কারাটের ভোট কি মন্দের ভাল আপকেই

সিপিএমের সদর দফতর থেকে রাজ্যে রাজ্যে অলিখিত বার্তা গিয়েছিল। যে সব আসনে সিপিএম বা অন্য বাম দলের প্রার্থী নেই, সেখানে পার্টির নেতা-কর্মীরা তৃতীয় ফ্রন্টের দলগুলোকেই ভোট দেবেন। সে রকম কেউ না থাকলে আঞ্চলিক দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে হবে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৭
Share:

ভোটদাতা কারাট। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ।

সিপিএমের সদর দফতর থেকে রাজ্যে রাজ্যে অলিখিত বার্তা গিয়েছিল। যে সব আসনে সিপিএম বা অন্য বাম দলের প্রার্থী নেই, সেখানে পার্টির নেতা-কর্মীরা তৃতীয় ফ্রন্টের দলগুলোকেই ভোট দেবেন। সে রকম কেউ না থাকলে আঞ্চলিক দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে হবে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় দিল্লির সঞ্চার ভবনের বুথে ভোট দিতে ঢুকলেন সিপিএমের কান্ডারি প্রকাশ কারাট। লোকসভা কেন্দ্রের নাম নতুন দিল্লি। ভোটযন্ত্রে প্রার্থীর সংখ্যা ২৯। উপর থেকে খুঁজতে খুঁজতে যে আঞ্চলিক দলের প্রার্থীর নাম প্রথম এল, তিনি প্রবীণ অভিনেতা বিশ্বজিৎ। দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস। অন্য আঞ্চলিক দলের মধ্যে রয়েছে আম আদমি পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি।

তা হলে প্রকাশ কারাট কাকে ভোট দিলেন?

Advertisement

কাউকেই এই প্রশ্ন করা যায় না। কারাটকেও করা হল না। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ভোট দিয়ে হাসি মুখে জানিয়ে গেলেন, অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোট লোকসভা ভোটের পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। আজ কেরলেও ভোটগ্রহণ ছিল। কারাট আত্মবিশ্বাসী, দক্ষিণের বাম দুর্গেও সিপিএমের ফল এ বার ভাল হবে। কিন্তু কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে দিল্লির তাবড় সিপিএম নেতাদের আজ যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হল। কারণ দিল্লির সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের একটিতেও প্রার্থী দেয়নি সিপিএম। দক্ষিণ দিল্লিতে সিপিআই-এর এক প্রার্থী রয়েছেন। নাম শ্রীচাঁদ তানোয়ার। রাজধানীর ভোট ময়দানে বাকি কোথাও বামেদের নামগন্ধ নেই।

এ কে গোপালন ভবনের সিপিএম নেতাদের মধ্যে অধিকাংশই রফি মার্গের সাংসদ আবাসন ভিট্টলভাই পটেল হাউসে থাকেন। প্রকাশ ও বৃন্দা কারাটেরও ঠিকানা সেই আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে। বাকিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দলীয় সাংসদদের বাংলোয়। গোটা এলাকাটাই নতুন দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়। যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী অজয় মাকেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন বিজেপির মীনাক্ষী লেখি। আম আদমি পার্টি প্রার্থী করেছে আশিষ খেতানকে। আজ বৃন্দা উত্তরবঙ্গে দলের প্রচারে ব্যস্ত। এস আর পিল্লাই, কে বরদারাজন, এম এ বেবির মতো অন্য পলিটব্যুরো নেতারাও প্রচারের জন্য দিল্লির বাইরে। দুপুরে পার্টির সদর দফতর থেকে বেরিয়ে প্রকাশ কারাট তাই একাই ভোট দিতে গিয়েছিলেন। দক্ষিণ দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা সীতারাম ইয়েচুরির অবশ্য ধন্দ কম। সেখানে সিপিআই প্রার্থী রয়েছেন!

এ বারই অবশ্য প্রথম নয়। এ কে গোপালন ভবন সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরে দিল্লি বিধানসভার ভোট দিতে গিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্য এক ধন্দে পড়তে হয়েছিল। সে বার নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী ছিলেন শীলা দীক্ষিত। আর তাঁর বিরুদ্ধে খোদ অরবিন্দ কেজরীবাল। সিপিএম নেতাদের সমস্যা বাড়াতে মুলায়ম, মায়াবতী, নীতীশ কুমারের দলেরও প্রার্থী ছিল। সিপিএমের এক দিল্লিবাসী নেতার সহাস্য মন্তব্য, “তখন পরিস্থিতিটা ছিল, কাকে ছেড়ে কাকে ভোট দেব। আর এ বার, কাকে ভোট দেব!” তবে যা-ই হোক, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা যে কেউ ভাবছেন না, তা স্পষ্ট করে দিলেন সিপিএমের ওই নেতা।

তা হলে বাকি রইল কারা? নতুন দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রে ১৫টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দল প্রার্থী দিয়েছে। তা ছাড়া, ১৪ জন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল, বসপা ও আপ বাদে অন্য দলগুলো স্বল্প-পরিচিত। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার প্রশ্ন নেই। এ বার যে ১১টি দলকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট খাড়া করার চেষ্টা চলছে, তার মধ্যে মায়াবতীর দল নেই। উল্টে উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর প্রতিদ্বন্দ্বী মুলায়ম সেই তৃতীয় ফ্রন্টে রয়েছেন। মায়াবতীর দলকে ভোট দিলে মুলায়মের গোসা হতেই পারে। সিপিএম নেতারা বলছেন, অন্য আঞ্চলিক দলগুলো দিল্লির কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু কোনও জায়গাতেই কারও বিশেষ শক্তি নেই। কাজেই তাঁদের ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট করা। তাই বেশ কয়েক দিন ধরে চিন্তার পর সকলেই প্রায় একমত হয়েছেন যে, এ বার দক্ষিণ দিল্লি বাদ দিয়ে রাজধানীর বাকি লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে আম আদমি পার্টির ঝাড়ুতে ভোট দেওয়াটাই শ্রেষ্ঠ কৌশল হতে পারে। তার পরে অবশ্য ভোট দেওয়াটা যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।

এমন নয় যে, আম আদমি পার্টির সঙ্গে সিপিএমের রাজনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট মধুর। সিপিএমের তৃতীয় ফ্রন্টে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নাকচ করে দিয়েছেন আপ নেতারা। সিপিএম নেতারা অবশ্য মনে করছেন, দিল্লির মতো শহরে বামেরা যে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি রাজনৈতিক শূন্যস্থান নিতে পারেনি, সেটাই করে দেখিয়েছেন কেজরীবাল। তাঁর দলের নেতারা অবশ্য সিপিএমকেও দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়েছেন। আবার সিপিএমের নেতারা বিজেপির সাম্প্রদায়িক নীতি সম্পর্কে আপ-এর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তা সত্ত্বেও মন্দের ভাল হিসেবে আপকেই কি বেছে নিতে হল কারাটদের?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement