মহা ধূমধাম করে গুয়াহাটিতে মেট্রোরেল প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। বলা হয়েছিল, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরেই শুরু হয়েছে কাজ। জমি সমীক্ষার পরেই খুঁটি পোঁতার কাজও শুরু হবে। কিন্তু রাজ্যবাসীকে অবাক করে বিধানসভায় মেট্রোরেল সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে নতুন সরকার জানাল, গুয়াহাটিতে মেট্রোরেলের কোনও প্রকল্পই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার অনুমোদন করেনি! বিতর্কের মধ্যে পড়ে আপাতত বিশ বাঁও জলে গুয়াহাটির মেট্রোরেলের ভবিষ্যৎ।
গুয়াহাটিতে মেট্রোরেল তৈরির দাবি অনেক দিনের। তরুণ গগৈ ২০১৪-তে জানিয়েছিলেন মেট্রোরেল আসছে শহরে। তৈরি হয়েছে ২০৩ কিলোমিটারের মাস্টার প্ল্যান। রাইটস-এর সঙ্গে এ নিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ মে চুক্তিও হয়েছে। ২০১৫ সালের শেষে সরকার জানায়, কেন্দ্রের সম্মতি মিলেছে। গুয়াহাটিতে শুরু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজ। পাওয়া গিয়েছে মন্ত্রিসভার সম্মতিও।
এই বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মেট্রো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জানান, প্রথম পর্যায়ে চারটি রুটে ৬১.৪ কিলোমিটার লাইনে ট্রেন চলবে। থাকবে ৫৪টি স্টেশন। প্রতি ট্রেনে বহন করা যাবে ৯৭৫ জন যাত্রী। চারটি রুট হবে—ধারাপুর থেকে নারেঙ্গি, এমজি রোড থেকে খানাপাড়া (মাটির তলা দিয়ে), জালুকবাড়ি থেকে খানাপাড়া ও আইএসবিটি থেকে পল্টনবাজার। জানানো হয়, মেট্রোরেল তৈরির বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে গুয়াহাটি মেট্রোরেল কর্পোরেশন লিমিটেড গড়া হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে পুরো প্রকল্পের খরচ ধরা হয় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। চাঁদমারি, জালুকবাড়িতে স্তম্ভ তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষাও শুরু হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগে এত সমারোহে কাজ শুরু হলেও নির্বাচনে কংগ্রেস সরকারের পতনের পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বিধানসভায় হাজোর কংগ্রেস বিধায়ক রেকিবুদ্দিন আহমেদ গুয়াহাটি মেট্রোর চারটি সীমা ও মোট খরচ জানতে চেয়ে প্রশ্ন তোলেন। সরকারের জবাব সকলকে চমকে দেয়। গুয়াহাটি উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, গুয়াহাটিতে মেট্রোরেলের কোনও প্রকল্প কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার অনুমোদনই করেনি। তাই তার সীমা নিয়ে কোনও আলোচনা সম্ভব নয়। প্রশ্ন ওঠে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তর কথা বলে, কেন্দ্রীয় অনুমোদনের কথা জানিয়ে, এত সমারোহে মেট্রো-প্রকল্প উদ্বোধন করা কি তবে নিছকই গগৈ সরকারের ‘নির্বাচনী চমক’ ছিল?
প্রশ্নের মুখে জর্জরিত হন আগের মন্ত্রিসভার কংগ্রেস সদস্যরা। এ নিয়ে কথা বলতে চাননি প্রাক্তন মন্ত্রী তথা গগৈয়ের ডান হাত হিসেবে পরিচিত রকিবুল হুসেন। খোদ গগৈ আছেন আমেরিকায়। দলের তরফে বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া সরকারের উত্তরকে পাশ কাটিয়ে বলেন, ‘‘আগের ইউপিএ সরকার ১৭টি রাজ্যে দ্রুত পরিবহণ প্রকল্পের জন্য ওই প্রকল্প মঞ্জুর করেছিল। টাকাও বরাদ্দ করেছিল। সেই মতোই মেট্রোরেলের প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরু হয়। বর্তমান সরকার এমন কোনও প্রস্তাব নেই বলে জানিয়ে মিথ্যাচার করছে।’’ কিন্তু সরকার জানিয়েছে, এ নিয়ে মন্ত্রিসভার অনুমোদনই হয়নি। তা হলে কী ভাবে এত ঘটা করে প্রকল্প ঘোষণা করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়? স্পষ্ট জবাব মেলেনি শইকিয়ার কাছে। তদানীন্তন পূর্ত ও গুয়াহাটি উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অজন্তা নেওগ জানান, কেন্দ্রীয় অনুমোদনের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার মেট্রোর কাজ শুরু করে। এ নিয়ে টেন্ডার ডেকে একটি সংস্থাকে জমি সমীক্ষার কাজও দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই ভিত্তিপ্রস্তার স্থাপন করেন গগৈ। তিনিও মেনে নেন, মেট্রো প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
বিজেপির তরফে এই ঘটনার নিন্দা করে বলা হয়, শুধুমাত্র নির্বাচনে চমক দিতে কেন্দ্র বা রাজ্যের অনুমোদন ছাড়াই মেট্রোরেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে রাজ্যবাসীকে ঠকিয়েছেন গগৈ। এই পরিস্থিতিতে নতুন সরকার কী ফের গুয়াহাটি মেট্রো-প্রকল্প নিয়ে উদ্যোগী হবে? রাজ্য সরকারের বক্তব্য, এখনও তেমন কোনও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়নি।