করমণ্ডলে ভোগান্তির ক্ষতিপূরণ ৫০ হাজার

আসন সংরক্ষণ করেও উটকো যাত্রীদের উৎপাতে হয়রানি। তার উপরে বাসি খাবার দিয়ে বাড়তি টাকা দাবি। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে এ-হেন দুর্ভোগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক যাত্রীকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে নির্দেশ দিল কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। তাদের নির্দেশ, এক মাসের মধ্যে ওই টাকা মিটিয়ে দিতে হবে রেলকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫৩
Share:

আসন সংরক্ষণ করেও উটকো যাত্রীদের উৎপাতে হয়রানি। তার উপরে বাসি খাবার দিয়ে বাড়তি টাকা দাবি। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে এ-হেন দুর্ভোগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক যাত্রীকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেলকে নির্দেশ দিল কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। তাদের নির্দেশ, এক মাসের মধ্যে ওই টাকা মিটিয়ে দিতে হবে রেলকে।

Advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখপাত্র অবশ্য জানান, ওই টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে, নাকি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আর্জি জানানো হবে, সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে মনে করেন, যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে রেল-কর্তৃপক্ষের আরও সজাগ থাকা দরকার।

কী ঘটেছিল করমণ্ডলে?

Advertisement

ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গত বছর মে মাসে ওই ট্রেনে চেন্নাই থেকে হাওড়ায় ফিরছিলেন অম্লান রক্ষিত নামে উল্টোডাঙার এক বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, তিনি যে-সংরক্ষিত কামরায় (এস-৫) ছিলেন, বৈধ সংরক্ষণ ছাড়াই অনেকে তাতে উঠে পড়ে। টিকিট পরীক্ষক (টিটিই)-এর কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। তা ছাড়া প্যান্ট্রিকার থাকা সত্ত্বেও ঠিক সময়ে খাবার মেলেনি। উল্টে প্যান্ট্রির কর্মীরা দুর্ব্যবহার করেন। প্যান্ট্রিকারের ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ জানানোয় যাত্রীদের মারধরের হুমকিও দেন ওই কর্মীরা। পরে খাবার মিললেও তা ছিল অত্যন্ত নিম্ন মানের, বাসি এবং দুর্গন্ধযুক্ত। দামও নেওয়া হয় প্যাকেট-পিছু ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি।

ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন অম্লানবাবু। তাঁর কথায়, “খাবারের দাম ছিল প্যাকেট-পিছু ৫০-৫৫ টাকা। ওরা আমাদের কাছে দাবি করে ৭০-৮০ টাকা। না-দিলে পরে আর খাবার দেওয়া হবে না বলে হুমকিও দেয়।” তিনি জানান, রাতে শোয়ার সময় দেখা যায়, সংরক্ষিত কামরায় অনেক উটকো লোক ঢুকে পড়েছে। অথচ ওই কামরায় তাদের কোনও আসন সংরক্ষিত ছিল না। বিষয়টি টিটিই-কে জানানো হয়। কিন্তু কাজ হয়নি। উল্টে অবৈধ যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা।

হাওড়ায় পৌঁছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানান অম্লানবাবু। তিনি জানান, রেল-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মেনেও নেন। ওই পর্যন্তই। কোনও প্রতিকার হয়নি। পরে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের কলকাতা জেলা আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন জানান অম্লানবাবু।

শুনানির পরে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জানায়, ট্রেনে যাত্রী-দুর্ভোগের এমন ঘটনা আকছার ঘটছে। টিকিট পরীক্ষক সংরক্ষিত আসনের যাত্রীদের প্রতি নজর দেন না, বরং অবৈধ যাত্রীদেরই তোয়াজ করেন। কারণ, তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেন তাঁরা। ওই ট্রেনে নিম্ন মানের খাবার দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি। রেল-কর্তৃপক্ষ জানান, ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কেটারিং সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক বিপিন মুখোপাধ্যায়। তিনি নির্দেশ দেন, ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা এবং মামলার খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা (মোট ৬০ হাজার টাকা) অম্লানবাবুকে দেবেন দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। এক মাসের মধ্যে এই টাকা মেটাতে হবে। না-মেটালে ৩০ দিন পর থেকে দৈনিক ৪০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান, ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধনবাবু বলেন, “ট্রেনে দুর্ভোগের প্রচুর অভিযোগ দফতরে জমা পড়েছে। অনেক টাকা দিয়ে আসন সংরক্ষণ করতে হয়। পরিষেবা না-মিললে ক্ষোভ তো স্বাভাবিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন