কৌশলের ভুলেই মাওবাদী হানায় নিহত ১০ কম্যান্ডো

জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বসে হামলার ছক কষছে মাওবাদী নেতারা— এমন খবর পেয়ে গত কাল বর্ষার মধ্যেই গয়া-ঔরঙ্গাবাদ সীমানার ডুমুরিয়ার জঙ্গলে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটনা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

নিহত কোবরা জওয়ানদের শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সিআরপিএফের ডিজি। গয়ায়।

জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বসে হামলার ছক কষছে মাওবাদী নেতারা— এমন খবর পেয়ে গত কাল বর্ষার মধ্যেই গয়া-ঔরঙ্গাবাদ সীমানার ডুমুরিয়ার জঙ্গলে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। গোয়েন্দাদের মতে, এই কৌশলগত ভুল করারই মাসুল দিতে হয়েছে জওয়ানদের। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ১০ জন কোবরা কম্যান্ডো।

Advertisement

গত কালের মাওবাদী হামলার পর এ কথাই বলছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল নিরাপত্তাবাহিনীর উপরে যে কোনও সময়ে হামলা চালাতে পারে মাওবাদীরা। কারণ, জঙ্গিদের হাতে বড় অস্ত্রসম্ভার পৌঁছেছে। পাশাপাশি খবর মিলেছিল, মাওবাদীদের বিহার-ঝাড়খণ্ড স্পেশাল অ্যাকশন কমিটির বৈঠক হতে চলেছে ডুমুরিয়ার জঙ্গলে। সেখানে ওই জঙ্গি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজাদ, বিজয় যাদব ওরফে সন্দীপ-সহ কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাজির থাকতে পারেন। এরপরই সেখানে অভিযানের নীল-নকশা তৈরি করে কোবরা বাহিনী। তিন দিন আগে সিআরপি-র ডি়জি দুর্গা প্রসাদ ঔরঙ্গাবাদে এসে পরিস্থিতির খবর নেন। বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।

আহত জওয়ানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Advertisement

গত কাল নিরাপত্তা বাহিনীর সেই ছক বানচাল করে দেয় মাওবাদীরা। কেন ঘটল ওই ঘটনা? পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বর্ষার মরসুমে মাস তিনেক কার্যত ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ থাকেন জঙ্গিনেতারা। জঙ্গলে বৃষ্টির মরসুমে অঘোষিত সংঘর্ষবিরতি থাকে। মূলত, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যেই বেশিরভাগ বড় হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রয়োজনীয় রসদ জোগাড় করে বর্ষার সময়ে জঙ্গল লাগোয়া প্রত্যন্ত কোনও গ্রামে থাকে জঙ্গিরা। বৃষ্টি শেষ হলে জঙ্গলে শুরু হয় মাওবাদী তৎপরতা। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যেই ডুমুরিয়ার গ্রামে মাওবাদী নেতাদের গতিবিধির খবর পেয়ে বসে থাকতে চায়নি পুলিশ-সিআরপি যৌথ বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাদের একাংশের মতে, ভরা বর্ষায় জঙ্গলে অভিযান চালানোর আগে আরও একটু সতর্ক হলে হয়তো এই প্রাণহানি এড়ানো যেত। তাঁদের মতে, জঙ্গলের রাস্তা বর্ষায় প্রচণ্ডই দুর্গম হয়ে পড়ে। মাওবাদীরা যতটা স্বচ্ছন্দে ওই রাস্তায় যাতায়াত করতে পারে, জওয়ানরা তা পারেন না। গত কাল তারই সুবিধে পেয়েছে মাওবাদীরা। ওই অভিযানে প্রথমে মাওবাদীদের কিছুটা বেগতিক পরিস্থিতিতে ফেলেছিলেন জওয়ানরা। চার জন মাওবাদীর মৃত্যুও হয়। কিন্তু শিবিরে ফেরার পথেই কোবরা বাহিনীর উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। পুলিশ সূত্রের খবর, নিরাপত্তা বাহিনীকে নিশানা করে প্রায় ৩০টি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেখানেই শেষ নয়। জঙ্গলের গাছপালার আড়াল থেকে বাহিনীর কনভয় ঘিরে ফেলে এলোপাথাড়ি গুলিও চালায় জঙ্গিরা। জনা পঞ্চাশেক জওয়ান জঙ্গলে আটকে যান। গভীর রাত পর্যন্ত দু’তরফেই গুলির লড়াই চলে। ভোরে বিশাল বাহিনী গিয়ে অন্য জওয়ানদের উদ্ধার করে। বিহার পুলিশের এডিজি (হেড কোয়ার্টার) সুনীল কুমার বলেন, ‘‘এলাকায় এখনও অভিযান চলছে। কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে আধুনিক কিছু অস্ত্রও।’’ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, নিহত জওয়ানদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুই বাসিন্দা রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই দুই জওয়ানের এক জনের নাম দীপক ঘোষ (২৬)। বাড়ি নদিয়ার চাপড়ায়। অন্য জন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার সালাস গ্রামের বাসিন্দা পলাশ মণ্ডল (২৮)। আজ দু’জনের দেহই তাঁদের বাড়িতে পৌঁছয়।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জওয়ানদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজিকে ঘটনার রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন