মধ্যরাতে প্রায় বেনজির শুনানি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সকালেই শপথ ইয়েদুরাপ্পার

শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট শপথে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে। তবে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় ফের এই মামলার শুনানি হবে। এর মধ্যে, সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে রাজ্যপালকে দেওয়া ইয়েদুরাপ্পার চিঠির কপি শীর্ষ আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০৮:১৭
Share:

কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ ইয়েদুরাপ্পার।

মধ্যরাতের নাটক শেষ। অবশেষে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বিজেপির বিএস ইয়েদুরাপ্পা। বৃহস্পতিবার সকাল তখন ঠিক ন‘টা। ইয়েদুরাপ্পাকে শপথবাক্য পাঠ করান কর্নাটকের রাজ্যপাল বজুভাই ভালা।আদালত অন্য কিছু না বললে, তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রামাণ দিতে হবে। যদিও ইয়েদুরাপ্পার দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে তাঁর ১৫ দিন সময়ও লাগবে না। কিন্তু মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন, সে তালিকা এ দিন প্রকাশ করা হয়নি।

Advertisement

ইয়েদুরাপ্পা শপথ নিলেও রাজনৈতিক টানাপড়েনের কিন্তু শেষ নেই। এ দিন বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে কংগ্রেস এবং জেডি(এস)। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তারা বলছে, সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকলেও, তাদের সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর আশঙ্কা, ১৫ দিন সময় পেয়ে যাওয়ায় তাদের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে বিজেপি। টুইটে রাহুল গাঁধী বলেছেন, ‘‘ভারতের সংবিধান নিয়ে উপহাস করল বিজেপি। অন্তঃসারশূন্য বিজয় নিয়ে যখন উত্‌সব পালন করছে বিজেপি, সেই সময় দেশের মানুষ কিন্তু গণতন্ত্রের উপর আঘাতের ঘটনায় শোক পালন করছে।’’

এর আগে গোটা রাত ধরে শপথ নিয়ে নাটকীয় ঘটনা দেখেছে গোটা দেশ। প্রায় নজিরবিহীন মধ্যরাতের শুনানি। এবং সেই শুনানির পর, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে ইয়েদুরাপ্পার শপথে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে বুধবার রাত ৯টায় চিঠি পাঠান কর্নাটকের রাজ্যপাল বজুভাই বালা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ন’টায় শপথগ্রহণ করতে বলা হয়। তার এক ঘণ্টার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস এবং জেডি (এস)। আর্জি দ্বিবিধ। এক, বৃহস্পতিবারের শপথগ্রহণের উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। দুই, গরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ইয়েদুরাপ্পাকে যে ১৫ দিন সময় রাজ্যপাল দিয়েছেন, তা কমানো হোক। আর্জির গুরুত্ব বিবেচনা করে রাতেই শুনানিতে রাজি হয় শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলার পর, রাত দেড়টা নাগাদ আদালতে আসেন তিন বিচারপতি অর্জনকুমার সিক্রি, শরদ অরবিন্দ বোবদে ও অভয় মনোহর সাপ্রে।

শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট শপথে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে। তবে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় ফের এই মামলার শুনানি হবে। এর মধ্যে, সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে রাজ্যপালকে দেওয়া ইয়েদুরাপ্পার চিঠির কপি শীর্ষ আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে আর একবার মধ্যরাতে খুলেছিল সুপ্রিম কোর্টের দরজা। ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির আগের রাতে নজিরবিহীন ভাবে ফাঁসি রদের আবেদন নিয়ে শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। শুনানি চলেছিল ভোর রাত পর্যন্ত। এ দিন শুনানি শুরু হয় রাত পৌনে দু’টোয়। কংগ্রেসের পক্ষে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যপালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা।

ইয়েদুরাপ্পা বৃহস্পতিবার শপথ নিতে মরিয়া ছিলেন। কারণ, জ্যোতিষীর মতে সেটা শুভদিন। তাই স্টেডিয়াম পর্যন্ত বুক করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি ডাক পাবেন কি না, তা নিয়ে টানাপড়েন চলে রাত পর্যন্ত।

ইয়েদুরাপ্পাকে শপথ নিতে ডাকার খবর পেয়েই কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বলরা দিল্লিতে বলেন, ‘‘কোন এক্তিয়ারে রাজ্যপাল এই কাজ করেন? যখন আজই কংগ্রেস-জেডি (এস)-সহ মোট ১১৭ জন বিধায়কের সমর্থনপত্র তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে! ইয়েদুরাপ্পাকে আমন্ত্রণ জানানো মানে দল ভাঙাকে প্রশ্রয় দেওয়া! কার ইশারায় রাজ্যপাল কাজ করছেন? বিধায়কদের সশরীরে হাজির করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যপাল মানেননি।’’

এর আগে জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী জেডি (এস)-এর কুমারস্বামী অভিযোগ করেন, তাঁদের বিধায়কদের ১০০ কোটি টাকা করে দিতে চাইছে বিজেপি। কংগ্রেসের অনেক বিধায়কও বলেন, ফোন আসছে। বিজেপি মুখে বলছে, ঘোড়া কেনাবেচা তাদের ‘সংস্কৃতি’ নয়। কিন্তু ঘরোয়া মহলে দাবি করছে, সংখ্যা জোগাড় হয়ে যাবে। নির্দল এক প্রার্থী গোড়ায় বিজেপিকে সমর্থন করবেন বলেন। দুপুরে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে। রাতে ফের বিজেপি অফিসে!

কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, বিজেপির ৬ বিধায়ক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আর নিজেদের বিধায়কদের হোটেলে ‘বন্দি’ রেখেছে কংগ্রেস-জেডি (এস)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন