কসাব-ইয়াকুবদের মতো রঞ্জন, নিরঞ্জনদেরও ফাঁসি চান সিদ্দেক

সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে নিজের দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন অসমের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে ফের অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৭
Share:

সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে নিজের দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন অসমের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে ফের অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। আজ তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসদমনে কসাব বা ইয়াকুব মেমনকে ফাঁসি দেওয়া হলে কোন যুক্তিতে এনডিএফবি (আর)-এর প্রধান রঞ্জন দৈমারি বা ডিএইচডি জুয়েল গোষ্ঠীর সেনাধ্যক্ষ নিরঞ্জন হোজাইকে মাথায় তুলে রাখা হচ্ছে? কেন সাজা পাবেন না আলফা নেতারা?’’

Advertisement

২০০৮ সালে গুয়াহাটি, কোকরাঝাড়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ৯৩ জন মারা গিয়েছিলেন। তার আগে-পরের বহু হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন রঞ্জন দৈমারি। এনডিএফবির সঙ্গে শান্তি আলোচনার স্বার্থে তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেনি সরকার। একই ভাবে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ থাকলেও আলফার সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া, বিদেশসচিব শশধর চৌধুরি, অর্থসচিব চিত্রবন হাজরিকা, সহ-সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া বা ৭০৯ ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডার হীরা শরনিয়াকে জামিন দেওয়া হয়েছে। হীরা বর্তমানে সাংসদও। যে জঙ্গিদের জন্য উত্তর-কাছাড়ের উন্নয়ন এত বছর পিছিয়ে পড়েছে, যাঁরা শতাধিক হত্যা করেছে, যাদের জন্য থমকে ছিল ব্রডগেজের কাজ, উত্তর-কাছাড়ের উন্নয়নের জন্য আসা হাজার কোটি টাকা যাদের হাতে গিয়েছে বলে তদন্ত চলছে— সেই ডিএইচডি জুয়েল গোষ্ঠীর নেতারা এখন ডিমা হাসাও পার্বত্য পরিষদের ক্ষমতায়। তাদের সেনাধ্যক্ষ নিরঞ্জন হোজাই পরিষদের মুখ্য কার্যবাহী আধিকারিক। বড়ো জঙ্গি নেতা হাগ্রাম মহিলারি বড়োভূমির শাসক দল বিপিএফের প্রধান। সব ক্ষেত্রেই শান্তির স্বার্থে জঙ্গি নেতাদের জামিন দিয়েছে সরকার। তাদের দেওয়া হয়েছে দেহরক্ষী।

এই প্রক্রিয়াকে কটাক্ষ করে সিদ্দেক বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম নেই। বিশ্বজুড়ে যেখানেই যারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে— সকলেই নিন্দার পাত্র। কিন্তু অপরাধ এক হলে সাজাও সমান হওয়া উচিত। মুম্বই বিস্ফোরণে জড়িত অভিযোগে ইয়াকুব মেমনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। অথচ গুয়াহাটিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েও কী ভাবে রঞ্জন দৈমারি মুক্ত বিচরণ করেন? কোন যুক্তিতে নিরঞ্জন পার্বত্য পরিষদের প্রধান বা হাগ্রামা বড়োভূমির মাথা হয়ে বসেছেন? অসমে উগ্রপন্থার সঙ্গে যুক্ত আলফা নেতাদের বিরুদ্ধে অজস্র মামলা ঝুলছে। কিন্তু তাঁরা অবাধে, সরকারি দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরছেন। একই দেশে ভিন্ন নিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। এমনটা চলতে থাকলে কখনওই সন্ত্রাসদমন সম্ভব হবে না।’’

Advertisement

নিরঞ্জন বিজেপি নেতা হলেও আলফা, এন়ডিএফবি বা ডিএইচডি নেতাদের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা না করা বা দেহরক্ষী দেওয়া— এ সবই ক্ষমতায় থাকা তাঁর দল কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত। বিজেপির অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের তুষ্ট করতেই ইচ্ছাকৃত বিতর্ক ছড়াচ্ছেন সিদ্দেক। মন্ত্রীর মতে বিজেপি নিজেই উগ্র সাম্প্রদায়িক দল। তাদের অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্টজনেরা পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তাই তাদের অভিযোগকে আমল দেওয়া অর্থহীন।

কিন্তু নিজের দলের মন্ত্রী এমন উল্টো মন্তব্য বিপাকে কংগ্রেস। আগেও বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রীত্ব খুইয়েছিলেন সিদ্দেক। এই বারেও তাঁর মন্তব্য নিয়ে দলে অস্বস্তি শুরু হয়েছে। অবশ্য এখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি কেউ। সরকারের মুখপাত্র মন্ত্রী রকিবুল হুসেন বলেন, ‘‘সিদ্দেক যা বলেছেন— তা ওঁর ব্যক্তিগত মত। তিনি ঠিক কী বলেছেন জানি না। খোঁজ না নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’’

আলোচনাপন্থী আলফা ও এনডিএফবির ক্ষোভ, কাসভ বা মেমনদের সন্ত্রাসের সঙ্গে স্বজাতির অধিকারের জন্য লড়াই চালানো অসমীয় বা বড়ো নেতাদের তুলনা টানা ঠিক নয়। তাদের জামিন দেওয়া বা শান্তি আলোচনায় আহ্বান জানানো কেন্দ্র ও রাজ্যের সিদ্ধান্ত। সিদ্দেক সস্তা চমক কুড়োতে এমন মন্তব্য করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন