গোপন তথ্য চুরি তেল মন্ত্রকে, পাঁচ গ্রেফতার

অফিস বন্ধ হলে নকল চাবি দিয়ে ঢুকে গোপন তথ্য পাচার হতো। যেমন তেমন চুরি নয়, নকল গাড়ি চড়ে এসে নকল পরিচয়ে সটান দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকে যেত কয়েক জন। চুপি চুপি নথি ফটোকপি করে ফের সাজিয়ে রাখত যত্ন করে। আর অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করত সে সব গোপন তথ্য। আজ সন্ধ্যায় এই বিস্ফোরক খবরে কেঁপে উঠল দিল্লি। সংসদ থেকে ঢিল ছোড়া দূরে শাস্ত্রী ভবনে তেল মন্ত্রকের দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:২১
Share:

অফিস বন্ধ হলে নকল চাবি দিয়ে ঢুকে গোপন তথ্য পাচার হতো। যেমন তেমন চুরি নয়, নকল গাড়ি চড়ে এসে নকল পরিচয়ে সটান দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে ঢুকে যেত কয়েক জন। চুপি চুপি নথি ফটোকপি করে ফের সাজিয়ে রাখত যত্ন করে। আর অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করত সে সব গোপন তথ্য।

Advertisement

আজ সন্ধ্যায় এই বিস্ফোরক খবরে কেঁপে উঠল দিল্লি। সংসদ থেকে ঢিল ছোড়া দূরে শাস্ত্রী ভবনে তেল মন্ত্রকের দফতর। অনেক দিন ধরেই মন্ত্রী-আমলারা টের পাচ্ছিলেন, সরকারের গোপন তথ্য পাচার হচ্ছে। আমলাদের গোপন বৈঠকের খবরও অনায়াসে পৌঁছে যাচ্ছে বাইরে। তক্কে তক্কে ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। মন্ত্রকে গোপন ক্যামেরা তো লাগানো ছিলই। কাজে লাগানো হয়েছিল দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ আর গোয়েন্দা বিভাগকেও। তার জেরেই হাতেনাতে ধরা পড়ল পাঁচ জন। তারা সরকারি বিভাগেরই নিচুতলার অস্থায়ী কর্মী বা প্রাক্তন কর্মী। শাস্ত্রী ভবন থেকে ধৃত ৩ জনের নাম লালতা প্রসাদ, রাকেশ কুমার ও রাজকুমার চৌবে। রাকেশ কুমার ও লালতা প্রসাদ সম্পর্কে ভাই। ২০১২ সালে তারা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে শাস্ত্রী ভবনে কাজ করত। পুলিশের দাবি, তখনই তাদের মাথায় সরকারি তথ্য চুরি করার মতলব আসে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় রাকেশ ও লালতা প্রসাদের বাবা আসারাম এবং ঈশ্বর সিংহ নামে আর এক ব্যক্তি। আসারাম ও ঈশ্বর সিংহ এখনও অস্থায়ী কর্মী হিসেবে শাস্ত্রী ভবনে কাজ করে।

ধৃতেরা সরকারি নথি কয়েকটি তেল সংস্থার কর্মীকে সরবরাহ করত বলে অভিযোগ। ওই কর্মীদেরও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরা করা হচ্ছে এক সাংবাদিককেও।

Advertisement

বছর পাঁচেক আগে সরকারের সঙ্গে কর্পোরেট সংস্থাগুলির এমন যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছিল। এক কর্পোরেট জনসংযোগ সংস্থার কর্ত্রীর সঙ্গে ইউপিএ সরকারের কয়েক জন শীর্ষ কর্তার ফোনে কথোপকথনের টেপ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

আজকের ঘটনার পরে অবশ্য ইউপিএ জমানার এই রেওয়াজে লাগাম কষার কৃতিত্বই দাবি করেছে মোদী সরকার। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের বক্তব্য, “ইউপিএ আমলে এ ভাবে মন্ত্রকের খবর পাচার প্রায়ই হতো। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই ঘটনা বন্ধ করার জন্য সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে।”

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের এক কর্মী রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। একটি বিবৃতিতে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, “আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে এই খবর জেনেছি। আমাদের কোনও কর্মী অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তদন্তে সহযোগিতা করব।” পুলিশের দাবি, সরকারের কয়েক জন অস্থায়ী ও প্রাক্তন কর্মী ‘ভারত সরকার’ লেখা গাড়ি চড়ে তেল মন্ত্রকে আসত। সে জন্য ওই গাড়িতে নকল পার্কিংয়ের অনুমতি লাগানো হয়েছিল। নকল পরিচয়পত্রও তৈরি হয়েছিল।

পুলিশের দাবি, ওই কর্মীদের কাছে নির্দেশ থাকত, কোন নথির ফটোকপি করতে হবে। নকল চাবি দিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারের ঘরে ঢুকে সেই নথি ফটোকপি করে তারা বিক্রি করত। আপাতত তাদের বিরুদ্ধে অনধিকার প্রবেশ, জাল নথি তৈরি ও চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আটক নথি বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় এগুলি বিশেষ গোপনীয়, তাহলে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’ আইনেও মামলা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন