বার্তা সংস্কৃতপ্রেমী সঙ্ঘকে

যোগী-রাজ্যে ইংরেজি পাঠ নার্সারি থেকে

দেশে সংস্কৃত চর্চার পরিধি বাড়াতে মাঠে নেমে পড়েছেন সঙ্ঘ নেতারা। বলছেন সংস্কৃতকে শুধু ভাষা হিসেবে শেখানোই যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞান, অঙ্ক, ভূগোল ইতিহাসের মতো বিষয়ও শেখানো হোক সংস্কৃত ভাষায়। আর এরই মধ্যে যো‌গী আদিত্যনাথ তৎপর হলেন রাজ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

যোগী আদিত্যনাথ

দেশে সংস্কৃত চর্চার পরিধি বাড়াতে মাঠে নেমে পড়েছেন সঙ্ঘ নেতারা। বলছেন সংস্কৃতকে শুধু ভাষা হিসেবে শেখানোই যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞান, অঙ্ক, ভূগোল ইতিহাসের মতো বিষয়ও শেখানো হোক সংস্কৃত ভাষায়। আর এরই মধ্যে যো‌গী আদিত্যনাথ তৎপর হলেন রাজ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে!

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, একদম নার্সারি স্তর থেকেই ইংরেজি পড়ানো শুরু করতে হবে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে। প্রয়োজনে বদলে ফেলতে হবে পুরনো শিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে।
আপাত ভাবে এই দুইয়ের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই বলে দাবি করলেও যোগীর ওই ঘোষণাকে সংস্কৃত-প্রেমী সঙ্ঘের উদ্দেশে একটি বার্তা হিসেবেও দেখছেন দলের অনেকে।

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী আর উত্তরপ্রদেশে যোগী— এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটতেই সঙ্ঘ ও তাদের সংগঠনগুলি হিন্দুত্বের প্রসারে তুমুল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গোটা দেশে। যোগী সরকারকেও তার থেকে আলাদা পথে হাঁটতে দেখা যায়নি এ পর্যন্ত। গোরক্ষার প্রশ্নে তাঁর কট্টর মনোভাব, বেআইনি কসাইখানা বন্ধ করাই হোক বা রাস্তার রোমিওদের শায়েস্তা করা— বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ির প্রচুর অভিযোগ উঠেছে এই ক’দিনেই। ‘বন্দে মাতরম’ বলার জন্য চাপ সষ্টির নজিরও বাড়ছে। যোগী নিজে বিতর্ক বাড়িয়েছেন যোগের সূর্য নমস্কারের সঙ্গে নমাজের বিভিন্ন ভঙ্গির মিলের কথা তুলে ধরে। রামদেব ও সঙ্ঘ নেতাদের অনুরোধ মেনে যোগকে স্কুলে বাধ্যতামূলক করার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

এই সব থেকে মনে করা হচ্ছিল, যেমন করেই হোক সঙ্ঘের নীতি প্রতিষ্ঠাই একমাত্র লক্ষ্য যোগীর। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সঙ্ঘের ইংরেজি ‘বিদ্বেষ’ থেকে তিনি শতহস্ত দূরে। অখিলেশ যাদবের জমানায় তা-ও ইংরেজি পড়ানো শুরু হতো ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে। এক ধাপ এগিয়ে যোগী জানিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষার মান বাড়াতে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে নার্সারি থেকেই ইংরেজি পড়ানো হবে। এর জন্য নতুন পাঠ্যক্রম তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। শুধু ইংরেজিই নয়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে যোগী জানিয়েছেন, দশম শ্রেণি থেকে বিভিন্ন বিদেশি ভাষার সঙ্গেও পরিচিত হবে পড়ুয়ারা। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন প্রয়োজন। আমরা এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলব যা জাতীয়তাবাদের প্রচার করবে ঠিকই, কিন্তু আধুনিক উপায়ে।’’

অথচ বিদেশি ভাষার বদলে দেশীয় বা আঞ্চলিক ভাষাকে গুরুত্ব দিতে বরাবরই আগ্রহ দেখিয়েছে সঙ্ঘ। গত বছরেও ইংরেজির বদলে ভারতীয় ভাষাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নয়া শিক্ষা নীতির দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে চিঠি দেয় সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস নামে সঙ্ঘের একটি শাখা। আইআইটি বা আইআইএমগুলিতেও মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার কথা বলে সংগঠনটি। আবার এই বছরের গোড়াতে গোয়ায় সঙ্ঘের আর এক শাখা সংগঠন, ভারতীয় ভাষা সুরক্ষা মঞ্চ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি থেকে অনুদান তুলে নেওয়ার দাবি জানায়। এর পরে উত্তরপ্রদেশে ভোটে বিপুল জয়ের পরে হাওয়া ওঠে সংস্কৃত চর্চার পালে।
বিজেপির এক ডজনেরও বেশি বিধায়ক শপথ নেন সংস্কৃতে। সঙ্ঘ নেতা দত্তাত্রেয় হোসবোলে রাজ্যে নতুন করে সংস্কৃত বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রীকে।

এর মধ্যেও নার্সারি থেকে ইংরেজি চালুর কথা বলে গোরক্ষনাথের পীঠাধীশ্বর এই গেরুয়াধারী স্পষ্ট করে দিলেন, সঙ্ঘের পছন্দ-অপছন্দই শেষ কথা নয় তাঁর কাছে। উত্তরপ্রদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে তিনি চলছেন তাঁর নিজের পথে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন