলি করে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ পুলিশের। কারণ, মোবাইলে তোলা একটি ভিডিয়োতে নাকি গুরুতর আহত সুবোধের পাশে দেখা গিয়েছিল জিতুকে। ভিড়ের মধ্যেও তিনি ছিলেন। এবং ঘটনার সন্ধেতেই তিনি কাশ্মীর রওনা হয়ে যান। জিতুর খোঁজে উধমপুরে সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কম্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। আইজি (অপরাধ দমন) এস কে ভগৎ জানান, বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে। জিতু শীঘ্রই গ্রেফতার হবেন বলে পুলিশ আশাবাদী। আজ আরও ৫ জন গ্রেফতার হওয়ায় বুলন্দশহরের ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯।

সেনাবাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল এখন জম্মুতে এবং একটি দল কাশ্মীরে রয়েছে। প্রমাণ মিললে জিতুকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’ যদিও জিতু কাশ্মীরের ঠিক কোথায় মোতায়েন রয়েছেন, তা জানাননি সেনাকর্তারা। আইজি-র সন্দেহ, জিতু আছেন জম্মুতে। আবার জিতুর মা রতন কৌরের বক্তব্য, তিনি আছেন কার্গিলে।

Advertisement

চন্দ্রাবতী দেবী নামে জিতুর এক কাকিমা দাবি করেছেন, বুলন্দশহরের ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ওই জওয়ান। ফিরে এসে বলেন, ‘‘নাটকটা দেখে এসো।’’ সেই রাতেই তিনি কার্গিলে রওনা হয়ে যান। কিন্তু জিতুর মায়ের অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে বিবৃতি দেওয়াচ্ছে পুলিশ। জিতুর ৮০ বছরের বাবাকেও তুলে নিয়ে গিয়েছে তারা। রাত ১টায় এসে বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ‘‘ছেলে খুন করতে পারে না। করে থাকলে আমিই নিজে হাতে মারব ওকে,’’ বলেছেন তিনি।

ইনস্পেক্টর সুবোধের .৩২ বোরের পিস্তলটি এখনও মেলেনি। সুবোধ এবং নিহত যুবক সুমিত কুমারের দেহে একই বোরের গুলির ক্ষত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। রাজ্যের এডিজি এস বি শিরোদকরের তদন্ত-রিপোর্ট তুলে ধরে একটি চ্যানেল বলেছে, সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার উদ্দেশ্যেই গন্ডগোল পাকানো হয়েছিল। গরুগুলির মৃত্যু হয়েছিল ঘটনার অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে। আজ আরও জানা যায়, সুবোধ খুন হওয়ার দু’দিন আগে তাঁর বদলি চেয়ে বুলন্দশহরের সাংসদ ভোলা সিংহকে চিঠি দিয়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। সংবাদ সংস্থার বক্তব্য, হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে সুবোধ বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ জানানো হয় চিঠিতে। ভোলা সিংহ সেই চিঠি পাঠিয়ে দেন পুলিশের এসএসপি-র কাছে। তিনি জানান, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছিল।

কাকতালীয়, না ষড়যন্ত্র? ধোঁয়াশা বিস্তর। আজ এক অনুষ্ঠানে ‘দুর্ঘটনা’র যুক্তি-সহ যোগী বলেছেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলছে। দোষীদের ছাড়া হবে না।’’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে গোহত্যা নিষিদ্ধ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন