আস্থা জয়েও ঝুলে রইল সেনা-বিজেপি সমঝোতা

দিনভর রহস্যে ভরা নাটক চলার পরে শেষ পর্যন্ত শিবসেনাকে ছাড়াই মহারাষ্ট্রে আস্থা ভোট জিতে ফেলল রাজ্যের সংখ্যালঘু বিজেপি সরকার। এর পরেও এনডিএ জোটে শিবসেনা থাকবে কি না, সেই বলটি এখন সুকৌশলে উদ্ধব ঠাকরের কোর্টেই ফের ঠেলে দিল বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

দিনভর রহস্যে ভরা নাটক চলার পরে শেষ পর্যন্ত শিবসেনাকে ছাড়াই মহারাষ্ট্রে আস্থা ভোট জিতে ফেলল রাজ্যের সংখ্যালঘু বিজেপি সরকার। এর পরেও এনডিএ জোটে শিবসেনা থাকবে কি না, সেই বলটি এখন সুকৌশলে উদ্ধব ঠাকরের কোর্টেই ফের ঠেলে দিল বিজেপি।

Advertisement

আজ সকাল পর্যন্ত স্পিকার পদে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে শিবসেনা ও কংগ্রেসের আলাদা প্রার্থী ছিল। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে যেহেতু এনসিপির সমর্থন রয়েছে, তাই শিবসেনা ও কংগ্রেস উভয়েই তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে বিজেপির হরিভাই বাগড়ে বিনা বিরোধিতায় স্পিকার হন। অধিবেশন শুরু হতেই স্পিকার জানান, শিবসেনা ও কংগ্রেস উভয়েই বিরোধী দলনেতার পদ দাবি করায় বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনা হবে। তার পরেই সটান চলে যান আস্থা ভোটে। কাউকে কোনও সময় দেওয়ার আগেই ধ্বনি ভোটে আস্থা ভোট করিয়ে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করিয়ে দেন তিনি। শিবসেনা, কংগ্রেস বিধায়করা পরে দাবি করেন, তাঁরা ভোটাভুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু স্পিকার বলেন, সময়মতো সে দাবি ওঠেনি। তাই ধ্বনি ভোটেই ফয়সালা হয়ে গিয়েছে।

এর ফলে ঘটনা যা ঘটল, তাতে বোঝা গেল না আস্থা ভোটে বিজেপির জয়ে এনসিপির সমর্থন ছিল কি না। শিবসেনার অভিযোগ, ভোট হলে নিতিন গডকড়ীর ৪০ জন সমর্থক বিধায়কও নিজেদের দলকে ভোট দিতেন না। সে ভয় থেকে পালাতেই স্পিকারের মাধ্যমে বিজেপি এমন অসাংবিধানিক পথ নিল। পরে বিধানসভার যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য এলে রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাওয়ের গাড়ি অবরোধ করেন কংগ্রেস নেতারা। ঠেলাঠেলি-ধস্তাধস্তির মধ্যে দিয়ে রাজ্যপালকে ভেতরে নিয়ে যেতে রীতিমতো বেগ পান রক্ষীরা। রাজ্যপাল বাঁ হাতে সামান্য আঘাতও পান। এর জেরে পাঁচ জন কংগ্রেস বিধায়ককে দু’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। শিবসেনা ও কংগ্রেস নেতারা এ দিন রাজ্যপালের কাছে গিয়েও ফের ভোট করানোর দাবি তুলছেন। আস্থা ভোটে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস ঘোষণা করেছেন, মানুষের স্বার্থে কাজ করবেন তিনি।

Advertisement

প্রশ্ন হল, এ বার কী হবে?

শিবসেনা আজ বিরোধী আসনে বসে এমনিতেই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। গত কাল রাতেও উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তিনি জানান, আস্থা ভোটের পর সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু উদ্ধব মানেননি। তাঁর মত ছিল, ফয়সালা হোক ভোটের আগেই। শিবসেনার চাপের কাছে অমিত শাহ নতিস্বীকার না করায় এখন যা পরিস্থিতি, ফের ভোট না হলে শিবসেনা বসবে বিরোধী আসনেই। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের তির ঘুরে গিয়েছে স্পিকারের দিকে। ভোটাভুটি ছাড়াই আস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়ায় শিবসেনাও এখন বলতে পারবে না, বিজেপি এনসিপির সমর্থন নিয়েছে। কারণ, ধ্বনি ভোটের সময় তুমুল হট্টগোলে সেটিও স্পষ্ট হয়নি।

বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, শিবসেনাই এখন স্থির করুক, তারা কী চায়। তারা কী ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে মন্ত্রিসভায় আসতে আগ্রহী? নাকি বিজেপির সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে সম্পর্ক ছেদ করতে চায়? সে ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারে শিবসেনার মন্ত্রী অনন্ত গীতেকে ইস্তফা দিতে হবে। মুম্বই পুরসভা থেকেও বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।

মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র সরকার আজ আস্থা ভোটে জেতার পরে বিজেপির হাতে সময় এখন মাত্র ছ’মাস। কারণ, তার পর যে কোনও দল সংখ্যালঘু সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে। তখন আর এক বার সংখ্যার খেলা হবে। তার আগে অন্য দল থেকে বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে বা অন্য কোনও পথে রাজ্য সরকারের গরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে বিজেপিকে। দলীয় সূত্রের দাবি, শিবসেনার অনেকে মন্ত্রী হতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এমনকী, এনসিপির অনেকেও যোগাযোগ রাখছেন তলে তলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন