অনুপ্রবেশ নিয়ে মোদীর তথ্যই মেনে নিল কেন্দ্র

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকেই সমর্থন জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সমস্যার কথাই তুলে ধরেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৫১
Share:

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকেই সমর্থন জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে মোদীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সমস্যার কথাই তুলে ধরেছে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি হোমগুলিতে মোট ২১১ জন বাংলাদেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরী রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢোকার সময় পুলিশ বা বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় তাদের অভিভাবকদের স্থান হয়েছে জেলে। নাবালকদের এই সব হোমে রাখা হয়েছে। তাদের এখনও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়নি। এর বাইরেও বহু শিশু ও কিশোর-কিশোরী রয়েছে, যাদের নাগরিকত্ব এখনও চিহ্নিত হয়নি। তাদের মধ্যেও অনেকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ প্রশাসনের।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, গোটা দেশেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমস্যা বেড়েছে। যার ফলে দেশের জেলগুলিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। কেন্দ্রের মতে, দেশের সমস্ত জেলে প্রায় ৭ হাজার বিদেশি নাগরিক বন্দি রয়েছেন, যার মধ্যে ৪ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি। দশ বছর আগে, ২০০৪ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ২৮৫৮ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “২০০১ সালে ২৩২৭ জন বাংলাদেশি বন্দি ছিলেন দেশের জেলগুলিতে। ২০০৪ সালে তা বেড়ে হয় ২৮৫৮ জন। তার পরের দশ বছরে বন্দি সংখ্যা ৪ হাজারের উপরে চলে যাওয়া থেকেই স্পষ্ট, সীমান্তে কাঁটাতার বসালেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি।”

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর দাবি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে তিনি নতুন কিছু বলছেন না। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা পি এম সঈদ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত-সহ অনেকেই সংসদে দাঁড়িয়ে অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। মোদী জানিয়েছেন, ২০০৫-এর ৪ অগস্ট সংসদে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে তুমুল শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন মমতার অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ক। তাই বাম সরকার এ নিয়ে সরব নয়। মোদী প্রশ্ন তুলেছেন, “মমতা যা বলেছিলেন, আমি সে কথাই বলেছি। আমি বলতেই সাম্প্রদায়িক হয়ে গেলাম?”

মমতার অভিযোগ, মোদী হিন্দু ও মুসলমান বাংলাদেশি শরণার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য যুক্তি, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ করা হয় না। যাঁরা বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢুকতে গিয়ে বা থাকার জন্য ধরা পড়েন, তাঁদের সকলকেই ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হয়। কেন্দ্রের কর্তারা জানিয়েছেন, মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাত এবং পাশের রাজ্য মহারাষ্ট্রেও আটক হওয়া বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকী দক্ষিণের রাজ্যগুলিতেও বেড়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।

অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠাতে কি ব্যবস্থা নেয় কেন্দ্র?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, অনুপ্রবেশকারীরা যে বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে এ দেশে এসেছেন এটা প্রমাণ করার দায়িত্ব ভারত সরকারেরই। ভারতের আদালতে সে কথা প্রমাণ করতে পারলেও ঢাকাকে সে কথা বোঝানো প্রায়শই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

জেলে থাকা সাবালক অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে তাও আইনি প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু, হোমে থাকা বাংলাদেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ফেরত পাঠানোর জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হোমে আটকে থাকা বাংলাদেশি শিশুদের বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রককে জানানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি-হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে, যাতে এদের পরিচয় পরীক্ষা করে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়। পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি দফতরগুলিকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন