ইয়াকুবের দেহ পাওয়ার প্রতীক্ষায় দুই ভাই। বৃহস্পতিবার সকালে নাগপুর জেলের বাইরে। ছবি: পিটিআই।
থমথমে ভাব চোখে পড়েছে দিনভর। ইতস্তত মোতায়েন নিরাপত্তা রক্ষীর দল। পুলিশ, র্যাফ, কুইক রিয়্যাকশন টিম (কিউআরটি)— কিছুই বাদ নেই। খেপে খেপে পথ আটকানো, জিজ্ঞাসাবাদ।
ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির দিনটা নিয়াপত্তা আর টহলদারিতে মুড়ে ফেলা হল মুম্বইকে। ২৬/১১ হামলার সময় পুলিশের যে বিশেষ দল নিযুক্ত হয়েছিল, তাদেরই ফের মোতায়েন করা হয় এ দিন।
শহরের মাহিম এলাকায় বাস ইয়াকুব মেমনের পরিবারের। ইয়াকুবের কবরের ব্যবস্থাও হয় মাহিমের কাছে মেরিন লাইন্স এলাকার একটি গোরস্থানে। আর বিকল্প ব্যবস্থা রাখা ছিল মাহিমেরই আরও একটি গোরস্থানে। স্বাভাবিক ভাবেই এই এলাকায় নজরদারি ছিল আরও বেশি। সরকারি সূত্রের খবর, প্রায় ৩৫ হাজার নিরাপত্তা রক্ষী এ দিন টহল দেন শহর জুড়ে। আগাম সতর্কতা হিসেবে সাড়ে চারশোরও বেশি মানুষকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের মুখপাত্র ধনঞ্জয় কুলকার্নি জানিয়েছেন, কোথাও কোনও রকম উত্তেজনা যাতে না ছড়ায় তার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের কাছেও অনুরোধ গিয়েছে, যাতে কোনও রকম অসতর্ক বিবৃতি না দেন।
কাক ভোরেই জানা গিয়েছিল, প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হয়েছে ইয়াকুবের। ফাঁসির দু’ঘণ্টা পরে ময়নাতদন্ত শেষ হলে কাফনে মোড়া ইয়াকুবের দেহ এ দিন সকালেই নাগপুর থেকে মুম্বই নিয়ে আসেন তাঁর পরিবার। তবে শেষযাত্রায় কোনও মিছিল করার সম্মতি দেয়নি পুলিশ। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ইয়াকুবের শেষকৃত্যের জন্য কয়েক জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কেই অনুমতি দিয়েছি আমরা। তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্যও জোগাড় করা হয়েছে আগাম।’’ কিন্তু তা সত্ত্বেও ইয়াকুবের শেষযাত্রায় মানুষের ঢল সামলানো যায়নি। মাহিমের বাড়ি থেকে মেরিন লাইন্সের গোরস্থানে দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় উপচে পড়ে ভিড়।
শেষযাত্রার কোনও ছবি তোলা বা ভিডিও করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সামগ্রিক সতর্কতার আবহেই বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ ইয়াকুবের বাবার কবরের পাশে কবর দেওয়া হয় ইয়াকুবকে। এই গোটা পর্বে প্রবেশাধিকার ছিল না সংবাদমাধ্যমের। নিরাপত্তার ফাঁস শক্ত করা হয়েছে সারা দেশ জুড়েই। ফাঁসির রায় এবং তার পরবর্তী পাল্টা আর্জি নিয়ে শুনানি— এই পুরো পর্বেই কড়া নিরাপত্তা বলয় ঘিরে ছিল সুপ্রিম কোর্ট ও সংলগ্ন এলাকায়। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় বিচারপতি, আইনজীবীদেরও। আজ ভোর রাতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ফাঁসির অন্তিম রায় ঘোষণা করে। তার পর থেকেই নয়াদিল্লির তুঘলক রোডে বিচারপতি মিশ্রর বাড়ির আশপাশে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি ব্যবস্থা। সীমান্ত বরাবর কাশ্মীর-পঞ্জাব-উত্তরপূর্বেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটোসাটো করা হয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশের আইজি নেপাল চন্দ্র দাস যেমন জানান, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বার্তা পাওয়ার পরে আমরা আরও বেশি সতর্ক হচ্ছি।’ পুলিশ চৌকি সহ বিএসএফ-এর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।