সোনম ও রাজা রঘুবংশী। —ফাইল চিত্র।
মধুচন্দ্রিমায় স্বামীকে খুনের জন্য ভাড়াটে খুনি লাগিয়েছিলেন ইনদওরের সোনম রঘুবংশী। কিন্তু রাজা রঘুবংশীকে খুনের জন্য যখন প্রথম আঘাত করলেন খুনি, তখনই সেখান থেকে দূরে সরে যান নববধূ। পুলিশি জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন তিন খুনির এক জন বিশাল সিংহ চৌহান। তিনি জানান, প্রথমে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল ২৯ বছরের রাজা রঘুবংশীকে। যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠেন ওই ব্যবসায়ী। রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছিলেন তিনি। সেই সময় সামনেই ছিলেন তাঁর নববধূ। স্বামীর চিৎকারে তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন। দৌড়ে খানিকটা দূরেও চলে যান ২৪ বছরের ওই এমবিএ পড়ুয়া। স্বামীকে যখন একের পর এক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিলেন খুনিরা, তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হল, তখনই ঘটনাস্থলে ফেরেন স্ত্রী। এবং দেহ সরানোর কাজে সাহায্যও করেছিলেন।
রাজা ও সোনমের দাম্পত্যের মেয়াদ ছিল সাকুল্যে ১২ দিন। গত ১১ মে বিয়ে হয়েছিল ইনদওরের দুই যুবক-যুবতীর। দু’জনেই ব্যবসায়ী পরিবার থেকে আসা। মধুচন্দ্রিমায় তাঁরা গিয়েছিলেন মেঘালয়। ২১ মে থেকে মেঘালয়ের দর্শনীয় জায়গাগুলিতে ঘুরতে বেরোন নববিবাহিত দম্পতি। কিন্তু ২৩ তারিখ থেকে তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনাক্রমে গত ২ জুন উদ্ধার হয় রাজার ক্ষতবিক্ষত দেহ। সোনমের খোঁজ তখনও পাওয়া যায়নি।
অপহরণ, খুন— এমন নানা জল্পনার মধ্যে চমকে দেওয়া তথ্য মেলে যখন উত্তরপ্রদেশের গাজ়িয়াবাদ থেকে গ্রেফতার হলেন সোনম। জানা গেল, স্বামীর খুনে তিনিই মূল চক্রী। প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা এবং তিন ভাড়াটে খুনির সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। তাঁরা সকলেই এখন পুলিশের হেফাজতে। রাজার অন্যতম খুনি বিশাল তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করে নেন, রাজাকে প্রথম আঘাতটা তিনিই করেছিলেন। পুলিশ জানায়, একটি ধারালো ছুরি দিয়ে রাজার শরীরে কোপ মারা হয়। তিনি যখন রক্তাক্ত, যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন, তখন স্ত্রী সেখান থেকে দৌড়ে পালান। বিশাল এবং আরও দুই খুনি কোপাতে থাকেন রাজাকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘালয় পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্বামীর মৃত্যু নিশ্চিত হতেই অকুস্থলে ফেরেন সোনম। রাজার দেহ সরিয়ে ফেলার জন্য তিনিও হাত লাগিয়েছিলেন।’’ খুনে ব্যবহৃত দ্বিতীয় অস্ত্রটিও (দা) উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেটিও পাওয়া গিয়েছে শিলঙের সোহরার সেই ঝোপ থেকেই।
তদন্তকারীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, একটি দা দিয়েই কোপানো হয়েছিল রাজাকে। কিন্তু ঘটনার পুনর্নির্মাণে উঠে আসে আর একটি তথ্য। মঙ্গলবার সোনম-সহ পাঁচ ধৃতকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল মেঘালয় পুলিশ। তখন জানা যায়, দু’টি অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন খুনিরা।
অন্য দিকে, সোনমের ভাই গোবিন্দ জানিয়েছেন, দিদির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে তাঁদের পরিবার। গোবিন্দ বলেন, ‘‘জামাইবাবুর পরিবারের পাশে আছি আমরা। দিদি যে কাজ করেছে, তার ক্ষমা নেই।’’ তিনি জানান, রাজার খুনের ন্যায়বিচারের জন্য তাঁরাও লড়াই করছেন।