ইউপিএসসি-বিক্ষোভে উত্তাল দিল্লি, সংসদও

সংসদের ভেতরে ও বাইরে ছাত্র-ছাত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ইউপিএসসি নিয়ে বিতর্ক মেটাতে তৎপর হল কেন্দ্র। আজ সংসদে সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে, চলতি বিতর্ক সমাধানের পথ খুঁজতে যে কমিটির উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

সংসদের ভেতরে ও বাইরে ছাত্র-ছাত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ইউপিএসসি নিয়ে বিতর্ক মেটাতে তৎপর হল কেন্দ্র। আজ সংসদে সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে, চলতি বিতর্ক সমাধানের পথ খুঁজতে যে কমিটির উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

Advertisement

ইউপিএসসি-র সিভিল সার্ভিসেস অ্যাপটিটিউড টেস্ট (সিস্যাট) পরীক্ষায় বৈষম্যের অভিযোগে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব রয়েছে পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, ওই পরীক্ষায় যে ধরনের প্রশ্নপ্রশ্ন আসে, তাতে ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়ারা বাড়তি সুবিধা পায়। ফলে অসাম্য তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক ফলাফলে। ওই ‘বৈষম্য’ দূর করতেই সরব হন মূলত হিন্দি বলয়ের পড়ুয়াদের একটি অংশ। সপা, বসপা, জেডিইউ, এমনকী বাম দলগুলিও তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আসে।

ইতিমধ্যেই ওই পরীক্ষার ধাঁচ বদলের দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ একাধিক মন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন পরীক্ষার্থীরা। চলতি মাসের শুরুতেই মোদী সরকার গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। সে সময়ে সরকার জানায়, বিতর্ক মিটিয়ে তবেই সিস্যাট পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু গত কাল থেকেই ওই পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড বিলি শুরু করে দেয় ইউপিএসসি। এর প্রতিবাদে কাল সন্ধ্যা থেকেই দিল্লির বুড়ারি এলাকায় পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্ররা। ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের জিপে।

Advertisement

আজ সংসদ অভিযানের পরিকল্পনাও নেন পড়ুয়ারা। পুলিশ আজ লাঠি চালিয়ে, ব্যারিকেড গড়ে বিক্ষোভকারীদের মাঝপথে আটকে দিলেও, দু-তিন জন ছাত্র নর্থ ব্লক ঘুরে দেখার ছুতোয় সংসদের মূল প্রবেশপথের সামনে পৌঁছে যান। সেখানে বসে পড়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পুলিশ তাঁদের আটক করলেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লির অন্যত্র।

ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থের বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আজ সরকারকে আক্রমণ করার সুযোগ ছাড়েনি বিরোধী দলগুলি। সংসদের উভয় কক্ষেই এ নিয়ে আলোচনা ও সরকারের বিবৃতি দাবি করেন বিরোধীরা। বিরোধীদের হইচইয়ে রাজ্যসভার অধিবেশন দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায়। পরে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ সরকারের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বলেন, “পরীক্ষার বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্বেগের কথা সরকারের জানা আছে। বিষয়টি দেখার জন্য যে কমিটি গড়া হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা তত দিন ধৈর্য ধরে থাকুন।”

জেডিইউ নেতা শরদ যাদব এর আগে রাজ্যসভায় দাবি করেন, “২০১১ সালে সিস্যাট শুরু হওয়ার পর হিন্দি, তামিল বা তেলুগুর মতো ভারতীয় ভাষার ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্যের হার নিম্মমুখী। সেখানে ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষার্থীদের সাফল্যের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।” তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “হিন্দি-সহ আঞ্চলিক ভাষাগুলি যাতে উপেক্ষিত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে সরকারকে।”

শাসক শিবির মনে করছে, গত কাল থেকে ইউপিএসসি কর্তৃপক্ষ অ্যাডমিট কার্ড বিতরণ শুরু করায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সরকারকে। সব বিরোধী দলই আজ এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানান। জবাবে জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, “ইউপিএসসি একটি স্বতন্ত্র সংস্থা। তাদের অ্যাডমিট কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।” মন্ত্রীর আশ্বাস, কোনও পরীক্ষার্থীর সঙ্গে অন্যায় হতে দেওয়া হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন