ঈশ্বর কে, আরটিআই প্রশ্নে থতমত সরকার

ভূমিকম্পে দোকান নষ্ট হয়েছিল। ‘‘অ্যাক্ট অব গড’’ বলে টাকা দিতে চায়নি বিমা সংস্থা। তাই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ‘‘ওহ মাই গড’’ ছবির কাঞ্জিলালজি মেটারূপী পরেশ রাওয়াল। প্রেক্ষিত ভিন্ন হলেও বাস্তবে ঈশ্বরকে আইনের প্যাঁচে টেনে আনলেন এক ব্যক্তি। আর তার জবাব দিতে হিমশিম খেল আইন মন্ত্রক।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলা! ‘ওহ মাই গড’ ছবির একটি দৃশ্যে।

ভূমিকম্পে দোকান নষ্ট হয়েছিল। ‘‘অ্যাক্ট অব গড’’ বলে টাকা দিতে চায়নি বিমা সংস্থা। তাই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ‘‘ওহ মাই গড’’ ছবির কাঞ্জিলালজি মেটারূপী পরেশ রাওয়াল। প্রেক্ষিত ভিন্ন হলেও বাস্তবে ঈশ্বরকে আইনের প্যাঁচে টেনে আনলেন এক ব্যক্তি। আর তার জবাব দিতে হিমশিম খেল আইন মন্ত্রক।

Advertisement

ভারতে ঈশ্বরের নামে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী-সহ শীর্ষ সাংবিধানিক পদাধিকারী ও জনপ্রতিনিধিরা। সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে শ্রদ্ধানন্দ যোগাচার্য নামে এক ব্যক্তি জানতে চান, এই ঈশ্বর কে। আর্জিটি গিয়েছিল রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘুরে সেটি যায় আইন মন্ত্রকে।

সরকারের কাছ থেকে উপযুক্ত জবাব না পেয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে যান শ্রদ্ধানন্দ। ভিডিও কনফারেন্সে আইন মন্ত্রকের এক অফিসার শ্রদ্ধানন্দকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, সংবিধানে ‘‘ঈশ্বর’’ শব্দের অর্থ স্পষ্ট করা নেই। সরকারি রেকর্ডে যে তথ্য নেই তা তথ্যের অধিকার আইনে জানানো যায় না।

Advertisement

জবাবে খুশি হননি শ্রদ্ধানন্দ। তখন মুখ্য তথ্য আধিকারিক এস কে চিটকারা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘‘সত্য’’, ‘‘ধর্ম’’, ‘‘জাতি’’ শব্দগুলির অর্থ সংবিধানে বলা নেই। তাই এ নিয়ে তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। শ্রদ্ধানন্দ জাতীয় স্মারক চিহ্নের নীচে থাকা ‘‘সত্যমেব জয়তে’’ শব্দটির অর্থও জানতে চেয়েছিলেন। চিটকারা তাঁকে জানান, ওই শব্দটি সংবিধানের কোনও ধারার অন্তর্ভুক্ত নয়। সত্য, ন্যায়, জাতি শব্দের অর্থ বোঝানোর কথা শিক্ষক বা আচার্যদের। তথ্যের অধিকার আইনে তা জানানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া কিছু কিছু শব্দ আদালতের রায়েও ব্যবহার করা হয়। সেগুলি রায়ের বিষয়বস্তুর প্রেক্ষিতে বুঝতে হয়।

এই সওয়ালের মাঝে তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচারুলু শ্রদ্ধানন্দকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি নিজে ঈশ্বর বা সত্যের সংজ্ঞা দিতে পারবেন?’’ শ্রদ্ধানন্দ পারেননি।

শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধানন্দের আর্জি বাতিল করে শ্রীধর আচারুলু বলেন, ‘‘আবেদনকারী বুঝতে পারছেন না, তিনি যা চাইছেন তা হল জ্ঞান। তথ্য ভিন্ন বস্তু। দর্শন বা ঈশ্বরচিন্তা ব্যাখ্যা করা তথ্য আধিকারিকের কাজ নয়। আবেদনকারী সরকারি দফতরের প্রচুর সময় নষ্ট করেছেন।’’

কড়া ভাষায় আচারুলু বলেন, ‘‘এমন আর্জি সমাজের কোনও কাজে লাগে না।’’ সেই সঙ্গে আবেদনকারীকে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যোগচার্যের মতো বড় নামের মানুষের এমন ফাঁপা আর্জি করা উচিত নয়। সত্য, ঈশ্বর, ধর্মের কথা জানতে গেলে তিনি উপযুক্ত গুরুর সন্ধান করুন। নিজের অজ্ঞতা দূর করুন।’’

‘‘ওহ মাই গড’’ ছবিতে শেষ পর্যন্ত কাঞ্জিলালজিকে সাহায্য করতে এসেছিলেন খোদ ঈশ্বর। এই আর্জির জবাব দিতে গিয়ে সরকারি অফিসারেরা ঈশ্বরকে স্মরণ করেছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন