বরাক উপত্যকার উন্নয়নের প্রধান বাধা বেহাল সড়ক। আজ বিধানসভায় এই প্রসঙ্গ তুলে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ জানান, বরাকে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা শোচনীয়। করিমগঞ্জে গিয়ে আটকে পড়েছিল রাজ্যপালের গাড়ি। তিনি দিল্লিতে গিয়ে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রীকে অভিযোগও জনিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও বরাকের সড়ক উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ কমানো হয়েছে। কমলাক্ষবাবু দাবি করেন, পরিবর্তনের কথা বলা নতুন সরকার শুধু ‘আগের সরকার কাজ করেনি’ বলে নালিশ ঠুকলে হবে না। পরিবর্তন এনে দেখাতে হবে।
জবাবে বরাকেরই বিধায়ক, পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য আশ্বাস দেন, এক বছরের মধ্যে বরাকের সড়কে পরিবর্তন চোখে পড়বে। তিনি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘আগের সরকার ভোট টানতে ১ হাজার কোটির প্যাকেজ বরাককে দিলেও তার মধ্যে গত পাঁচ বছরে এসেছে মাত্র ১১১ কোটি টাকা। আগের মন্ত্রী-বিধায়কদের পছন্দের ঠিকাদার ও সমর্থকদের অত্যাচারেই এগোয়নি কাজ। কাজ ফেলে পালিয়েছে একটি নির্মাণ সংস্থা।’’ মন্ত্রীর অভিযোগ, বরাকের বিধায়করা গত ১৫ বছর ধরে সেখানকার রাস্তা সারানোর দাবি জানিয়ে পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব পেয়েছিলেন— ‘বরাকের মাটি নরম তাই রাস্তা সারানো যায় না।’
পরিমলবাবু জানান, সরকার গঠনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল নিজে বরাকে গিয়ে পূর্ত বিভাগের আমলা-কর্তা ও বিধায়কদের নিয়ে সড়ক উন্নয়নের বিষয়ে বৈঠক করেন। ইতিমধ্যে সব বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ৫ কোটি টাকার আগাম বরাদ্দ বাবদ ৬০০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। রাজ্য সড়কের উন্নয়নে কেন্দ্র ৮০০ কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়েছে। তার মধ্যে ৫৬০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুধুমাত্র বরাকে রাস্তা উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে। পথ মেরামতির জন্য আগাম বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সড়ক তহবিলে চারটি সড়ক প্রকল্পের টেন্ডার ডাকা হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের অধীনে দুটি প্রকল্পের জন্য ১৩৬ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য। তিনি জানান, ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে রাজ্যে ১ হাজার কিলোমিটার পাকা পথ ও ৩০০টি পাকা সেতু করার লক্ষ্য রেখেছিল রাজ্য। তার মধ্যে ৬৭০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১০৬টি সেতু তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
পরিমলবাবুর তথ্য অনুসারে, বরাকে জাতীয় সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৩৩০.২২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে নতুন ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের জিরিঘাট থেকে সুতারকান্দি পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ৩০ কিলোমিটার সুগম। বাকি ৩৭.৫৪৫ কিলোমিটার সারাইয়ের কাজ চলছে। ৪৬.৮১৯ কিলোমিটার সড়ক মেরামতির টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। মদুরামুখ থেকে কাচিপুর পর্যন্ত ২৩.৮২ কোটি টাকার কাজের অনুমোদন মিলেছে। এ মাসেই কাজ শুরু হবে। শিলচর বাইপাস ও বরাক সেতুর কাজও চলছে।
নতুন ৮ নম্বর জাতীয় সড়কে করিমগঞ্জ থেকে চুরাইবাড়ি পর্যন্ত ৫৭.০৫৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে চুরাইবাড়িকে নিয়ে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা সারিয়ে চলাচলযোগ্য করা হয়েছে। করিমগঞ্জ বাইপাস ও ৩৭,৮ ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মোট ৩৪.৫১৯ কিলোমিটার রাস্তা সারানোর টেন্ডার ডাকা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ৩.৫৫ কিলোমিটার
সারানো হয়েছে। পাথারকান্দি বাইপাস ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে কাজ শুরু হয়েছে। চুরাইবাড়িতে ৩১ কিলোমিটার রাস্তার কাজের জন্য আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন ভাবে কাজ শুরুর জন্য কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রকে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
৬ নম্বর জাতীয় সড়কে মালিডর থেকে ভৈরবী পর্যন্ত ১১৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৮৯ কিলোমিটার চলাচলযোগ্য। কালাইন থেকে দিঘরখাল ও মালিডর থেকে বদরপুরের ১৮.২৭৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলছে। দিঘরখাল থেকে লক্ষ্ণীবন্দরের ১১ কিলোমিটার রাস্তা সাময়িক মেরামতি শুরু হয়েছে। ধলেশ্বরী ও কাটলিচেরা বাইপাসেরও কাজ চলছে।
৩০৬ নম্বর জাতীয় সড়কের শিলচর-লাইলাপুল পর্যন্ত ৪০.৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ১১ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করা ও সোজা করার কাজ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রক ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য ৩২৮.১২ টাকা, ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য ১৭৬.১৯ কোটি টাকা, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য ২১০.০৪ কোটি টাকা ও ৩০৬ নম্বর জাতীয় সড়কের জন্য ২৮.২৮ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রী ভরসা দেন, চলতে থাকা কাজগুলি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বরাকে নতুন করে ২৯২ কিলোমিটার পথ জাতীয় সড়ক হিসেবে ঘোষণার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রক তা মেনে নিয়েছে।
পরিমলবাবু বলেন, ‘‘আগের আমলে বরাকে ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। ছিল প্যাকেজের বিরাট প্রতিশ্রুতি। মানুষ অনেক আশা করেছিলেন। কিন্তু
কাজ কিছুই হয়নি। কিন্তু আমরা আট মাসের মধ্যে বরাককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’’