কেন্দ্রের নোট বাতিল ঘোষণার পর বাড়িতে ছিল ছ’টা পুরনো ৫০০ টাকার নোট। কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকা দিনমজুর স্বামীর রেখে যাওয়া ওই তিন হাজার টাকাই ছিল তাঁর সংসার চালানোর সম্বল। সরকারি নির্দেশ মতো নোট বদলাতে কাছের ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের রাজিয়া। কিন্তু তিন বারের চেষ্টাতেও সেই চেষ্টা সফল হয়নি। দীর্ঘ লাইন ঠেলে যখনই কাউন্টারের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন, তখনই টাকা শেষের ঘোষণা। তিন তিনটে দিন একই ভাবে ফিরে আসতে হয়েছিল বাড়িতে। এ দিকে ঘরে থাকা যত্সামান্য টাকা শেষ। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রায় অনাহারে কাটতে শুরু করে দিন। শেষ পর্যন্ত আর পারেননি রাজিয়া। চরম হতাশায় চরম পথটাই বেছে নেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের গৃহবধূ। গায়ে আগুন দেন গত ২২ নভেম্বর। কয়েকদিন হাসপাতালে লড়াই করার পর মারা যান তিনি। রাজিয়ার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করল উত্তরপ্রদেশ সরকার। নোট বাতিল কাণ্ডের বলি রাজিয়াই প্রথম যাঁকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল।
রাজিয়ার স্বামী আকবর একটি কারখানার দিন মজুরের কাজ করেন। তিনি বলেন, “পর পর তিন দিন ব্যাঙ্কে গিয়েও টাকা বদলাতে পারেনি রাজিয়া। ব্যাঙ্কের কাছে পৌঁছে প্রতি বারই শুনেছেন, টাকা শেষ। ঘরে সব্জি কেনার টাকাও ছিল না। অনাহারে দিন কাটাচ্ছিল আমার চার ছেলেমেয়ে। চূড়ান্ত হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় রাজিয়া।”
রাজিয়ার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। পাশাপাশি এই ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ বার থেকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেছেন তিনি।
তবে রাজিয়াই প্রথম নয়। নোট বাতিল পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। তবে এর আগে কোনও ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়নি।
আরও পড়ুন: নোট নেই, ধন্দ বাড়াচ্ছে গোপনীয়তা