সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানের তীব্রতা বাড়তেই অসম থেকে অন্তত ২৫ জন বড়ো জঙ্গি (এনডিএফি সংবিজিত গোষ্ঠী) উত্তরবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে নেপাল ও ভুটানে ঢুকতে শুরু করেছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দাদের তরফে উত্তরবঙ্গের সব জেলায় সতর্ক বার্তাও পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছে উত্তরবঙ্গের পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ’ (এসওজি)। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বড়োভুমির কোকরাঝাড় ও শোণিতপুর জেলায় এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীর জঙ্গি হামলায় শিশু এবং মহিলা-সহ ৮১ জন নিরীহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যু হয়। উল্টো দিকে, নজরদারিতে পাল্লা দিয়ে যেন লুকোচুরি খেলছে জঙ্গিরা। কোথাও কোথাও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের টেক্কা দিয়ে পালাচ্ছে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা।
জানুয়ারির গোড়ায় আলিপুরদুয়ারে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর ৫ জন। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে নানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে উত্তরবঙ্গের নানা এলাকার পুলিশকে। সপ্তাহখানেক আগে ভুটান সীমান্তের আলিপুরদুয়ারের একটি হোটেল অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জানতে পারেন, একটু আগেই সন্দেহভাজনরা মোটরবাইকে করে পালিয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, জয়গাঁ হয়ে ওই দলটি ভুটানের ফুন্টশিলিং লাগোয়া কোথাও লুকিয়েছে। তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে সেই রাতে ভুটান সীমান্ত থেকে খালি হাতে ফেরে পুলিশ। নেপাল লাগোয়া খড়িবাড়ি-নকশালবাড়িতে ক’দিন পরে তল্লাশিতে গিয়েও অল্পের জন্য বড়ো জঙ্গিদের ধরা যায়নি। পুলিশের সন্দেহ, দু’টি ক্ষেত্রে অন্তত ৯ জন জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে ভিনদেশে ঢুকে পড়েছে।
ঘটনায় উদ্বিগ্ন নবান্নও। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা উত্তরবঙ্গের এসওজি-র সদস্যদের আরও তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এসওজি-কে আরও শক্তিশালী করারও চেষ্টা হচ্ছে।
অসমের কোকরাঝাড় জেলার পুলিশ সুপার সুনীল কুমার বলেছেন, “সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযান তীব্র হতেই বড় জঙ্গিরা কোকরাঝাড় জেলা ছেড়ে পালিয়ে উত্তরবঙ্গের মধ্যে দিয়ে নেপাল এবং ভুটানে ঢোকার চেষ্টা করছে। তা নিয়ে স্পষ্ট সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে।” উত্তরবঙ্গের পুলিশের সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন। অসম পুলিশের দাবি, গত ২৩ ডিসেম্বরের গণহত্যার অন্যতম অভিযুক্ত এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীর উপ সেনাধ্যক্ষ বি বিদাই নেপাল বা ভুটানে পালানোর চেষ্টা করতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, খড়িবাড়ি-নকশালবাড়ি হয়ে নেপালের ঝাঁপার জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামে ঘাঁটি গাড়তে সক্রিয় ওই জঙ্গিরা। অতীতে ওই সব এলাকায় দীর্ঘদিন টম অধিকারী, মালখান সিংহের মতো কেএলও জঙ্গিরা আত্মগোপন করে। পরে সীমান্ত এলাকা থেকে তারা গ্রেফতার হয়। ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ার দিয়ে ও কালিম্পঙের জলঢাকা দিয়েও ভুটানে ঢুকে পড়া যায়। সে জন্য শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া জনবহুল এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে সুযোগ বুঝে বড়ো জঙ্গিরা ওই দু’টি দেশে ঢুকতে চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। তাই শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার হোটেল, অতিথিশালায় বাড়তি তল্লাশি চলছে।