ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল কি আজ ঝড়ের মুখে

নিম্নচাপের আবহ ছিল ফল ঘোষণার আগে থেকেই। আর এখন গো-হারা হওয়ার পর তা এতটাই তীব্র হয়েছে যে কাল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ১০ নম্বর জনপথের মূল আশঙ্কা, কাজের ধরনধারন ও ‘টিম’ নিয়ে ওই বৈঠকে এমনকী বিদ্রোহের মুখেও পড়তে পারেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

রাহুল গাঁধী ব্যর্থ। তাই কংগ্রেসের ব্যাটন তুলে দেওয়া হোক প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর হাতে। রবিবার এই দাবিতে ইলাহাবাদে পোস্টার দিলেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। বহু দিন থেকেই প্রিয়ঙ্কাকে সামনের সারিতে নিয়ে আসার দাবি উঠছে কংগ্রেসের অন্দরে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দলের নজিরবিহীন ভরাডুবির পরে সেই দাবি আরও জোরদার হয়েছে। ছবি: পিটিআই

নিম্নচাপের আবহ ছিল ফল ঘোষণার আগে থেকেই। আর এখন গো-হারা হওয়ার পর তা এতটাই তীব্র হয়েছে যে কাল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রবল ঝড়ের আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ১০ নম্বর জনপথের মূল আশঙ্কা, কাজের ধরনধারন ও ‘টিম’ নিয়ে ওই বৈঠকে এমনকী বিদ্রোহের মুখেও পড়তে পারেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

যদিও প্রাক সন্ধ্যায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য এ-ও বলেন, হয়তো শুধু রাহুলের দিকে আঙুল তুলবেন না কেউই। কিন্তু ‘ঝি-কে মেরে বউকে শাসন’-এর মতো অবস্থা হতেই পারে। জয়রাম রমেশ-মোহন প্রকাশ-মোহন গোপালের মতো তাঁর টিমের সদস্যদের তুলোধোনা করে প্রকারান্তরে গোলা দাগা হবে রাহুলের উদ্দেশে। এমনকী দল পরিচালনায় রাহুলের ‘আকাশকুসুম’ সব কেতাবি ধারণা বাতিলের দাবিও উঠতে পারে।

সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাহুলের পাশাপাশি কালকের বৈঠকে সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন মনমোহনও। প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে তাঁর নীরবতা সরকার ও দলের ক্ষতি করেছে বলে ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে বলছেন কমলনাথ, অম্বিকা সোনির মতো প্রবীণ নেতা-নেত্রীরা। সেই প্রসঙ্গ কালও উঠতে পারে।

Advertisement

পরশু ভোটের ফলের দিনই দলের ব্যর্থতার দায় নেন সনিয়া-রাহুল। সেই সঙ্গে রাহুল এ-ও বলেছিলেন, কংগ্রেসের ভরাডুবির কারণ বিবেচনা করে দেখতে হবে। মূলত সেই কারণেই কাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন সনিয়া, যা কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের রীতি। কিন্তু বৈঠকের আগে আজ ওয়ার্কিং কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য তথা প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর পুত্র অনিল শাস্ত্রী বলেন, হারের কারণ খতিয়ে দেখতে এ বার আর কোনও কমিটি-টমিটি গড়লে চলবে না। এ সব অতীতে অনেক হয়েছে। তার পর তার রিপোর্ট কবে জমা পড়ল, কেউ তা পড়ে দেখল কি না, কেউ জানে না। হারের জন্য নেতাদের সুনির্দিষ্ট ভাবে দায় নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আজ অ্যান্টনি কমিটির কথা তুলে ধরেন একাধিক ওয়ার্কিং কমিটির নেতা। দু’বছর আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর হারের কারণ খতিয়ে দেখতে ওই কমিটি তৈরি করেছিলেন সনিয়া। কিন্তু সেই কমিটির কোনও সুপারিশ গৃহীত হয়েছে কি না, কেউ জানে না।

অনিলের মতোই আর এক শীর্ষ সারির কংগ্রেস নেতা আজ বলেন, কমিটি-রিপোর্ট এ সব কালক্ষেপের খেলা এ বার আর চলবে না। কালকের বৈঠকে পরিষ্কার হিসেব হবে। রাহুল ও তাঁর তোষামোদকারীরা গত দেড় বছরে দলে যে সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন তৈরি করেছেন, সেই প্রসঙ্গও উঠবে। তাঁর মতো অনেক বর্ষীয়ান নেতার রাগ এখন গিয়ে পড়ছে টিম রাহুলের সদস্য জয়রাম রমেশের ওপর। এ বারের ভোটের অনেক আগে থেকে জয়রাম বলতে শুরু করেছেন, ষাট বছর বয়সের পর আর সংসদীয় রাজনীতিতে থাকা উচিত নয়। আজ সে কথা তুলে ধরে একাধিক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, এঁরাই সব রাহুলের মগজধোলাই করেছেন এবং রাহুলের আসকারায় দলের মাথায় চড়ে বসেছেন। এই সব ‘পার্ট টাইম’ রাজনীতিকদের যেমন ছাঁটাই করতে হবে, তেমন রাহুলকেও ‘ফুল টাইম’ রাজনীতি করতে হবে।

কংগ্রেসের এই সব প্রবীণ নেতাদের বক্তব্য, ২০০৪ সালে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফেরানোর সমস্ত কৃতিত্বই ছিল সনিয়া গাঁধীর। কিন্তু তৎকালীন ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়, এ কে অ্যান্টনি, আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদ, অম্বিকা সোনিদের পরামর্শ নিয়ে চলতেন সনিয়া। অথচ রাহুল যাঁদের পরামর্শ নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কটুকুও নেই।

কংগ্রেসের একটি সূত্রে গত কাল থেকে এ কথাও বলা হচ্ছিল, সোমবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের সভানেত্রীর পদ থেকে ইস্তফার প্রস্তাব দিতে পারেন সনিয়া। সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফার প্রস্তাব দিতে পারেন রাহুলও। সেই সম্ভাবনার কথা অবশ্য খারিজ করেছেন দলের মুখপাত্র অজয় মাকেন। কিন্তু আজ ওয়ার্কিং কমিটির এক বর্ষীয়ান সদস্য বলেন, দেশের মানুষের যা মনোভাব তাতে কাল এইসব নাটক করলে সমালোচনা বাড়বে। রাহুল সত্যিই ‘সিরিয়াস’ হলে তাঁকে আলোচনা করে হারের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

এই গুমোট পরিস্থিতিই কাল বৈঠকে ঝড়ের আশঙ্কাকে জোরদার করেছে। তবে আড়ালের এই সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ সনিয়া, রাহুলের সামনে তাদের তেজ ধরে রাখতে পারে কি না, তা নিয়েও অনেকে সন্দিহান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন