নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
উরিতে সেনা দফতরে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দায় মুখর হল গোটা দেশ। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের সভানেত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী— সব মহল তীব্র নিন্দা করল এই জঙ্গি হানার। রাষ্ট্রপতি বললেন, এ ভাবে ভারতের মাথা নত করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার, ষড়যন্ত্রীদের এক জনও রেহাই পাবে না।
রবিবার ভোর রাতে যখন হামলা হয়েছে উরির সেনা সদর দফতরে, তখন ডিউটি বদল হচ্ছিল। নাইট ডিউটিতে থাকা দল ব্যারাকে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছিল, সকালের ডিউটিতে আসা জওয়ানরা কাজ বুঝে নিচ্ছিলেন। সেই সময়ে একের পর এক গ্রেনেড হামলা শুরু হওয়ায় সামাল দিতে একটু সময় লেগে যায়। কিন্তু দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে সেনাবাহিনী। ছ’ঘণ্টার লড়াইতে ৪ হামলাকারীরই মৃত্যু হয়। কিন্তু তত ক্ষণে ১৭ জওয়ানেরও মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের খবর, ৪ জওয়ান জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইতে প্রাণ হারান। কিন্তু বাকি ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বিস্ফোরণের জেরে তাঁবুতে আগুন লেগে যাওয়ায়।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় হামলার কঠোর নিন্দা করে বলেন, ‘‘এই ধরনের আক্রমণ করে ভারতের মাথা নোয়ানো যাবে না, সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের সব দুরভিসন্ধি আমরা ব্যর্থ করব।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘আমি গোটা জাতিকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, যারা এই জঘন্য হামলার পিছনে রয়েছে, তাদের সাজা দেবই।’’
বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব দলের তরফ থেকে সুর আরও চড়িয়ে বলেন, ‘‘একটা দাঁতের বদলা গোটা চোয়াল। তথাকথিত কৌশলগত সংযমের দিন শেষ।’’
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর তরফেও এ দিন উরির ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘এই হামলা আমাদের জাতির বিবেকের উপর শোচনীয় আঘাত।’’
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উপত্যকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর এবং সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ।
রবিবার রাশিয়া সফরে রওনা হওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। কিন্তু উরিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে তিনি রাশিয়া সফর বাতিল করে দেন। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে রাজনাথ সিংহ পাকিস্তানকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘‘পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র এবং সেই হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া উচিত।’’ রাজনাথ আরও বলেন, ‘‘ক্রমাগত ভাবে এবং সরাসরি পাকিস্তান যে ভাবে সন্ত্রাসকে এবং সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন দিয়ে চলেছে, তাতে আমি গভীর হতাশা ব্যক্ত করছি।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে সেনাঘাঁটিতে হামলাকারী ৪ জঙ্গি খতম, নিহত ১৭ জওয়ান
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও উরি হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতেই উরিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।’’ এই হামলার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মেহবুবাও।
উরির সেনা সদর দফতরে হামলার খবর পেয়েই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরকে উপত্যকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পর্রীকর তো বটেই, সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগও কাশ্মীর পৌঁছন। সেখানে গিয়ে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। জইশ-ই-মহম্মদ এই হামলার পিছনে রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। মৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে প্রচুর ভারী আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক মিলেছে। যে সব অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতে পাকিস্তানের ছাপ রয়েছে বলেও সেনা সূত্রের খবর।
আমেরিকাও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মা বলেছেন, ‘‘আমরা এই সন্ত্রাসবাদী হামলার কঠোর নিন্দা করছি। যে বীর সৈনিকরা প্রাণ দিলেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।’’