বাংলার ভোটে ভূতের নেত্য আছে। কিন্তু ভূতেদের দেখা মিলছে না। দেশের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমে পাড়ি দিলে এ বারে ভূতেদের দর্শনও হয়ে যেতে পারে!
রাজস্থানে একটি পরিত্যক্ত আস্ত গ্রামকে ঘষেমেজে সাজানো হচ্ছে পর্যটকদের জন্য। প্রায় দুশো বছর ধরে সে গ্রামে কেউ থাকে না। হঠাৎ করেই সেই বর্ধিষ্ণু গ্রাম থেকে সকলে রাতারাতি উধাও হয়ে যায়। গ্রামের লোকেরা কোথায় গেলেন, কোনও হদিস নেই। তার পর থেকেই জয়সলমীরের কাছে কুলধারা গ্রামটি সকলে জানেন ‘ভূত-গ্রাম’ বলে। আশপাশের ৮৫টি গ্রামের ত্রিসীমানায় এখন কেউ ঘেঁষে না। নানা রকম গা ছমছমে কাণ্ড-কারবার না কি ঘটে সেখানে। গোটা রাত সেখানে কাটানো দায়। কখনও ছায়া দৌড়ে যায়, কখনও শোনা যায় অদ্ভূত সব শব্দ। বাচ্চাদের হাতের ছাপ দেখা যায় যত্রতত্র। মরু-রাজ্যে পর্যটন টানতে এ বারে ভূতেদের দর্শনই তুরুপের তাস।
পশ্চিমবঙ্গে নদী আছে, সমুদ্র আছে, পাহাড় আছে, জঙ্গল আছে, আছে ভুরি-ভুরি ঐতিহ্যও। তবু গোটা দেশের পর্যটন মানচিত্রে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি বাংলা। সেই তুলনায় রাজস্থানে পর্যটন মানে মরুভূমি, প্রাসাদ আর দুর্গ। তাই দিয়েই গোটা রাজ্যের বৃদ্ধির ১৪ শতাংশ পর্যটন থেকেই বের করে আনছে সরকার। বিদেশি পর্যটক টানার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই রাজস্থান। দিল্লি, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশের পরেই রাজস্থান। দিল্লি ও মুম্বইয়ে বিদেশি পর্যটক আসেন মূলত সেখানে বিমানবন্দরের কারণে। আর উত্তরপ্রদেশে পর্যটকেরা ভিড় করেন তাজমহল দেখার জন্য। এই বিষয়গুলি বাদ দিলে গোটা রাজস্থানই এখন সেরা।
আরও পড়ুন-খরার রাজ্যে জলের অপচয় আইপিএলে, অনলাইন যুদ্ধে কলেজ পড়ুয়া
সম্প্রতি ঘটা করে সপ্তাহব্যাপী রাজস্থান-দিবসও পালন হয়। জয়পুর ও দিল্লিতে। রাজ্যের পর্যটন সচিব শৈলেন্দ্র অগ্রবাল বলেন, সম্প্রতি রাজ্যে পর্যটন শিল্পের বিস্তারের জন্য ১৫৬টি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হয়েছে। যাতে ৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। অনেকে ভাবেন এ রাজ্যে শুধুই মরুভূমি। কিন্তু তা নয়। এখানে অনেক হ্রদও রয়েছে। জল নিয়েও নতুন ভাবনা রয়েছে সরকারের। আগামী দিনে মরুভূমির রাজ্যে ‘ওয়াটার অ্যাডভেঞ্চার’ও বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে চলেছে। আর কুলধারার গ্রামটি গড়া হচ্ছে নতুন করে। রাজস্থান সরকার সেই গ্রামটি অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। যে ভাবে গ্রামটি তৈরি হয়েছিল, সেই বৈশিষ্ট্যই রাখা হচ্ছে হুবহু।
পালিওয়ার ব্রাহ্মণেরা ১২৯১ সালে এই কুলধারা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। মরুভূমিতেও তাঁরা গম চাষ করতেন। লোকমুখে প্রচলিত, সেই সময় জয়সলমীরের ‘দিওয়ান’ সলিম সিংহ কুলধারা গ্রামের প্রধানের মেয়ের প্রেমে পড়েন ও তাঁকে বিয়ে করতে চান। বিয়ে না দিলে বড় মাপের খাজনা আরোপের হুমকিও দেন। কিন্তু কুলধারা ও আশপাশের প্রায় ৮০টি গ্রামের লোকেরা মিলে এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। তার পর হঠাৎই এক দিন রাতারাতি সেই গ্রামের লোকেরা উধাও হয়ে যান। কোথায় যান, তার কোনও হদিস নেই। লোকেরা বলেন, সেই গ্রামের লোকেদের ভূত এখনও ঘুরে বেড়ায় এ গ্রামে।