একই দিনে কূটনীতিতে জোড়া সাফল্য পাওয়ার দাবি করল বিদেশ মন্ত্রক।
আজ ভারতের সঙ্গে সামরিক বোঝাপড়া বাড়াতে নতুন নীতি তৈরির সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। একই সঙ্গে পাকিস্তানের পক্ষে আমেরিকার থেকে প্রতিরক্ষা খাতে অর্থ সাহায্য পাওয়া আরও কঠিন করে দিল। এ বার আমেরিকার থেকে অর্থসাহায্য পেতে গেলে পাকিস্তানকে আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিরক্ষাসচিবের ছাড়পত্র জোগাড় করতে হবে। তিনি যদি বলেন, পাকিস্তান আমেরিকার তালিকায় থাকা কোনও সন্ত্রাসবাদীকে অর্থ বা গোলাগুলি দিয়ে সাহায্য করছে না, তা হলেই ইসলামাবাদ সাহায্য পাবে। নচেৎ নয়।
এই দু’টিকেই নিজেদের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লি। কারণ, মার্কিন কংগ্রেস আজ ভারতের সঙ্গে যে সামরিক সমঝোতা নীতিতে সিলমোহর বসিয়েছে, তার অর্থমূল্য প্রায় ৬২ হাজার কোটি ডলার। অন্য দিকে পাকিস্তান আমেরিকার থেকে অর্থ ও সামরিক সাহায্য পেয়ে তা যে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে কাজে লাগাচ্ছে, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব নয়াদিল্লি। এপ্রিলে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার দিল্লিতে এসেছিলেন। সে সময়েও নয়াদিল্লির তরফে তাঁকে বোঝানো হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক মার্কিন সফর এবং
ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকেও এই বিষয়টি জানানো হয়।
মার্কিন কংগ্রেসে আজ মূলত তিনটি আইন সংশোধন করেছে। শর্ত চাপানো হয়েছে, পাকিস্তানকে আরও মার্কিন সাহায্য পেতে হলে প্রমাণ করতে হবে যে সার্বিক ভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। এখন শুধুমাত্র হাক্কানি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের উপরে এমন শর্ত রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্য টেড পো মন্তব্য করেন, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতা বন্ধ করতেই মার্কিন কংগ্রেস একটি পদক্ষেপ করল।’’ পাকিস্তানকে কুখ্যাত মার্কিন সেনাপতি বেনেডিক্ট আর্নল্ডের সঙ্গেও তুলনা করেন পো। যিনি আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ে নিজের দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটেনকে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর যুক্তি, পাকিস্তান এমন সন্ত্রাসবাদীদের মদত দিচ্ছে, যারা আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে কর্মরত মার্কিন নাগরিকদের নিশানা করছে।
পো এবং ডেমোক্র্যাট নেতা রিক নোলান এর আগেও পাকিস্তানকে ন্যাটো-বহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ শরিকের খেতাব দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। ২০০৪-এ জর্জ জব্লিউ বুশের আমলে এই খেতাব পেয়েছিল পাকিস্তান। পো-নোলানের যুক্তি ছিল, পাকিস্তান মার্কিন সাহায়্য পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। নয়াদিল্লির কর্তাদের যুক্তি, আফগান গুপ্তচর সংস্থার প্রাক্তন প্রধান রহমতুল্লা নাবিল গোপন নথি প্রকাশ করে দেখিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য দেওয়া অর্থ আইএসআই-কে দেওয়া হচ্ছে। যা তারা সন্ত্রাসে মদতে খরচ করছে।
ভারতের সঙ্গে সামরিক সমঝোতার ক্ষেত্রে বিলটি মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য অ্যামি বেরা। তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকা বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র আর ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সমঝোতার আরও অগ্রগতির জন্য একটি রণকৌশল তৈরি করা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।’’ আজ ধ্বনি ভোটেই এই নীতি পাশ হয়ে গিয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটে ছাড়পত্রের পরে এই নীতিতে স্বাক্ষর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার পরে নীতিটি ১ অক্টোবর থেকে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট-২০১৮’ হিসেবে কার্যকর হবে। ছ’মাসের মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব ও বিদেশসচিব মিলে এই রণকৌশলের খুঁটিনাটি তৈরি করবেন।