ভারতে সফররত চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিঙের সঙ্গে আগামী কাল বৈঠক করবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এমনকী কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীও থাকতে পারেন সেই বৈঠকে। কিন্তু সেই বৈঠকের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের চিন নীতি ও বেজিং সম্পর্কে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুরনো কিছু মন্তব্য নিয়ে দলগত ভাবে কংগ্রেস এবং দলের কিছু নেতা যে ভাবে ময়দানে নেমেছেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই প্রবল মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতাদের একাংশের মতে, সওয়া শতাব্দী প্রাচীন একটি জাতীয় দলের কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। চিনা প্রেসিডেন্ট যখন এ দেশে এসেছেন, তখন এই নেতিবাচক রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারত কংগ্রেস।
কেন্দ্রে মোদী সরকারের একশো দিন পূর্ণ হওয়ার পর বিজেপির সমালোচনা করে গত কাল একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ জমানায় যত বারই লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তত বারই সিংহ গর্জন করেছেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন, “ভারতের বিদেশমন্ত্রীর উচিত চিনে গিয়ে তাদের আচরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। লাল চোখ দেখিয়ে চিনকে সমঝে দেওয়া উচিত।” কংগ্রেসের বক্তব্য, চিনা অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করেই কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ সরকারকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে ভোটে প্রচার করেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই বিজেপি-ই কেন্দ্রে সরকার গঠনের পর একাধিক বার চিনা অনুপ্রবেশ ঘটলেও ঠুঁটো হয়ে বসে আছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, কেন বা বিজেপি চিনকে লাল চোখ না দেখিয়ে ‘মোদী চিনি’ ভাই ভাই করছে?
শুধু পুস্তিকা প্রকাশ নয়, আজ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, “ভোটের আগেও চিন সম্পর্কে কতই না হাঁকডাক করেছে বিজেপি! লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই তাদের হাবভাব বদলে গিয়েছে।” অন্য দিকে যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতা রাজীব সতব বলেন, “সীমান্তে ভারতীয় জওয়ান মারা যাচ্ছেন আর প্রধানমন্ত্রী চিনা প্রেসিডেন্টকে ডেকে ধোকলা খাওয়াচ্ছেন! এই তা হলে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির নমুনা?” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “চিনা প্রেসিডেন্টের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে উত্তর-পূর্বের কোনও লোক যাতে না থাকেন, তার ব্যবস্থা গত কাল করা হয়েছিল। আজ দিল্লিতে উত্তর-পূর্বের মানুষদেরই দেখা যাচ্ছে না! জোর করে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু কংগ্রেস ও দলের কিছু নেতার এই ধরনের মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই মতান্তর চরমে। দলের বর্ষীয়ান এক নেতা বলেন, “কংগ্রেসের নীতি নির্ধারণে অপরিণত বুদ্ধির নেতাদের সংখ্যা বাড়ছে! চিন সম্পর্কে মোদীর মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করতেই পারে। কিন্তু তার সময় এটা নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার সময়ও নয়। কারণ চিনা প্রেসিডেন্ট যখন ভারতে সফররত, তখন দেশের বিদেশনীতি নিয়ে বিরোধীদেরও সরকারের পাশে থাকা উচিত। সরকার ও বিরোধী দল মিলে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় অবস্থান তুলে ধরা উচিত। কিন্তু তা না করে নেতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে নয়াদিল্লির অবস্থানই দুর্বল করছে কংগ্রেস।”
কংগ্রেস সূত্রে খবর, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার মতো নেতারাও দলের অবস্থানে খুশি নয়। এই প্রবীণ নেতাদের মতে সীমান্তে অনুপ্রবেশের বিষয়টি কাল উত্থাপন করা উচিত সনিয়ার। সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে শান্তি বজায় রাখা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসারে আলোচনা করা উচিত। কিন্তু চিনফিঙেয়ের সফরের সময় মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেস যে রাজনীতি করছে, তা আগামিকালের বৈঠকের তাৎপর্য লঘু করে দিতে পারে। সূত্রের খবর, এ নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রীর দৃষ্টিও আজ আকর্ষণ করেন দলের বর্ষীয়ান কিছু নেতা।