রাজ্যসভায় অঙ্ক মেলাতে সৌজন্যে ভরসা মোদীর

অধিবেশন শুরু হতেই নিজের আসন ছেড়ে সটান মুলায়ম সিংহ যাদবের কাছে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। মুলায়মের জন্মদিন গেল দু’দিন আগে। আজ সাক্ষাতে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগটি হাতছাড়া করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনীতিতে এই ধরনের সৌজন্য নতুন নয়। কিন্তু সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে যখন অনেকগুলি বিল পাশ করানোর দায় রয়েছে সরকারের, উল্টো দিকে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দল সরকারের সংস্কারের বিলগুলির বিরোধিতায় একজোট হচ্ছে, তখন রাজ্যসভায় অঙ্ক মেলাতে পুরনো শরিক শিবসেনাকে পাশে রেখে চলার কৌশল নিতে হচ্ছে বিজেপিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

অধিবেশন শুরু হতেই নিজের আসন ছেড়ে সটান মুলায়ম সিংহ যাদবের কাছে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। মুলায়মের জন্মদিন গেল দু’দিন আগে। আজ সাক্ষাতে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগটি হাতছাড়া করলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

রাজনীতিতে এই ধরনের সৌজন্য নতুন নয়। কিন্তু সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে যখন অনেকগুলি বিল পাশ করানোর দায় রয়েছে সরকারের, উল্টো দিকে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দল সরকারের সংস্কারের বিলগুলির বিরোধিতায় একজোট হচ্ছে, তখন রাজ্যসভায় অঙ্ক মেলাতে পুরনো শরিক শিবসেনাকে পাশে রেখে চলার কৌশল নিতে হচ্ছে বিজেপিকে। এরই পাশাপাশি মুলায়মের প্রতি মোদীর সৌজন্যও রাজনৈতিক ভাবে অর্থবহ। সংসদের অধিবেশন মসৃণ করার লক্ষ্যেও প্রাথমিক ভাবে সৌজন্যেই আস্থা রাখতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। অধিবেশনের শুরুতেই তাই আজ বিরোধীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, “আমার বিশ্বাস সংসদে আমরা যে সব বন্ধুরা বসি, তাঁরা একজোট হয়ে কাজ করব। মানুষ আমাদের বিপুল জনমত দিলেও দেশ চালানোর দায়িত্ব সকলের। শান্ত মন ও ঠান্ডা পরিবেশে নতুন অধিবেশনে কাজ করতে হবে আমাদের।”

কিন্তু মোদী চাইলেই কি তা হবে? প্রয়াত কয়েক জন সাংসদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সংসদ মুলতুবি হলেও কাল থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কোমর কষে নামছে বিরোধীরা। লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সরকারের দুর্বল জায়গাটা রাজ্যসভা। তাই সেখানেই বিরোধীরা বেশি করে চেপে ধরতে চাইছে সরকারকে। আগামিকালই তৃণমূলের সাংসদরা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে রাজ্যের বরাদ্দ কমানোর প্রতিবাদে ও কালো টাকা দেশে ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাবেন সংসদ চত্বরে। এ দিন কালো টাকা নিয়ে সংসদে মুলতুবির নোটিসও দেবে তৃণমূল। দলের সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েনের বক্তব্য, মুলায়ম, নীতীশ মায় বামেরাও পাশে রয়েছেন। সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেসও। অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধী জোট শক্ত করে সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরির মহড়াটি সেরে ফেলতে চাইছে এই দলগুলি।

Advertisement

কিন্তু সরকারের অগ্নিপরীক্ষা হবে সংস্কার সংক্রান্ত বিলগুলি পাশ করানো। রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই বিমা বিলটি পাশ করিয়ে নিতে চেয়েছিল সরকার। লোকসভায় ভাল ভাবে উতরে গেলেও বিলটি আটকে যায় রাজ্যসভায়। বিরোধীদের চাপে গড়তে হয় সিলেক্ট কমিটি। তার দুই সদস্য কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ায় তাঁদের বদলে নতুন দু’জনকে কমিটিতে সামিল করতে হবে। ফলে কিছুটা পিছোতে পারে রিপোর্ট পেশ। তবু সরকার প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল অতিথি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আসার আগে বিলটি পাশ করিয়ে নিতে চাইছে। বিরোধীদের লক্ষ্য, বিল পাশ পিছিয়ে দেওয়া।

যদিও মোদী সরকারের এক মন্ত্রী এ দিনও বলেছেন, “বিমা বিল, জমি বিল, পণ্য ও পরিষেবা করের মতো বিলগুলি সবই কংগ্রেসের জমানায় আনা হয়েছিল। রাজ্যসভায় এক বার যদি কংগ্রেস এই সব বিল সমর্থন করতে রাজি হয়ে যায়, তা হলে কোনও সমস্যা হবে না।”

শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে হাজির তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল (বাঁ দিকে)
এবং বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: পিটিআই

কিন্তু কংগ্রেস কী অবস্থান নেবে?

দলের নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, তাদের জমানায় আনা বিল সমর্থন করতে তাঁদের অসুবিধা নেই। কিন্তু মুখে এ কথা বললেও, যদি দেখা যায় অন্য বিরোধী দলগুলি সরকারকে কিছুটা বিপাকে ফেলতে পারছে, কংগ্রেস তখন মোদীকে বেগ দিতে বেসুরো গাইতেই পারে। কারণ, বিরোধী আসনে থাকতে বিজেপি এই বিলগুলিরই বিরোধিতা করেছিল। এ বার কংগ্রেসের পাল্টা জবাব দেওয়ার পালা। যে কারণে বাধা দেওয়া হবে শ্রম সংস্কারের মতো বিলকেও, যেটি এই সপ্তাহেই নিয়ে আসতে চায় সরকার। কংগ্রেস আরও পর্যালোচনার দাবি তুলে বিলগুলি ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নিতে পারে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিঙ্ঘভি আজ তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিমা বা পণ্য-পরিষেবা কর বিলে সমর্থনের প্রশ্নে কোনও ব্ল্যাঙ্ক চেক কংগ্রেস দিচ্ছে না। কারণ, বিলগুলির খুঁটিনাটিতেই আসল সমস্যা লুকিয়ে থাকে।”

এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের হাতে থাকবে কোন অস্ত্র?

রাজ্যসভায় যদি বিলগুলি আটকে যায়, সে ক্ষেত্রে সরকারের হাতে শেষ ব্রহ্মাস্ত্র হল সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে সেগুলি পাশ করানো। কিন্তু হিসেব বলছে, সেখানেও শিবসেনার মতো শরিক পাশে না থাকলে হাত পাততে হবে জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়ক, মায়াবতী, মুলায়মের মতো নেতাদের কাছে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে তার রাস্তাও খুলে রাখার একটা চেষ্টা চালালেন মোদী। তবে মায়াবতী এখনও নিজের তাস দেখাননি। দুর্দিনে বিজেপি পাশে না থাকায় জয়ললিতাও এখন একটু বেঁকে বসতে শুরু করেছেন।

এই অবস্থায় শিবসেনাকে সঙ্গে রাখার কৌশল নিচ্ছেন মোদী, অমিত শাহরা। বিজেপি তাই মহারাষ্ট্রে শিবসেনাকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার আশা জিইয়ে রাখছে। শিবসেনার যে নেতা কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার জন্য দিল্লি বিমানবন্দর পর্যন্ত এসেও উদ্ধব ঠাকরের নির্দেশে ফিরে গিয়েছিলেন, সেই অনিল দেশাই আজ বলেন, “অরুণ জেটলির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ না পেলেও মহারাষ্ট্রে কোন কোন ওজনদার মন্ত্রক শিবসেনাকে দেওয়া যায়, তা নিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন