আপ ও বিজেপির সমর্থকদের সংঘর্ষ। বুধবার লখনউয়ে। ছবি: রয়টার্স।
দিনক্ষণ ঘোষণা করতে গিয়ে আজই রাজনৈতিক দলগুলির কাছে শালীনতা বজায়ের আর্জি জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে সব আর্জি-অনুরোধ উড়ে গেল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই।
দলের নেতা অরবিন্দ কেজরীবালকে কেন গুজরাত প্রশাসন আটক করেছে, সেই কৈফিয়ত চেয়ে আজ সন্ধেয় দিল্লির রাস্তায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল বিজেপি ও আম আদমি পার্টির সমর্থকরা। বিকেলে ঝামেলা শুরু হয় বিজেপির অশোক রোডের সদর দফতরের সামনে। সন্ধে গড়াতেই ক্রমশ দিল্লির সীমানা ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে লখনউ ও পটনা-সহ বিভিন্ন শহরে। সব জায়গাতেই পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় বিশাল পুলিশবাহিনী। আহত হন দু’দলের বহু সমর্থক। আপ শিবিরের দাবি, তাদের নেতা কেজরীবালকে গুজরাতে আটক করার প্রতিবাদেই বিজেপির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল দল। প্ররোচনা দেওয়া হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। গুজরাতে ভাঙচুর করা হয়েছে কেজরীবালের গাড়িও। বিজেপি শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, আপ শিবির যে হিংসার রাজনীতেই অভ্যস্ত, আরও এক বার তা প্রমাণ করে দিল।
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এ দিনই গুজরাত থেকে প্রচার শুরু করেছেন কেজরীবাল। চলবে আগামী তিন দিন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। সেই পরিকল্পনার প্রথম পর্বে আজ আমদাবাদ থেকে সড়ক পথে ভুজে যাওয়ার কথা ছিল কেজরীবালের। আর তা করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে তাঁকে আটক করে রাধানপুর থানার পুলিশ। থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছু পরেই অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কেজরীবালকে আটক করা নিয়ে গুজরাত পুলিশের প্রাথমিক বক্তব্য ছিল, নির্বাচনী আচরণ বিধি আজ থেকে বলবৎ হয়ে গিয়েছে। তাই সমস্ত পদযাত্রার বিষয়ে পুলিশের কাছে সম্মতি নেওয়ার দরকার ছিল আপের। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেননি আপ নেতৃত্ব। তাই কেজরীবালকে আটক করা হয়েছে। পরে অবশ্য পুলিশ জানায়, কেজরীবালের রোড শো-এর ফলে ব্যাপক যানজট হয়েছিল। তাই কেজরীবালের শোভাযাত্রাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে চায় প্রশাসন। কেজরীবালকে আটক করা হয়নি। পুলিশ ওই দাবি করলেও পরে এ নিয়ে বিক্ষোভের রেশ এসে পড়ে দিল্লিতেও।
গুজরাতে যখন কেজরীবাল সক্রিয় থাকবেন, তখন দিল্লিতেও বিজেপির বিরুদ্ধে সমানে আক্রমণ শানিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিল আপ। কেজরীবালের আটক হওয়ার খবর পৌঁছতেই তাই দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন আপ সমর্থকরা। পাল্টা প্রতিবাদ জানানো হয় বিজেপির পক্ষ থেকেও। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে ইট ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি। অশোক রোডে দু’পক্ষের সমর্থকদের লাঠি হাতে মারপিট করতেও দেখা যায়। প্রথম দফায় অল্প সংখ্যায় পুলিশ পাঠানোয় তাঁরা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান। পরে জলকামান নিয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দিল্লির ধাঁচেই লখনউয়েও সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন দু’দলের সমর্থকরা। দিল্লিতে বিজেপি সমর্থকরা বেকায়দায় পড়লেও লখনউয়ে কিন্তু বিজেপি সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে যান আপ সমর্থকরা।
মোদীকে আক্রমণের পড়ে পাওয়া এই সুযোগ ছাড়তে চাননি কেজরীবাল। সাম্প্রতিক বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দিল্লির ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া আদৌও ভালো ভাবে নেননি আম জনতার অনেকেই। কয়েক মাসে বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে কেজরীবাল ও তাঁর দলের। উপরন্তু গত চার দিন উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা করলেও তেমন সাড়া মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে মোদী-প্রশাসনের হাতে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়াকে কাজে লাগাতে কেজরীবাল দাবি করেন, “আমি গুজরাতে আসায় কেঁপে গিয়েছেন মোদী। আমাকে আটক করা হয়েছে সে কারণেই।” পরে এ নিয়ে এক বিজেপি নেতার কটাক্ষ, “বহু দিন পরে কেজরীবাল ফের প্রচারে এলেন। তাই সুযোগ ছাড়তে চাননি।”
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ধীরে ধীরে নিজেদের আক্রমণকে বিজেপি-কেন্দ্রিক করে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে আপ। দলের বক্তব্য, কংগ্রেস ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে জাতীয় রাজনীতিতে। দ্রুত উঠে আসছে বিজেপি তথা তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। দলের এক নেতার কথায়, “আমাদের আক্রমণের নিশানা এখন মূলত মোদী। আগামী দিনে এই আক্রমণ আরও বাড়বে।” সেই আক্রমণের বিশ্বাসযোগ্যাতা বাড়াতে একেবারে মোদীর দুর্গে ঢুকে তাঁকে আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দল। আপ নেতৃত্বের বক্তব্য, মোদীর রাজ্যে উন্নয়ন নিয়ে যে ছবি প্রচার করা হয়, আসলে তা মিথ বৈ কিছু নয় এটা প্রকাশ্যে আনতে বদ্ধপরিকর তাঁরা। দলের দাবি, বিশেষ করে রাজ্যের কৃষক ও সাধারণ মানুষের শোচনীয় অবস্থার কথা তুলে ধরাই তাঁদের লক্ষ্য। এই কারণেই প্রথম দফায় ভুজ বা কচ্ছের মতো অনুন্নত এলাকায় সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেজরীবাল। সুযোগ পেয়ে মোদীর পাশাপাশি অম্বানীর মতো বড় শিল্পগোষ্ঠীকেও ফের আক্রমণ করতে ছাড়েননি কেজরীবাল। তাঁর কথায়, “গুজরাত প্রশাসন কৃষক-বিরোধী। মোদীর শাসনে কেবল উন্নতি হয়েছে কেবল অম্বানী আর আদানির। কৃষক ও সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।” সৌরাষ্ট্র এলাকার জামনগর ও রাজকোটেও কেজরীবাল রোড শো-এর মাধ্যমে জনতার সঙ্গে কথা বলবেন। আগামী শনিবার আমদাবাদেও জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
সন্দেহ নেই ভোটযুদ্ধের ঘোষণার দিনেই সংঘাতের এই ছবি দেখার পর আগামী দিনগুলি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কর্তাদেরও।