মার্কণ্ডেয় কাটজু
মার্কণ্ডেয় কাটজুর বিস্ফোরক মন্তব্যের পরে বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে এ বার বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনে জোর দিতে চাইছে মোদী সরকার।
গত কাল বিচারপতি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বোমা ফাটিয়েছিলেন প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান কাটজু। বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, দীর্ঘ সময় ধরেই এ বিষয়ে নানা অভিযোগ সামনে আসছে। তাই এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট নীতির প্রয়োজন। বিচারপতি নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ রুখতে দল নীতিগত ভাবেই একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠনের পক্ষে। বিচারপতি নিয়োগের দায়িত্ব থাকবে সেই কমিশনের হাতেই।
বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, কাটজুর অভিযোগ সামনে আসায় এই কমিশন গঠন করার পক্ষে নানা স্তরেই জোরালো মত সামনে আসছে। সরকারের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগানো। কিছু দিন আগেই বিচারপতি গোপাল সুব্রহ্মণ্যম সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্যানেল থেকে সরে দাঁড়ানোয় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেখানে বিচারবিভাগে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রশ্ন উঠেছিল বিজেপিকে ঘিরেও। আজ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “এই ধরনের ঘটনা রুখতে সরকার কমিশনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগে আগ্রহী।” এনডিএ-র শরিক শিবসেনা, এডিএমকে ছাড়াও ওই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে বহু দল।
কাটজুর অভিযোগের জেরে আজ সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশ দফায় দফায় মুলতুবি করে দিতে হয়। দক্ষিণ ভারতের একটি দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চাপ দিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের এক বিচারপতির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিলেন বলে অভিযোগ এনেছেন কাটজু। তিনি নাম না নিলেও, দলটি যে ডিএমকে সেটা স্পষ্ট। ফলে ডিএমকে শিবিরকে চাপে রাখার সুযোগ ছাড়তে চাইছে না জয়ললিতার দল এডিএমকে। আজ উভয় কক্ষেই এডিএমকে-র পক্ষ থেকে ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নাম জানানোর জন্য দাবি তোলা হয়। একই সঙ্গে এডিএমকে নেতা এম থাম্বিদুরাই স্পিকারকে নোটিস দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান। তাঁর বক্তব্য, “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তত্কালীন আইনমন্ত্রী হংসরাজ ভরদ্বাজও গত কাল স্বীকার করেছেন বেশ কিছু ডিএমকে সাংসদ এবং এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ওই বিচারপতি নিয়োগের জন্য তাঁর কাছে তদ্বির করেছিলেন।” তিনি আইন মন্ত্রকের কাছে ব্যাখ্যাও দাবি করেন। উত্তরে সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু জানান, “স্পিকার সময় দিলেই এ বিষয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত আইন মন্ত্রক।”
এই নতুন দুর্নীতির অভিযোগে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিজেপি শিবির মনে করছে, সরকার বাঁচাতে কী ভাবে কংগ্রেস নেতৃত্ব ডিএমকে শিবিরের দাবির সামনে নত হয়েছিল, এ বার তা তুলে ধরা সম্ভব হবে। গত কালের মতোই আজও বিষয়টিতে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা চেয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি নেতা মুক্তার আব্বাস নকভি বলেন, “বিষয়টিতে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে। তাঁর উচিত এ নিয়ে মুখ খোলা।” সরাসরি উত্তর না দিয়ে মনমোহন সিংহ অবশ্য বলেন, “এ বিষয়ে যা বলার তত্কালীন আইনমন্ত্রী বলেছেন। আমার এর বাইরে কিছু যোগ করার নেই।”