জমির সঙ্গে এ বার গম। পুরোপুরি কৃষি-রাজনীতিতেই যেন মন দিয়েছেন সনিয়া গাঁধী! জমি প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদীকে কৃষক-বিরোধী তকমা দেওয়ার চেষ্টায় নেমে সরকারকে অনেকটাই চাপে ফেলা গিয়েছে। এরই পাশাপাশি, চাষিদের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা ফেরাতে সরাসরি তাঁদের হয়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার শুরু করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। এ বারে তাঁর অস্ত্র গম।
অকাল ঝড়-বৃষ্টিতে উত্তর ভারতে রবিশস্যের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের মাথায় হাত। তার উপরে কেন্দ্রীয় খাদ্য নিগম জানিয়ে দিয়েছে, গমে অতিরিক্ত ভেজা ভাব থাকলে তা তারা চাষিদের কাছ থেকে কিনবে না। এই সিদ্ধান্তে উত্তর ভারতের ‘গম বলয়ে’ উষ্মা তৈরি হচ্ছে বুঝেই ময়দানে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। মোদী সরকার চাষিদের কথা ভাবে না— এটা প্রমাণ করার নতুন এই সুযোগ সনিয়া কার্যত লুফে নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবন্টন মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানকে আজ এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন সনিয়া। তাঁর বক্তব্য, গমে ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে সরকার তা চাষিদের কাছ থেকে কিনবেন না বলে জানতে পেরেছি। আর্দ্রতার মাত্রা ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে থাকলে সেই গম কম দামে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য নিগম। সাধারণ অবস্থায় এটা চলতে পারে। কিন্তু চাষিরা এখন সঙ্কটে। এই পরিস্থিতিতে ওই নিয়ম শিথিল করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সনিয়ার চিঠির জবাব এখনও খাদ্য মন্ত্রক দেয়নি। মন্ত্রকের তরফে শুধু বলা হয়েছে, খাদ্য নিগম নিয়ম মতোই কৃষকদের কাছ থেকে গম কিনছে। গমের মান ভাল হলে চাষিদের কুইন্টাল প্রতি ১৪৫০ টাকা সহায়ক মূল্য দেওয়া হচ্ছে। ফসলের মান একটু খারাপ হলে দেওয়া হচ্ছে কুইন্টাল প্রতি ১৩৮০ টাকা।
কংগ্রেস সভানেত্রীর বক্তব্য, একে তো সরকার কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বাড়াচ্ছে না। তার উপর নিয়ম কিছুটা শিথিল না করা হলে কৃষকদের প্রতি ঘোর বঞ্চনা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘সঙ্কটের পরিস্থিতিতে খাদ্য নিগম যে নিয়ম শিথিল করে, তার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ইউপিএ সরকারের আমলেও সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে এই দাবি নতুন নয়।’’
ঝড়-বৃষ্টিতে উত্তর ভারতে রবিশস্যের, বিশেষ করে গমের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহের কথাতেই। তিনি আজ জানান, ১১৪ হেক্টর জমিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রবি মরশুমে গমের ফলন ৪-৫% কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এতে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার একটা আশঙ্কা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। সরকারকে এটা ভাবাচ্ছে। এর উপরে রাজনৈতিক ভাবেও সরকারের আরও চাপে ফেলতে চায় কংগ্রেস। মোদী সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরোধিতায় নেমে সরকারকে কৃষক ও গরিব বিরোধী তকমা দিতে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন সনিয়া। এ বার খাদ্য নিগমের সিদ্ধান্ত নিয়ে কৃষক অসন্তোষকেও তিনি সেই রাজনীতির সঙ্গে জুড়তে চাইছেন।
এ ব্যাপারে কংগ্রেস সভানেত্রীর ব্যক্তিগত তত্পরতা রাজনৈতিক ভাবেও তাত্পর্যপূর্ণ। ঘন ঘন যে ভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে চিঠি লেখা শুরু করেছেন, আগে তা কখনও দেখা যায়নি। তা ছাড়া, ফসলের ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে রাজ্যওয়াড়ি সফরে নেমেও সরকারকে চাপে ফেলে দিয়েছেন সনিয়া। চলতি সপ্তাহেই যেতে পারেন পঞ্জাব সফরে। গম চাষিদের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে সেখানে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও অবশ্য মন্ত্রীদের রাজ্য সফরে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণের দাবির মুখে পড়ে মন্ত্রীরা দায় চাপাচ্ছেন রাজ্যের উপরেই। এ নিয়েও মোদীকে বিঁধতে ছাড়ছে না কংগ্রেস। শুধু কৃষকদের সহায়ক মূল্য নয়, আদিবাসীদের জমি ও বনাঞ্চলের জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নেও আজ কেন্দ্রকে এক হাত নিয়েছে কংগ্রেস। মোদী কাল অভিযোগ করেছেন, আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিরোধীরা মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন। কালই সেই অভিযোগ খণ্ডন করেছিল কংগ্রেস। আজ আরও আটঘাট বেঁধে আক্রমণ শানান দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন ধরে মোদী সরকার যে পরিবেশ সম্মেলন করল, তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বনাঞ্চলের জমির ব্যবহার নিয়ে টি এস আর সুব্রহ্মণ্যম কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়ন। যে রিপোর্টে বলা হয়েছে, অরণ্যের অধিকার আইন থেকে গ্রামসভার সম্মতি সম্পর্কিত অংশটি বাদ দিতে হবে। যার অর্থ বনাঞ্চলের জমি অধিগ্রহণের সময় গ্রামসভার সম্মতি আর নেবে না সরকার। অথচ সর্বোচ্চ আদালতও গ্রামসভার সম্মতি নেওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছিল।
সুব্রহ্মণ্যম কমিটির রিপোর্টে এ-ও সুপারিশ করা হয়েছে, যে সব অরণ্যে ৭০% বা তার বেশি জমি গাছপালায় ঢাকা থাকবে, সেখানে প্রকল্প গড়া বা শিল্প স্থাপন করা যাবে না। কংগ্রেসের বক্তব্য, ৭০%-এর বেশি জমি গাছে ঢাকা, এমন বনাঞ্চলের পরিমাণ গোটা দেশে মাত্র ২.৫৪%। যার অর্থ প্রধানমন্ত্রী এ বার অকাতরে বনাঞ্চলের জমিও তাঁর শিল্পবন্ধুদের হাতে তুলে দিতে চলেছেন। ঠিক যেমনটি তিনি করেছেন গুজরাতে!