কংগ্রেসের অন্দরে অনেক দিন ধরেই বদলের কথা বলছেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু তা বলে ভোট-মুখেও? কংগ্রেসের প্রবীণদের এক রকম চমকে দিয়েই কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এ বার জানিয়ে দিলেন, পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে প্রাক্-ভোট সমীক্ষা আর নয়। এখন থেকে নির্বাচন কেন্দ্রওয়াড়ি সমীক্ষা চালাবেন কংগ্রেস কর্মীরাই। এ জন্য পেশাদার সংস্থা ভাড়া করে আর মোটা টাকা খরচ করবে না কংগ্রেস।
প্রাক্-ভোট জনমত সমীক্ষা এখন কেবল সংবাদমাধ্যমগুলি চালায় না। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে ইস্তাহার রচনা, স্থানীয় সমস্যার কথা জানা, তার মাধ্যমে প্রচার কৌশল নির্ধারণের জন্য জাতীয় স্তরে দুই বড় দল কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রতিটি ভোটের আগে একাধিক সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা চালায়। লোকসভা বা বিধানসভা ভোট তো বটেই, দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো বড় শহরে পুরভোটের জন্যও কংগ্রেস-বিজেপি পেশাদার সংস্থাকে সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়। সমীক্ষার খরচ অনেক সময়ই কোটি টাকার অঙ্ক ছাড়িয়ে যায়। হালফিলে এই সমীক্ষার সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যেও।
দলে এই রেওয়াজ বদলাতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রাহুল। কংগ্রেস সূত্রের খবর, কয়েকটি দেশি ও বহুজাতিক সমীক্ষা সংস্থা দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে টাকাপয়সা-সহ একাধিক বিষয় প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। কিন্তু রাহুল আচমকাই দলের বর্ষীয়ান কোষাধ্যক্ষ মতিলাল ভোরাকে ফোন করে জানিয়ে দেন, কোনও সংস্থাকে আগাম টাকা দেওয়ার দরকার নেই। বাইরের কোনও সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষারও প্রয়োজন নেই।
রাহুল শিবিরের বক্তব্য, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে করানো সমীক্ষা বহু ক্ষেত্রেই মেলে না। বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এ ধরনের সমীক্ষার অনেক সময় সম্পর্কও থাকে না। তা ছাড়া লোকসভা ভোটের সময় এই সংস্থাগুলি মূলত একশো-দেড়শো আসনে খুবই কম ‘স্যাম্পেল সাইজ’ নিয়ে সমীক্ষা করে। রাহুল শিবিরের এক নেতার বক্তব্য, হিন্দি বলয়ের চার রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেস একাধিক পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, তার কোনওটাই কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে মেলেনি। রাজস্থানে এতটা ভরাডুবি হবে, তা সমীক্ষায় ধরা পড়েনি। আবার মধ্যপ্রদেশে ভাল ফলের আশা দেখালেও তা মেলেনি। একমাত্র ছত্তীসগঢ়ের সমীক্ষাই কিছুটা মিলেছে। ঘটনা হল, ছত্তীসগঢ়ের নেতারাও আসন ধরে ধরে সমীক্ষা করে এমন একটা ফলাফলের রিপোর্ট দিয়েছিলেন। ১৫টি আসনে প্রার্থী বদলের কথাও বলেছিলেন তাঁরা। ওই নেতার দাবি, সেই পরামর্শ রাহুল শোনেননি। পরে বোঝেন, ওই ১৫টি আসনে নতুন মুখকে আনলে জয়ের সম্ভাবনা ছিল।
প্রশ্ন হল, রাহুলের এই সিদ্ধান্ত বর্ষীয়ান নেতাদের কাছে ‘চমক’ কেন? একটি সূত্র বলছে, ভোটের আগে কোন বিজ্ঞাপন এজেন্সিকে বরাত দেওয়া হবে বা কাদের দিয়ে সমীক্ষা করানো হবে, তা নিয়ে শীর্ষ নেতাদের একাংশের মধ্যে বরাবর টানাপোড়েন চলে। প্রত্যেকেই নিজের পছন্দসই সংস্থাকে এই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সওয়াল করেন। দীর্ঘদিনের এই ব্যবস্থাটাই রাহুল এ বার ভেঙে দিলেন। রাহুল শিবিরের এক নেতা বলেন, “কংগ্রেসের ভোট কৌশল নির্ধারণ নিয়ে নবীন বনাম প্রবীণ মতান্তরের যে সব গল্প সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, তার নেপথ্যে রয়েছে রাহুলের এমনই কিছু সিদ্ধান্ত। তাই তলে তলে রাহুলের কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বর্ষীয়ানরা। অথচ রাহুলের যুক্তি যে নির্ভুল, তা বুঝছে নতুন প্রজন্ম।”
রাহুল শিবির সূত্রে খবর, ১২ তুঘলক লেনে, কংগ্রেস সহ-সভাপতির বাসভবনে এ বার একটি ওয়ার রুম খোলা হয়েছে। রাজ্যওয়াড়ি বেশ কিছু আস্থাভাজন নেতাকে সমীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁরা কেন্দ্র ধরে ধরে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ইনপুট’ পাঠাচ্ছেন। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে কৌশল নির্ধারণ সবই হচ্ছে তার ভিত্তিতে। ফলে নির্বাচনী প্রস্তুতির অনেক প্রক্রিয়াতেই কিছুটা ব্রাত্য হয়ে পড়ছেন বর্ষীয়ানরা। এ সবের ফলে তাঁরা শুধু যে চমকে যাচ্ছেন, তা নয়। তাঁদের অসন্তোষও বাড়ছে। এই আতঙ্কেও অনেকে ভুগছেন যে, এখন যেটুকু মৌরসিপাট্টা ভোগ করেন, ভোটের পর হয়তো তা-ও চলে যাবে!
আচরণে আপত্তি
নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরেই আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়া নিয়ে আপত্তি জানাল কংগ্রেস। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী। তাঁর মতে, এখন বেশ কয়েক দফায় ভোট হয়। তাই ছ’সপ্তাহের বেশি আদর্শ আচরণবিধি চালু থাকে। ব্যাহত হয় উন্নয়নের কাজকর্ম। দ্বিবেদী জানিয়েছেন, সংসদীয় কমিটিও মনে করে, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে চালু হোক আদর্শ আচরণবিধি। প্রয়োজনে কমিশন সবর্দল বৈঠক ডাকুক।