4 States Assembly Election Result

কমে কমে কংগ্রেস রইল তিনে, বিজেপি বাড়ল কত? দক্ষিণে শূন্য, তবে ‘হিন্দি’ ভারতে পদ্মেরই রমরমা

চার রাজ্যের ফলাফলে উল্লাস বিজেপি শিবিরে। কারণ, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় জয়ের ফলে দলের একক ভাবে ক্ষমতায় থাকা রাজ্যের সংখ্যা এক ডজন হয়ে গেল। আর কংগ্রেসের হাতে রইল তিন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১২
Share:

‘হিন্দি’ বলয়ে কোনও রাজ্যে নেই কংগ্রেস। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

চারে তিন বিজেপি, এক কংগ্রেস। চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের এই ফলাফলকে অবশ্য অন্য নজরেও দেখা যায়— হিন্দি বলয়ে কংগ্রেস শূন্য, বিজেপি শূন্য দক্ষিণে।

Advertisement

ভারতীয় রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত এবং প্রমাণিত সত্য প্রবাদ হল— ‘উত্তরপ্রদেশ যার, দিল্লি তার’। তবে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা উত্তর ভারতের সমর্থন সঙ্গে নিয়েই কংগ্রেস একদা রাজত্ব করেছে দেশে। কিন্তু সেই সব রাজ্যেই এখন ক্রমে ক্ষমতাহীন হয়ে চলেছে ১৩৭ বছরের প্রাচীন দল। অন্য দিকে, ১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া বিজেপি সেই পুরনো পথেই বসেছে দিল্লির মসনদে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই চার রাজ্যের ফল বিজেপিকে ‘বাড়তি অক্সিজেন’ জোগাবে। কারণ, দিল্লির ক্ষমতায় কে যাবে, তার অনেকটাই ঠিক করে দেয় হিন্দি-ভারত।

কংগ্রেস যে একেবারেই নেই তা অবশ্য নয়। গোবলয়ের মধ্যে না পড়লেও হিমাচল প্রদেশ মূলত হিন্দিভাষী রাজ্য। সেখানে এক বছর আগেই পূর্ণশক্তি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এ ছাড়া বিহারেও ক্ষমতার সঙ্গে রয়েছে কংগ্রেস। তবে তৃতীয় শরিক হিসাবে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ১৬০ আসনের মধ্যে কংগ্রেসের মাত্র ১৯। বিজেপির ৭৮।

Advertisement

তবে হিন্দি-ভারতের বাকি রাজ্যে কংগ্রেসের উপস্থিতিটুকুই শুধু রয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ৪০৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেসের দুই! ৯০ আসনের হরিয়ানায় কংগ্রেসের হাতে ৩০। এ বার হাতছাড়া রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়। এক অর্থে মধ্যপ্রদেশও ‘হাত’ ছাড়া। কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সেখানে জিতেছিল। কিন্তু পরে দলবদলের খেলায় ক্ষমতা যায় বিজেপির হাতে। এ বার মধ্যপ্রদেশ সরাসরিই জিতে নিল বিজেপি।

ভোটের ফলাফলের ধারা বলছে, কংগ্রেস পুরোপুরি পর্যুদস্ত হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যেই।

হিন্দি-ভারতে দুর্বলতার জন্যই কংগ্রেসের লোকসভার আসন কমতে কমতে ৫০-এ গিয়ে ঠেকেছে। সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদাও নেই। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দি-ভারতের তিন রাজ্যের ফল যেমন বিজেপির জন্য উল্লাসের, তেমনই কংগ্রেসের কাছে উদ্বেগের। দক্ষিণে তেলঙ্গানায় কংগ্রেস জিতলেও বিজেপিকে হারিয়ে নয়। সেখানে বিজেপির হারানোর কিছু ছিল না। তবে দক্ষিণের একমাত্র রাজ্য কর্ণাটক হারানোর পর তেলেঙ্গানা নির্বাচনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল বিজেপি। তাতে আসনসংখ্যা একটু বাড়লেও তা জাদুসংখ্যার ধারেকাছেও যায়নি।

বিজেপির মতো না হলেও কংগ্রেসের অবস্থাও দক্ষিণে খুব ভাল নয়। তেলঙ্গানা দখল করে দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় রইল দু’টি রাজ্যে। এর সঙ্গে হিমাচল প্রদেশ জুড়লে গোটা দেশে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়াল তিন। সেখানে একক ভাবে বিজেপিশাসিত রাজ্যের সংখ্যা বেড়ে হল ১২। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, গোয়া, অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হল রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়। এ ছাড়াও মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিমে সরকার পক্ষে রয়েছে বিজেপি। আপ দুই রাজ্য পঞ্জাব ও দিল্লিতে ক্ষমতায়। বাকি সব দলই একটি করে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।

প্রশ্ন হল, দীর্ঘ সময় ভারত জুড়ে রাজত্ব-করা কংগ্রেসের হিন্দি বলয়ে এই ক্ষয় কেন? পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ইদানীং কালে কংগ্রেসের রাজনীতিতে জাতপাতের হিসাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমর্থন থাকলেও হিন্দু ভোটের একাধিপত্য দিন দিন বিজেপির দিকে চলে যাচ্ছে। এখন আবার ‘সনাতনী’ স্লোগান তুলে বিজেপি হিন্দু ভোটের বিভিন্ন ভাগকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করছে। যা মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান বা ছত্তীসগঢ়ের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলেছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দিরে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’-সহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যে রাজ্যে ‘সনাতনী’ হাওয়া তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। সেই পরীক্ষার প্রথম ধাপে কৃতকার্য পদ্মশিবির।

কংগ্রেসের আরও একটি ত্রুটি রয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট গড়ার ক্ষেত্রে ‘দাদাগিরি’ দেখানো। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে কংগ্রেস নিজে বেশি আসন নিয়ে চাহিদামতো আসন দেয়নি জোটসঙ্গীদের। তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছে তারা। এর পরে লোকসভা নির্বাচনে জোট গড়তে গিয়ে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল, বিহারে নীতীশের দল কিংবা ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার ‘দাদাগিরি’ মেনে নিতে হবে কংগ্রেসকে। একই ‘চাপ’ নিতে হবে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পঞ্জাব এবং তামিলনাড়ুতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন