এ বার জ্বালানিতে ভর্তুকি ছাঁটতে চায় কেন্দ্র

রেলের যাত্রিভাড়া ও মাসুল বেড়েছে। এ বার বিপুল ঘাটতির বোঝা কমাতে রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের উপর থেকে ভর্তুকি কমানোর কথা চিন্তা করছে কেন্দ্র। সারের দাম, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প এবং একশো দিনের কাজের উপরেও ভর্তুকি ছাঁটার কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে সুদিনের মুখ দেখতে হলে যে কিছু দিন কঠিন সময়ের মধ্যে যেতে হবে, ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

রেলের যাত্রিভাড়া ও মাসুল বেড়েছে। এ বার বিপুল ঘাটতির বোঝা কমাতে রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের উপর থেকে ভর্তুকি কমানোর কথা চিন্তা করছে কেন্দ্র। সারের দাম, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প এবং একশো দিনের কাজের উপরেও ভর্তুকি ছাঁটার কথা ভাবা হচ্ছে।

Advertisement

অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে সুদিনের মুখ দেখতে হলে যে কিছু দিন কঠিন সময়ের মধ্যে যেতে হবে, ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলে দিয়েছেন, মানুষ অপছন্দ করলেও উন্নয়নের স্বার্থে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার পরেই এক ধাক্কায় রেলের ভাড়া ও মাসুল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার মুখে বলছে, যাত্রিভাড়া ও মাসুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইউপিএ আমলেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চাইলে ইউপিএ আমলে নেওয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে না-ও পারত সে। কিন্তু গত কাল অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পরিষ্কার বলেছেন, রেলকে বাঁচাতে ও অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে এমন সিদ্ধান্তই যুক্তিযুক্ত।

এখানেই শেষ নয়। আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে আগামী দিনে আরও বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার কিছু প্রতিফলন থাকবে বাজেটে। কিছু আরও আলোচনার পর কার্যকর হবে। আজ জেটলি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন মোদী।

Advertisement

অবশ্য প্রথম বাজেটেই এক ধাক্কায় আর্থিক ঘাটতি অনেকটা কমাতে পারবে না সরকার। তবে ধাপে ধাপে লক্ষ্য পূরণের দিশা-নির্দেশ বাজেটে থাকতে পারে। খরচে রাশ টানার জন্য সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির বহর কমানো। ইরাকের সাম্প্রতিক সঙ্কটের পর জ্বালানির দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় রান্নার গ্যাস, কেরোসিনে ধাপে ধাপে ভর্তুকি কমানো যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে মোদী সরকার। রান্নার গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস গ্রিড বিভিন্ন শহরে পৌঁছে দেওয়ার রণনীতিও তৈরি করছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক।

পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা, সার ও একশো দিনের কাজের জন্যও বিপুল ভর্তুকি বহন করতে হচ্ছে সরকারকে। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ফি-বছর বাজেটের আগে আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশের সময় এই ভর্তুকি লাঘবের ইচ্ছা প্রকাশ করে এসেছেন। কিন্তু জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় বাজেটে তা কার্যকর করতে পারেননি। মোদী সরকার অবশ্য খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্প একেবারে বিলোপ করতে চাইছে না। কিন্তু বিপুল ভর্তুকির কথা মাথায় রেখে আপাতত এর রূপায়ণ আরও কিছু দিন পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। কেন্দ্র সুনিশ্চিত করতে চাইছে, যাঁদের প্রয়োজন শুধু তাঁদের কাছেই যেন এর সুবিধা পৌঁছয়। ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংহ গণবণ্টন ব্যবস্থা ঢেলে সেজে এই প্রকল্পের সফল রূপায়ণ করতে পেরেছেন। কেন্দ্রও সেই পথে হাঁটতে চাইছে। খাদ্য ও গণবণ্টন ব্যবস্থার প্রতিমন্ত্রী দাদারাও ডানভে বলছেন, “খাদ্য নিরাপত্তা বিলের যে সব খামতি রয়েছে, আমরা সেগুলি পরিমার্জন করব।” সেই সঙ্গে কৃষি মন্ত্রকের এক আমলার মতে, খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হলে সারের ব্যবহারও বাড়বে। তার জন্য সারের দামের বিষয়টিও নতুন করে পর্যালোচনা করা দরকার হবে।

আর্থিক বৃদ্ধির চাকা গড়াতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করতে চাইছেন মোদী। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মনমোহন জমানার কয়েকটি আইন। তার অন্যতম হল সম্প্রতি পাশ হওয়া জমি অধিগ্রহণ আইন। এই আইনের ফলে অনেক রাজ্যই নতুন শিল্প ও পরিকাঠামো বিস্তারে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই দলে কংগ্রেস শাসিত কিছু রাজ্যও রয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী আইনটি আরও সরল করার চেষ্টা করছেন। এই আইন পাশ করার সময়েই শিল্পমহলের তরফে কিছু আপত্তির কথা জানানো হয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, যে হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে অনেক বেড়ে যাবে। জমি পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠবে। কিন্তু মোদী সরকার ক্ষতিপূরণের হার কমানোর কথা বলে এখনই জমি-হারাদের রোষের স্বীকার হতে চায় না। বরং জমির মালিক ও শিল্পমহল, উভয়ের উদ্বেগকে মাথায় রেখে মাঝামাঝি কোনও পথ বের করতে চাইছে সরকার।

রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ টানতে তিনটি আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট অ্যাক্ট, ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট ও কনট্রাক্ট লেবার অ্যাক্ট। এর মধ্যে প্রথম আইনটি সংশোধন হলে তিনশো জনকে ছাঁটাই করতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে না। আগে যেটি একশো জনের ক্ষেত্রে ছিল। এই আইনটি কেন্দ্রেও চালু করা যায় কি না, কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে তা পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী।

মোদী মন্ত্রিসভার এক সদস্য বলছেন, “এমন একটা সময় বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, যখন অর্থনীতির স্বার্থেই কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের প্রতি মানুষ আস্থা রাখলে দেখবেন, দুই-এক বছর পরে সত্যিই ‘আচ্ছে দিন’ এসেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন