১৪ দিন-১৪ রাত পার করেও মহিলাদের ধর্না, সড়কেই সংসার

১৪ দিন, ১৪ রাত পেরিয়ে গিয়েছে। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শাহিন বাগ রাস্তা আটকে ধর্নায় বসছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১২
Share:

নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শাহিন বাগে ধর্না। ছবি: সংগৃহীত।

দিনরাত ধর্না। তারই মধ্যে মাদুর পেতে খুদেদের জন্য বসে আঁকো, রচনা লেখার প্রতিযোগিতা। শনিবার দুপুরের বিষয় ছিল, তুমি প্রধানমন্ত্রী হলে কী করবে? ছোট্ট মুসকান শাকিল লিখল, আমাদের সকলেরই উচিত গরিবকে সাহায্য করা। ঘর, খাবার, রোজগার, চাকরি— সব প্রয়োজন মেটাতে হবে।

Advertisement

১৪ দিন, ১৪ রাত পেরিয়ে গিয়েছে। নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শাহিন বাগ রাস্তা আটকে ধর্নায় বসছে। মহিলারা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন কোলের শিশুকে। স্কুল-পড়ুয়া থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সকলেই আছেন। পালা করে দিন-রাত ধর্না চলছে। কুয়াশা ঘেরা দিন, কনকনে শীতের রাতে পারদ নামতে নামতে দুই ডিগ্রির ঘরে। শাহিন বাগে কয়েকশো মহিলা রাস্তা ছেড়ে ওঠেননি।

দক্ষিণ দিল্লি থেকে নয়ডার প্রধান যোগসূত্র ছয় লেনের কালিন্দী কুঞ্জ রোড ১৪ দিন ধরে বন্ধ। দিল্লি পুলিশ বেগতিক দেখে মসজিদের ইমামদের দ্বারস্থ হয়েছে। মহল্লার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু লাঠি চালিয়ে ধর্নায় বসা মহিলাদের হঠাতে পারেনি। কারণ শাহিন বাগ হাতে পাথর তোলেনি। হিংসায় জড়ায়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: দাঙ্গাবাজরা সব হতভম্ব: আদিত্যনাথ

আইআইটি-বম্বের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার শারজিল ইমাম এখন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। শারজিল রোজ এসে ধর্নাকারীদের বোঝান, ‘‘কেউ পাথর হাতে তুলবেন না। কেউ গন্ডগোল করার চেষ্টা করলে এক কোণে নিয়ে যাবেন। মারবেন না। পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।’’

কেন এই ধর্না? স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা হাসিবার হাতের পোস্টারে রাহত ইন্দোরির কবিতা, ‘সভি কা খুন হ্যায় শামিল ইয়াহাঁ কি মিট্টি মে। কিসি কে বাপ কা হিন্দুস্তান খোড়ি হ্যায়!’ হাসিবা বলেন, ‘‘আমার স্কুলে তো খুব গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। বাপ-মা প্রায়ই ঠিকানা বদলায়। কেউ রিকশা বা ঠেলা চালায়। কেউ মুচি। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হলে কোথায় কাগজ পাবে?’’ আপনাদের দাবি কী? ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু আমাদের শাসকের তো খুব অহঙ্কার। আইন প্রত্যাহার না করুক, ওই যে মুসলিমদের বাদ দিয়েছে, মুসলিম শব্দটা যোগ করে দিক। তা হলেও হবে।’’

জামিয়ায় পুলিশের লাঠির পর থেকেই প্রতিবাদে বসেছিল শাহিন বাগ। প্রথমে ১০-১৫ জন। তার পর ৫০-১০০ পেরিয়ে এখন তা কয়েকশো। দিনের বেলা সংখ্যাটা কয়েক হাজারও ছুঁয়ে ফেলছে। রাতে পালা করে শাহিন বাগ, বাটলা হাউস, ওখলা, সুখদেব বিহার, নূরনগরের কয়েকশো মহিলা ধর্নায় বসছেন। ফতিমা বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে ওরা। তারপর লাঠি পেটা করেছে। তার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদেরও ওদের পাশে থাকতে হবে।’’

ঠান্ডায় দু’সপ্তাহ ধরে ধর্নায় বসে কারও বুকে সর্দি বসেছে। কারও জ্বর। স্বেচ্ছাসেবকরা শুক্রবার রাতে টুইটার-ফেসবুকে ডাক্তারদের আর্জি জানিয়েছিলেন। শনিবার দুপুরেই ফার্স্ট-এড সেন্টার খুলে ওষুধপত্র আসতে শুরু করেছে। রাস্তার পাশেই রান্নাঘর খোলা হয়েছে। জেএনইউ-জামিয়ার ছাত্রছাত্রীরা সেখানে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায়। কখনও নিরামিষ বিরিয়ানি, কখনও ম্যাগি, কখনও বা নিছক ডিম সেদ্ধ। সঙ্গে বড় বড় কেটলিতে চা। শাহিন বাগের সড়কেই এখন প্রতিবাদের সংসার।

দাবি মানবে সরকার? হাসিবা জবাব দেন, ‘‘ওরা ভয়ের রাজনীতি করছে। তাই ভরসা পাই না। হিন্দুদের ভয় দেখিয়েছে, ২০৫০-এ নাকি মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে। এ বার আইন এনে মুসলিমদের ভয় দেখাচ্ছে।’’ পাশে বসা প্রৌঢ়া ফতিমা বিবি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। ‘‘মোদীজি আর কত বার লাইনে দাঁড় করাবেন? একবার আধার, একবার পুরনো নোট, এ বার এনআরসি। আমরা কি পাগল না বেওকুফ?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন